দাকোপে শিক্ষা কার্যালয়ের সার্ভিস বহি নিয়ন্ত্রণে সহকারি শিক্ষক

0
140

নিজস্ব প্রতিবেদক :
খুলনার দাকোপ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ দু’জন সহকারি শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই দুই সহকারি শিক্ষক শিক্ষা কার্যালয়ে থাকা জাতীয়করণ সরকারি শিক্ষকদের সার্ভিস বহিতে হাতে লিখে উচ্চতর গ্রেডসহ টাইমস্কেল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে ভূক্তভোগী শিক্ষকেরা তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগেও অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এক প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর মধ্যে দু’জন সহকারি শিক্ষক হচ্ছেন চালনা এনসি বøু-বার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পল্লব কুমার বিশ্বাস ও বটবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষ্ণুপদ সরকার।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে পল্লব বিশ্বাস ও বিষ্ণুপদ সরকার টাকার বিনিময়ে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয় থেকে জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের সার্ভিস বহিতে উচ্চতর গ্রেডসহ টাইমস্কেল পাশ করায়। পরবর্তীতে চুক্তি অনুযায়ী শিক্ষকরা টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করলে তাদের সার্ভিস বহিতে পল্লব বিশ্বাসের কথামত বিষ্ণুপদ সরকার নিজ হাতে লিখে পূর্বের অবস্থানে রেখে দেয়। এছাড়া অনলাইন থেকে ভূক্তভোগী শিক্ষকদের বেতন-ভাতার তথ্য মুছে দেয় তারা। হাইকোর্টের নির্দেশে উচ্চতর গ্রেডসহ টাইমস্কেল অনলাইনে ফিক্সেশন করা বন্ধ থাকায় আর সমাধান করা সম্ভব হয়নি। তাদের এই অনৈতিকতার কারণে উচ্চতর গ্রেডসহ টাইমস্কেল থেকে বঞ্চিত শিক্ষকরা।
অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারি শিক্ষক বিষ্ণুপদ সরকার বলেন, ২০১৪ সালে সহকারি শিক্ষকদের উন্নীত গ্রেড সংশোধনের জন্য তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে ১৮৫ জনের সার্ভিস বহি লিখে দেয়। তবে তাতে কোনো অনিয়ম করেনি।
এদিকে ইউএনওর কাছে দেওয়া অভিযোগ সূত্রমতে, শিক্ষক সমিতির নাম করে সহকারি শিক্ষক পল্লব কুমার বিশ্বাস ও পানখালী-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম শফিউল আজম সেলিম প্রধান শিক্ষকদের ভয় দেখিয়ে বরাদ্দকৃত সকল বিলের ওপর অলিখিত উৎকোচ নিয়ে থাকে। যা জুন মাসে তাদের কাছে পরিশোধ করতে হয়। ২০১৮ সালের ধায্যকৃত টিএলএম সামগ্রী হতে ৫০০ টাকা, ¯িøপ কার্যক্রম সামগ্রী হতে ২ হাজার ৫০০ টাকা, স্কুল কনটেজেন্সি হতে ২০০ টাকা, টিএ/ডিএ বিল হতে ১০০ টাকা, রুটিন মেইনটেনেন্স বিল হতে ১ হাজার টাকা, টয়লেট মেরামত বিল হতে ২ হাজার টাকা, বিল পাশ বাবদ ২ হাজার টাকা, সমিতির ভবর নির্মাণ বাবদ প্রত্যেক প্রধান শিক্ষক কাছ থেকে ১ হাজার ও সহকারি শিক্ষকদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা উৎকোচ নেয়। এভাবে ২০১৬ ও ১৭ সালে টাকা আদায় করে থাকে।
কালাবগী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি এসএম আনিসুর রহমান জানান, আমার স্কুলে চারজন শিক্ষকের বিল করে দেওয়ার কথা বলে তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা উৎকোচ নেয় পল্লব বিশ্বাস ও এসএম শফিকুল আজম। পরে জানতে পারি সরকারি বিল করতে কোনো প্রকার টাকার প্রয়োজন হয়নি। এ ব্যাপারে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মেলেনি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যায়।
জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক এসএম শফিউল আজম সেলিম বলেন, যেসব অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়। যদি কেউ অভিযোগ করে থাকে, তাহলে তদন্তপূর্বক প্রমাণিত হলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।
এ ব্যাপারে সহকারি শিক্ষক পল্লব কুমার বিশ্বাস মুঠোফোনে বলেন, আমি একজন সহকারি শিক্ষক দুর্নীতি করব কিভাবে। কিছু শিক্ষক আমাকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে এসব অভিযোগ করছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অহিদুল ইসলাম বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। করোনাকালীনে লকডাউন থাকায় কোনো কার্যক্রম চলছে না। তবে স্বাভাবিক হলে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এতে প্রমাণিতে হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিন্টু বিশ্বাস মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম শেষে প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।