নির্বাচনে ভোট খেকো দানব, রাক্ষস, ইবলিশ ও প্রাসঙ্গিকতা

0
334

নির্বাচনে ভোট প্রদান সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। নির্বাচনের জয় পরাজয়ের ফলাফল স্বচ্ছ ভোটের নিরিখেই নীহিত। এর বাইরে যাওয়া অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিকতরাই পর্যায়ভূক্ত। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনো অবস্থাতেই তা আড়াল করার সুযোগ পরাহত। যদি এর বাইরে কিছু হয় বা ঘটে থাকে তা অস্বচ্ছ, অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক (টহপড়হংঃরঃঁঃরড়হধষ ্ ঁহফবসড়পৎধঃরপ) ও ভোটাধিকার হরণের শামিল। তদোপরি যখন কোনো নির্বাচনে ভোট ছিনতাই, ভোটাধিকার হরণ, ব্যালট ছিনতাই, ব্যালট ভর্তি বাক্স ছিনতাই ও ভোটে কারচুপি হয় তখন ভোটাধিকার যেমন ক্ষুন্ন হয়, তেমনি ভোটারের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার দৃশ্যত অকার্যকর ও বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
ভোটাধিকার হরণ, ব্যালট ছিনতাই, কারচুপি সদৃশ্য ভোটের পরও যখন স্বচ্ছ, অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের কথা বলে জয় পরাজয়ের ফলাফল নির্ধারণ করা হয়ে থাকে তখন ভোটার, জনগণ, পরাজিত প্রার্থী ও সমর্থকদের দুঃখ, বেদনা ও আফসোসের সীমা পরিসীমার অন্ত থাকেনি। এক সময় কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া-হোসেনপুর নির্বাচনী এলাকা হতে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলাম। সেই সময় চরদখলের মতো ভোট কেন্দ্র দখল, সীমাহীন কারচুপি ও ব্যালট ছিনতাইয়ের কথা আজও ভুলা যায়নি। তখন নির্বাচনের জয়পরাজয়ের ঘোষণা দেখে মনে হয়েছে, এই ভোট কোনো হায়েনা, জানোয়ার, দানব, রাক্ষস, ভূত, প্রেতাত্মা, ইবলিশ (শয়তান) বা ভিনগ্রহ থেকে আসা কোনো সসার বা অবতার তা গিলে ফেলেছে। তা না হলে নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত না করে এবং কাহাকেও দায়ী, দোষী না করে স্বচ্ছ ভোট অনুষ্ঠানের কথা বলা বা প্রার্থীর জয় পরাজয়ের ফলাফল ঘোষণার সুযোগই বা কোথায় ? স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ৭৩, ৭৯, ৮৬, ৮৮, ৯১, ৯৬-১৫ ফেব্রুয়ারি, ৯৬-১২ জুন, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ১১টি সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের অধীনে সিটি, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপির অনেকগুলো নির্বাচন হয়েছে। তন্মধ্যে একনায়ক আইয়ুবী মৌলিক গণতন্ত্রের (বুনিয়াদী গণতন্ত্র) আদলে বর্তমান জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যদিও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার আমলে এই ধারায় জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়নি। তবে এইচ.এম এরশাদের আমলে দলীয় লোকদের দ্বারা এক প্রক্লাম্যাশনের মাধ্যমে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারের মনোনয়ন দেয়া হয়ে থাকে।
এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত অনেকগুলো সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্ষদের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপিতে স্বাধীনতার ৪৮ বছরে অনেক লোক আহত ও নিহত হয়েছে। এরই মধ্যে বিনা ভোটে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম নির্বাচনে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য (গবসনবৎ ড়ভ চধৎষরধসবহঃ) বা সংসদের আইন প্রণেতা নির্বাচিত হয়েছে। যা একটি নজির বিহীন দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিগনিত। এছাড়া ৭৩, ৮৬, ৮৮ এবং ৯৬-১৫ ফেব্রুয়ারি কারচুপির নির্বাচন হলে সেই সংসদ তিন
মাসেরও বেশী টিকেনি। এসব কিছু দালিলিক প্রমাণ হিসেবে স্বীকৃত বলে ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তবে এসব নির্বাচনকেও প্রিসাইডিং, রিটার্নিং অফিসার এবং সিইসি স্বচ্ছ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। যা দেশের মানুষকে হতচকিত ও আজও ভাবিয়ে তুলে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ০৯/৭/২০১৯ ইং ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ৩০/১২/১৮ ইং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষন করে বলেছিলেন, সিইসি কে.এম নূরুল হুদার আমলে এ নির্বাচন অনিয়মের খনি ও কলংকজনক অধ্যায়। এ নির্বাচনে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোট কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। তাতে মৃত ভোটাররাও বাদ পড়েনি। ৭৫টি আসনের ৫৮৬ কেন্দ্রে সব ভোট নৌকায় এবং একটি কেন্দ্রে পড়েছে ধানের শীষে। ১২৮৫ কেন্দ্রে ধানের শীষে এবং দুইটি কেন্দ্রে নৌকায় একটিও ভোট পড়েনি (যুগান্তর ১০ জুলাই ২০১৯)। এতে একাদশ সংসদ নির্বাচনে কী ধরণের কারচুপি হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। যদিও এ নির্বাচনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছিলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিশিষ্ট আইনজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করে বলেছিলেন, নির্বাচনী আদালতে আপীল ও কমিশনে অভিযোগ করার সুযোগ থাকলেও যেহেতু সিইসি নিজেই একটি পক্ষ সেখানে অভিযোগের অর্থ হচ্ছে বানরের পিঠা ভাগ ও বিড়ালের শুটকী পাহাড়ারই নামান্তর। এছাড়া অনেকের কাছ থেকেই শুনা যায়, স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনসহ যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তন্মধ্যে নির্বাচন তদারকির সাথে সম্পৃক্ত প্রিসাইডিং, রিটানিং, ইসি ও সিইসিদের মধ্যে যথেষ্ট ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেলেও অনেকেই যেই লাউ সেই কদু। যা আমাদের ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বললে অত্যুক্তি হওয়ার মতো তেমন কিছু নেই।
এ ব্যাপারে একটি গল্পের সারাংশ উল্লেখ করা হলো। একবার বনে এক হিংস্র বাঘ বনের এক হরিণের রক্ত ও কলিজা খেয়ে হাড় ও মাংস রেখে দেয়। এ ব্যাপারে বনের রাজা সিংহের কাছে বাঘের বিরুদ্ধে বিচার চাওয়া হয়। সিংহ বাঘের নিকট জানতে চাইলে বাঘ সিংহকে বলে, আমি হরিণের রক্ত ও কলিজা খেয়েছি, হরিণকে খাইনি। ইত্য সময়ে সিংহ বাঘকে বলল ওরে বোকা হরিণের রক্ত ও কলিজার সাথে মাংস ও হাড় খেয়ে ফেললেতো তোর বিরুদ্ধে আজ এমন অভিযোগ আসত না। নির্বাচনে কারচুপি হওয়ার কারণে অনেক আলামত ও দালিলিক প্রমাণ থেকে যায় বলে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। যদি নির্বাচনে কোনো কারচুপি, অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার আলামত না থাকত, তবে হয়তো নির্বাচন কমিশন, সিইসি বা নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে কোনো অভিযোগ আসত না। তাতে ইসি, সিইসি বা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কারও যেমন কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হত না তেমনি কোনো জবাব দিহিতার সম্মুখীনও হতে হত না। সিংহের পরিভাষায় বলতে হয়, নির্বাচনে ভোট ছিনতাই ও ভোট ডাকাতি এড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভোট ছিনতাইয়ের দৃশ্যপট ও আলামত নিয়ে সিংহের পরামর্শ অনুযায়ী চললে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ যেমন টিকত না তেমনি কোনো প্রশ্ন বা জবাবদিহিতাও করতে হত না। বরং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং, রিটানিং, ইসি ও সিইসি সদর্পে বলতে পারত, এসব কিছু মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ। কিন্তু ভোট কারচুপির আলামত (উড়পঁসবহঃধৎু ঊারফবহপব) ও প্রমাণের কারণে তা এড়িয়ে গিয়ে দানব, রাক্ষস, ভূত, প্রেতাত্মা ও ইবলিশের ওপর ভোট কারচুপির দোষ চাপানোর অভিযোগ রহিত করা যায়নি।
আগামী ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ইং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিভাবে এ নির্বাচনের জয় পরাজয় ও ফলাফল নির্ধারিত হয় তা দেখতে দেশের জনগণ গভীর আগ্রহের সাথে তাকিয়ে আছে। যদি কারচুপিমুক্ত গ্রহণযোগ্য, অবাধ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে মেয়র ও কাউন্সিলরদের জয় পরাজয় ও ফলাফল নির্ধারিত হয় তবে তা আনন্দের কথা। যার প্রেক্ষিতে আগামী পৌর নির্বাচনে প্রার্থীরা যথেষ্ট সাহস ও উৎসাহ বোধ করবে। আর যদি ভোট কেন্দ্র দখল, কারচুপি, ভোট খেকো দানব, রাক্ষস, ভূত, প্রেতাত্মা, হুন্ডা, গুন্ডা ইবলিশের (শয়তান) আবির্ভাব হয় তবে নতুন করে পোড়া গায়ে লবণ ছিটানোরই উপক্রম হবে। দেশের মানুষ আর এসব দেখতে চায় না। মানুষ চায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও জয় পরাজয়ের ফলাফল।
দেশে গতানুগতিকভাবে পেশাজীবি ও কর্মজীবিদের সংগঠন ও সিবিএ রয়েছে। তাতে দোষের কিছু না থাকারই কথা। এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু দেশে নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগের মতো এমন কিছু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ইচ্ছা করলেও অনেক কিছু করতে পারে না। যেমন অনেক সময় আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে বিচারক পিতা পুত্রকেও রেহাই দিতে পারে না। তারপরও আনকনসান্স বা জ্ঞাতসারে বা অতি উৎসাহিত হয়ে যদি কোনো কিছু ঘটে থাকে তবে তা আইনের দৃষ্টিতে যেমন সমালোচিত তেমনি ঁহপড়হংঃরঃঁঃরড়হধষ বা অসাংবিধানিকতারই নামান্তর বলে বিবেচিত। তাই বলা হয়ে থাকে ঞড়ড় সঁপয ধহু ঃযরহম রং নধফ অর্থাৎ কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়।
লেন্দুম দর্জি সিকিমের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে সিকিমকে ভারত শাসিত অঙ্গরাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও সেই লেন্দুম দর্জি এক সময় ভারতে আশ্রয় নিয়ে রোগাক্রান্ত হলে বৃদ্ধ বয়সে ঔষধের অভাব ও যারপরনাই খাদ্য কষ্টে নিঃসঙ্গ ও নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করে থাকে। জানা যায়, নরঘাতক টিক্কা খান এবং আরও অনেকে পাকিস্তানের জল্লাদ ও বিশ্ববেহায়া ইয়াহিয়া খানকে খুশী করার জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে এদেশের অগনিত নিরস্ত্র মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে থাকে। সেই কষাই টিক্কা খান ও তার বেঁচে থাকা হানাদারদের নাটের গুরু ও দোসররা আজও প্রকাশ্যে পাকিস্তানে বেড়ুতে পারে না। যুদ্ধে
নিহত পাকিস্তানের নরঘাতক সৈন্যদের পরিবার পরিজন ওদেরকে যেখানেই দেখে ধিক্কার দেয়, ঘৃণা করে এবং অনুষ্ঠানে তাদেরকে প্রকাশ্যে জুতা নিক্ষেপ করে থাকে। অনেক সময় পুলিশের আশ্রয় নিয়ে তাদের গণপিটুনির হাত থেকে রেহাই পেতে হয়। পাকিস্তান প্রবাসী প্রত্যক্ষদর্শী বাংলাদেশীদের কাছ থেকে এসব কথা উঠে আসে। আর এই নরঘাতক টিক্কা খান এক সময় গর্বের সহিত বলেছিল, এৎববহ ড়ভ ঊধংঃ চধশরংঃধহ রিষষ যধাব ঃড় নব ঢ়ধরহঃবফ ৎবফ অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের সবুজ চত্বরকে লাল রঙে রঞ্জিত করে দিতে হবে। অর্থাৎ কোনো তোয়াজ ও চামচাকারীদের জীবন খুব সুখের হয় না। ইতিহাসে রয়েছে যার ভুরি ভুরি ও অসংখ্য প্রমাণ। আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন সীমা লংঘনকারীকে পছন্দ করেনি। তেমনি কারও ভালো কাজ ও অবদানকেও মানুষ ভুলে যায়নি। অনেকের জন্ম ও মৃত্যু দিবসে কবরে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। আল্লাহর দরবারে তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করে থাকে। তদোপরি নবাবের বিশ্বাসঘাতক সেনাপতি মীর জাফরের কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আজও পথচারীরা পর্যন্ত থুথু নিক্ষেপ করে থাকে বলে প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের বিবরণ থেকে তা জানা যায়। জনগণের পবিত্র আমানত ভোটাধিকার নিয়ে এ পর্যন্ত যে বা যারাই ছিনিমিনি খেললেও পেছনে না থাকিয়ে ভোট খেকো দানব, রাক্ষস, দজ্জাল, ভূত, প্রেতাত্মা ও ইবলিশকে যে বা যারা সমর্থন যুগিয়েছে ইতিহাসই একদিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়তো ভুল করবে না। এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠি ও প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে এ মন্তব্য নয়। এ পর্যন্ত এ কৃষ্ণকর্মের সাথে যে বা যারাই সম্পৃক্ত রাম, রহিম, যদু, মধু, কদু ও বেরসিকদের উদ্দেশ্যেই দেশের মানুষের এ ক্ষোভ, জ্বালা, যন্ত্রণা, বিষোদাগার, প্রতিক্রিয়া ও বেদনার অশ্রুধারা।
বর্তমান সিইসির অস্বচ্ছতা, ইভিএম ও নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার পেশাজীবি সংগঠনের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, অনেক রাজনৈতিক মুখপাত্র প্রায় সময় গণমাধ্যম ও মিডিয়াতে যা বলছে তা দেখে মনে হয় সিইসি সম্পর্কে বলার তেমন প্রয়োজন নেই। প্রায় সময় গণমাধ্যমে সিইসির বক্তব্য ও মন্তব্য দেখে অনেকেই মনে করে থাকে সিইসিও একটি পক্ষ। একাদশ নির্বাচনের আগে দেশের সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা ইভিএম (ঊষবপঃৎড়হরপ ঠড়ঃবরহম গধপযরহব) পদ্ধতি ছাড়া ভোট, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রস্তাব করলেও সিইসি তা কর্ণপাত করেননি। এছাড়া দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে যা হয়েছে তা সবারই জানা। এছাড়া আইয়ুবী আমলের মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে (ইধংরপ উবসড়পৎধপু) যে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তাও সবার জানা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একনায়ক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে ৬ দফার আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। মৌলিক গণতন্ত্রের (বুনিয়াদী গণতন্ত্র) বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার কথা আজও অম্লান। সেই সময় ছাত্র জনতা ও রাজনৈতিক দলের স্লোগান ছিল একটা একটা বিডি মেম্বার ও চেয়ারম্যান ধর পদত্যাগে বাধ্য কর। আইয়ুব শাহীর আস্তানা এ দেশে থাকবেনা, আইয়ুব শাহীর গদিতে আগুন জ্বালাও একসাথে। তারপরও মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে বাংলাদেশে জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়েছে।
অতীতকে পেছনে ফেলে এবং সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী সিটি নির্বাচন যাতে সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ, স্বচ্ছ হস্তক্ষেপবিহীন ও কারচুপি মুক্ত হয় ইহাই জনপ্রত্যাশা। দেশের জনগণ ও ভোটাররা আর কারচুপি ও ব্যালট ছিনতাইয়ের নির্বাচন দেখতে চায় না। গণতন্ত্র ও নির্বাচন একই সূত্রে গাঁথা। গণতন্ত্র ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন এবং স্বচ্ছ নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্রও অর্থহীন। ভোটার বিহীন নির্বাচন শুধু গণতন্ত্রকে পদাঘাতই করেনি বরং জনগণের সমুন্নত অধিকার ও গণতন্ত্রের ওপর কবর রচনা করে দেয়। যা মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে ম্লান করে দেয়। যা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার স্বপ্নকে ধুলিসাৎ করে দেয়। যার পরিনাম ও পরিনতি ইতিহাসের আলোকে ভয়ানক পরিনতি ও অর্ন্তহীন অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয় বলে প্রথিতযশা রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের সুচিন্তিত দিকদর্শন।
এসব থেকে যত দুরে থাকা যায় দেশ, জাতি ও জনগণের যেমন মঙ্গল তেমনি কুশীলবদের এসব থেকে দূরে থাকাই উত্তম কর্মপন্থা হিসেবে বিবেচিত বলে অনেকেরই ভাবনা। নির্বাচন কমিশনের স্লোগানের সাথে আমাদেরও শ্লোগান “আমার ভোট আমি দিব, যাকে খুশী তাকে দিব”। তোমার ভোটও আমি দিব এ সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসাই হোক অঙ্গীকার। বড় বড় আওয়াজ নয়, দরকার কথা, কাজ ও অঙ্গীকারের বাস্তব প্রতিফলন। তদোপরি সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার একটি নিরপেক্ষ সাংবিধানিক অর্গান। তাদের কাছে দেশের মানুষের আশা আকাংখা ও প্রত্যাশা কম নহে। সকলেরই স্মরণ রাখা উচিত স্বাধীনতার এত বছরেও যেমনি অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি, তেমনি মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাসস্থানের আজও সমাধান হয়নি।

এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট