তীব্র শীত হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় স্থবির জনজীবন : বেকায়দায় নিন্ম আয়ের মানুষ

0
190

চুলকাঠি প্রতিনিধি:
তীব্র শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার জনজীবন। বাগেরহাটের সদর উপজেলার চুলকাঠি, ঘনশ্যামপুর, রাখালগাছি,হাকিমপুর, রনজিতপুর, খানপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়,মধ্যে বিত্ত আয়ের মানুষ এই তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারনে জনজীবন চরম বিপর্যয়। ক্ষণিকের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও তা আবার মিলিয়ে যাচ্ছে। সপ্তাহব্যাপী সূর্যের প্রায় অনুপস্থিতিতে কমছে না শীতের দাপট। অসহায় হয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কনকনে শীত, ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশায় প্রভাব পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে, শিশু আর বৃদ্ধদের মাঝে। এতে যেমন দুর্দশা বেড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের তেমনি বেড়েছে হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কনকনে হিমেল হাওয়া ও মেঘলা আকাশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘন কুয়াশা। ঘন কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে মহাসড়ক ও সড়কে যান্ত্রিক যানবাহনগুলো হলুদ বাতি জ্বালিয়ে অত্যন্ত ধীরগতিতে চলাচল করছে। প্রতিদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে গ্রাম এমনকি শহরের রাস্তাঘাটও। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীত নিবারণ করতে মানুষ খড়কুঠো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছেন। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে শহরের রাস্তায় মানুষের চলাফেরা কমে যায়। এর ফলে কমে গেছে রিকশাচালকদের আয়। অপরদিকে শীতের তীব্রতার জন্য খেটে খাওয়া মানুষের আয়ও কমে গেছে। অর্থশালীরা গরম কাপড়ের জন্য সুপার মার্কেট গুলোতে ভিড় করলেও নিম্ন আয়ের মানুষ ভিড় জমাচ্ছে ফুটপাতের কম দামি পুরনো কাপড়ের দোকানে। শীতে হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর ভিড় কমে গেলেও ওয়ার্ডগুলোতে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপ। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভান্ডার ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জেলায় ৩৫ হাজার কম্বল বরাদ্ধ দিয়েছেন। এসব কম্বল জেলা-উপজেলা পর্যায় ছাড়াও ৬০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ড পর্যায়ে বিতরণ করা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের ত্যুলনায় নগণ্য। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে অনেকে মনে করছেন। শীত পড়ার পর থেকে বৃদ্ধ এবং শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ এবং চিকিৎসা দানের প্রস্তুতি রয়েছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং শিশুদের খুব প্রয়োজন না হলে বাইরে না বেরনোই ভাল। গত কয়েক দিনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের শৈত্যপ্রবাহে ক্রমেই নেমে আসছে তাপমাত্রা। শীতের তীব্রতা বাড়ায় শীতজনিত বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, গবাদিপশুসহ বোরো ধানের বীজতলা ও আলুসহ বিভিন্ন ফসল। তীব্র শীত অনুভূত হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। সন্ধ্যা হলেই শহরসহ গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে পড়ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। গরম কাপড়ের অভাবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। এ অবস্থায় কাজে বের হতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করছেন তারা। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। এদিকে শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন। নিউমোনিয়া, আমাশয়, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বের হলেও কাজ জোটাতে পারছেন না দিনমজুর শ্রেণির মানুষ।