ঝিনাইদহ-৪ আসনে আলীগে’র মনোনয়ন পেতে বড়ভাই ও ছোট ভাই এর লড়াই

0
596

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহ-৪ আসনে আগামি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আবারো শুরু হয়েছে গুরু শিষ্য ওরফে বড়ভাই ও ছোট ভাই এর লড়াই। দলটির কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি সাবেক সাংসদ আবদুল মান্নান আর সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনারের মধ্যে চলছে এই লড়াই। রাজনীতিতে তারা এখন চরম প্রতিদ্বন্দি হলেও একসময় ছিলেন খুবই আপনজন। অনেকে তাদেরকে বড়ভাই ও ছোটভাই আবার অনেকে গুরু-শিষ্য হিসেবে জানেন। দলীয় কর্মীরা অপেক্ষায় আছেন মনোনয়ন দৌড়ে এই দুই নেতার কে হারে আর কে জিতে। ঝিনাইদহ-৪ আসনটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও কালীগঞ্জ উপজেলা ১১ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এখানে আওয়ামী লীগ সাবেক সাংসদ উপজেলা শাখার সভাপতি আবদুল মান্নান, তিনি এবারও প্রার্থী হবার ইচ্ছায় দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আশা করছেন তিনিই মনোনয়ন পাবেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আবদুল মান্নানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে যান দলের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজিম আনার। তিনি এখনও সাংসদ সদস্য রয়েছেন এবং একাদশ নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনিও আশা করছেন মনোনয়ন পাবেন। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী ঠান্ডু, বিশিষ্ঠ শিল্পপতি ও বাংলাদেশ বাস্তহারালীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন বাবু, কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বিজু, উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদ সমশের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তারাও চেষ্টা করে যাচ্ছেন দলীয় মনোনয়নের। আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতারা জানান, মূলত এই আসনে মনোনয়ন নিয়ে আবদুল মান্নান ও আনোয়ারুল আজিম আনারের মধ্যে জোর লড়াই চলছে। তারা দু’জনই নিজেদের অবস্থান প্রমান করতে স্থানিয় ভাবে নানা সময়ে মহড়া ও মটর সাইকেল দিয়ে শো ডাউন দিয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি গুলোও তারা পৃথক ভাবে পালন করে থাকে। যা দলটিকে রাজনৈতিক সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অনেকে সরকারি দলের কর্মী হয়েও হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। ১৯৯২ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনেও আবদুল মান্নান সর্ব প্রথম পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আর এ সময় আনোয়ারুল আজিম আনার হন কমিশনার। এই সময় আনোয়ারুল আজিম আনার ছিলেন আবদুল মান্নানের সঙ্গে। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার সম্মেলনেও তারা দু’জন ছিলেন এক সঙ্গে। স্থানীয় বিবাদের কারণে প্রানদিতে হয়েছে ছাত্রলীগের সেই সময়ের উপজেলা শাখার সভাপতি খন্দকার রেজাউল করিম রেজা, যুবলীগ নেতা আবদুল মান্নান, বারোবাজার ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও ছাত্রলীগ উপজেলা শাখার যুগ্ন-সম্পাদক ডাবলুকে,আনন্দ মোহন ঘোষ। এরা সকলেই দলের অভ্যান্তরিন কোন্দলে খুন হন। কিন্তু রাজনীতি করতে গিয়ে তারা খুন হলে ও তাদের পরিবার আজ ও সুষ্ঠ বিচার পায়নি। ২০০৬ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আবদুল মান্নান সভাপতি ও আনোয়ারুল আজিম আনার সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনের পর দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীরা আশা করেছিলেন দলটির দীর্ঘ দিনের বিরোধ কেটে যাবে। আবদুল মান্নান আর আনোয়ারুল আজিম আনার এক সঙ্গে দলীয় কাজ করবে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের সেই আশা পুরণ হয়নি, নেতৃত্বে এসে তারা বড়ভাই-ছোটভাই নিজেরাই বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। স্থানিয়রা জানান, মূলত আবদুল মান্নান ও আনোয়ারুল আজিম আনার সভাপতি আর সম্পাদক নির্বাচিত হবার পর কমিটির বাকি পদগুলো পুরনের সময় তাদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। আর এই বিরোধ ধরেই ২০০৯ সালের সংসদ নির্বাচনে আবদুল মান্নানের পাশাপাশি আনোয়ারুল আজিম আনারও মনোনয়ন প্রত্যাশী হন। ফলে দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীরাও আবারো বিভক্ত হয়ে যায়। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি মিছিল সমাবেশ। শেষ পর্যন্ত আনোয়ারুল আজিমকে পেছনে ফেলে আবদুল মান্নানই দলীয় মনোনয়ন পান। আর আনার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আবদুল মান্নানকে পেছনে ফেলে দলীয় মনোনয়ন পান আনোয়ারুল আজিম আনার। তিনি বর্তমান সাংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন, আগামি নির্বোচনেও মনোনয়ন পাওয়ার লড়াই করে যাচ্ছেন। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী আবদুল মান্নান জানান, কারো সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নেই,সাংসদ হয়ে এলাকার কাজ করেছেন। ফলে আবারো এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চান। তিনি এবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী বলে জানিয়েছেন। আনোয়ারুল আজিম আনার জানান, বড় দলে মতবিরোধ থাকতে পারে। তিনি বর্তমানে সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন। তার সময়ে এলাকার ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে। যে কারণে দল তাকে আবারো মনোনয়ন দেবেন বলে আশা করছেন।