সুমন আশিক:
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সড়ক প্রশস্থকরণের নামে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙার অভিযোগ উঠেছে। নগরীর টুটপাড়া মেইন রোডের তালতলা হাসপাতালের পর থেকে ময়দার মিল পর্যন্ত নির্মাণাধীন সড়ক প্রশস্থকরণ কাজ নিয়ে আপত্তি তুলে এমনই অভিযোগ করেন স্থানীয় ১২টি বাড়ির মালিক।
তারা বলছেন, দায়িত্ব নিয়োজিত সাব-এ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রভাবিত হয়ে সাধারণ ১২ টি বাড়ির ঘর বাড়ি ভেঙে ফেলছে, অথচ ব্যত্যয় ঘটছে বিত্তশালীদের ভবনের ক্ষেত্রে। এই দূর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে নগরপিতা তালুকদার আব্দুল খালেকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাড়ির মালিকরা।
অবশ্য, এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে কেসিসি’র সাব-এ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মো: নজরুল ইসলাম জানান, এসএ ম্যাপ অনুসরণ করেই সড়কের সীমানায় মধ্যে চলে আসা বাড়ি ভাঙা হচ্ছে। এখানে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি।
শনিবার (২৯ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে গেলে বাড়ি মালিক টুটপাড়া মেইন রোডের ১৩৮ নং হোল্ডিং বাড়ির মালিক মো: বাবু ও আব্দুল্লাহ, ১৪০ নং হোল্ডিং বাড়ির মালিক রফিকুল ইসলাম, ১৪০/২-ক হোল্ডিং নং বাড়ির মালিক শফিকুল ইসলাম, বাড়ির মালিক সাবেক উপ-সচিব আলমগীর হোসেন, আব্দুল শাহজাহান, মো: বশির, নাজমুল, খোকন, জাহান, ১৩৫ নং হোল্ডিং বাড়ির মালিক মফিজুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, হাজী আব্দুস সোবহান, ১৪৫নং বাড়ির আজমল হোসেন একযোগে এই প্রতিবেদকের কাছে উপরে উল্লেখিত অভিযোগ উত্থাপন করেন। এসময় তারা জানান, অচিরেই তারা সিটি মেয়রের দ্বারস্থ হবেন এবং তাদের অভিযোগসমূহ লিখিত আকারে মেয়র বরাবর জমা দেবেন।
বাড়ির মালিক নাজমুল ওরফে রকি জানান, সড়কর প্রশস্থকরণে কাজ মাপার সময় মেয়র সরেজমিনে এখানে আসেন। তখন মেয়র সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের স্থানীয় কামরুল সাহেবের বাড়ি সীমানা থেকে তীর সোজাসুজি রুলিং দেয়ার নির্দেশ দেন। এবং বলেন, এখানে সোজাসুজি ড্রেনেজ লাইন যাবে, কোন ত্যাড়াব্যাকা করা যাবে না। যদি কারও সীমানা বাধেঁ সেক্ষেত্রে একটু ছাড় দিয়ে উপর থেকে বিল্ডিং ভাঙবেন না, প্রয়োজনে নীচ দিয়ে এক থেকে দেড় ফুট ভাঙবেন।
রকি আরও অভিযোগ করেন, নির্মাণ কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলী খামখেয়ালি করে তাদের বাড়ি ভাংছেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী পরিবারের ইন্ধনও রয়েছে। তাদের উস্কানি ও অর্থের প্রভাবে মেয়রের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলিকে দেখিয়ে সাব-এ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ৪/৫/৬ ফুট পর্যন্ত বাড়ি ভেঙে ফেলছে।
আরেক বাড়ি মালিক মফিজুল ইসলাম জানান, ড্রেন লাইনটি জোড়াকল বাজার হতে ছোট হয়ে আসছে। শুধু আমাদের এই ১২টি বাড়ি গাঁ ঘেষে ড্রেন বাকাঁ করে নিয়ে যাচ্ছে। সিটি মেয়র বলেছেন, কারও বাড়ির যেন ক্ষতি না হয়, তবে তার কর্ণপাত করছেন না ওই ইঞ্জিনিয়ার। এসময় মফিজ বলেন, যদি আগামাথা সমান হতো, তবে আমরাও আমাদের বাড়ির সীমানা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিতাম, কিন্ত সেটা হচ্ছে না।
আরেক বাড়ি মালিক ও সাবেক উপ-সচিব মো: আলমগীর হোসেন জানান, ২০০০ সালে টুটপাড়া মৌজার এসএ রেকর্ডের ২৩৩৭ নং দাগে ৬ দশমিক+ জমি ক্রয় করি। তখন থেকেই এখানে ড্রেন বিদ্যমান ছিল। তখন অন্যান্য বাড়ির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমি বাড়ি নির্মাণ করি। নতুন সংস্কারের জন্য আমার বাড়ির সীমানা কাছাকাছি এসে হঠাৎ করে রাস্তা প্রশস্থ করার বিষয়টি উঠে আসে, এবং জানানো হয় এসএ রেকর্ড অনুযায়ী এখানে একটা খাল ছিল। এসএ রেকর্ড আমরা তখন পাইনি, তবে পরবর্তীতে যখন পেলাম তখন দেখি রেকর্ডে এখানে কোন খাল নেই। তাছাড়া জমি ক্রয়ের পর থেকে সব রেকর্ডই আমি যাচাই করে এর সত্যত্যা নিশ্চিত করছি।
সাবেক এই উপসচিব বলেন, সরকারের যদি সড়ক বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হয়, তবে স্বাভাবিকভাবে আমাদের জনগণের কাছ থেকে এ্যাকুজেশন করে কিনে নেবে। কিন্তু এভাবে জোরপূর্বক এভাবে বাড়ি ভেঙে ফেলে নেয়ার কোন বিধান আছে বলে আমার জানা নেই। এছাড়া কারও বাড়ি ভাঙতে হলে প্রত্যেককে আলাদাভাবে নোটিশ দেয়ার বিধান রয়েছে, তাও করা হয়নি। উপরুন্তু প্রকৌশলী বলে গেছে, রবিবার (৩০ জুলাই) বুলডেজার নিয়ে এসে বাড়ি ভাঙা হবে, এর কি যুক্তি আছে?।
তিনি সকলের পক্ষে সিটি মেয়রের কাছে দাবি করেন, যেভাবে ড্রেনটি চলে আসছে, সেভাবেই সোজাসুজি নির্মাণ করা হোক। যাতে করে আশেপাশের বৈধভাবে বসবাসকারী বাড়ির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য নগরপিতার কাছে আকুল আবেদন করে বলেন, তিনি এ বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখে অনুধাবন এবং বিবেচনা করবেন বলে আশা রাখি।
১৪৫নং বাড়ির আজমল হোসেন জানান, পূর্বে যে রাস্তা ছিল, তার উত্তর ও দক্ষিণ উভয় পাশে সড়কের জায়গা রয়েছে। তখন সেভাবেই উভয় পাশের বাসিন্দারা তাদের বাড়ি ও ভবন নির্মাণ করেছেন। এখন রাস্তার একপাশে আগের অবস্থা রেখে আরেক পাশ প্রশস্থ করা হচ্ছে, বাড়ি-ঘর ভাঙা হচ্ছে, তাও সব জায়গা না, আগা-মাথা না, কিছু কিছু জায়গায়, এটা কেমন কথা? কেমন কাজ? কেমন সড়ক প্রশস্থকরণ? এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। এজন্য আমাদের মেয়রের নিকট আকুল আবেদন, বিষয়টি পুর্নবিবেচনা করে পূর্বের মতোন ড্রেনেজ লাইন নির্মাণ করা হোক।