খুলনা ও যশোরে এইচআইভি পজিটিভ বেশি

0
392

আছাদ জাহিম সোয়াব:
খুলনায় দিনকে দিন এইচআইভি/এইডস আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট মাস পর্যন্ত রক্ত টেস্টের মাধ্যমে ৮২ জন ব্যক্তির মধ্যে এইচআইভি/এইডস পজিটিভ পাওয়া যায়। এর মধ্যে গর্ভবতী মায়েদের রক্ত টেস্টের মাধ্যমে ৬ জনের পজিটিভ পাওয়া যায়। এআরটি কর্ণার থেকে আগস্ট মাসে পাওয়া গেছে ৭ জন এইচআইভি পজিটিভ। এইডস সনাক্তে সকল অপারেশনের পূর্বে রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামুলক করা হলে আরো এইডস পজিটিভ ব্যক্তি সনাক্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সে জন্য সকল অপারেশনের ক্ষেত্রে এই টেস্টটি বাধ্যতামুলক করার জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এদিকে খুলনা সিটিসহ জেলার সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এইচআইভি পরীক্ষা বাধ্যতামুলক করার লক্ষে হাসপাতালে পরিচালক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি পত্র প্রেরণ করেন।
গতকাল বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুর ১২টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে কনফারেন্স রুমে strengthening of HIV Serviceপ্রকল্পের ৫ম ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভায় ওই সব তথ্য তুলে ধরা হয়। খুমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ এসএম কামাল এর সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম এবং ইউনিসেফ এর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় prevention of mother to child transmission of HIV (PMTCT)অর্থাৎ ‘গর্ভবতী মায়ের থেকে শিশুর যাতে এইচআইভি না ছড়ায়’ প্রোগ্রামটি বাস্তবায়িত হচ্ছে ২০১৭ সালের নভেম্বও থেকে।
সভায় ওই প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোল্যা মোঃ নুরুল আসলাম বর্তমানে খুলনায় এইচআইভি সংক্রান্ত বিষয়ক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডাঃ শামসুন্নাহার লাকী, ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালের পরিচালক শেখ আমজাদ হোসেন, হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী, খুলনা মেডিকেল কলেজের অনুজীব বিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ শাহনাজ পারীভন, ডাঃ বেগম রওগনারা, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেডিকেল অফিসার ডাঃ স্বপর কুমার হালদার, খুমেক হাসপাতলে সেবা তত্ত¡াবধায়ক আছমাতুন্নেছা, পিকেসপি এর ম্যানেজার ফরিদ উদ্দিন, আরবান হেলথ কেয়ার এর প্রোজেক্ট ম্যানেজার গোলাম রসুল ও তাপস কুমারপালসহ হাসপাতালের নার্স কর্মকর্তা-কর্মচারিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বলা হয়, দিনকে দিন খুলনাঞ্চলে এইচআইভি পজিটিভ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি সকল অপারেশনের পূর্বে রক্ত টেস্ট বাধ্যতামুলক করা যেতো তাহলে এইচআইভি পজিটিভের সংখ্যা আর সনাক্ত করা যেতো। রক্ত টেস্টের মাধ্যমে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে এইচআইভি রিপোর্ট দেওয়া যায়। সভায় প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোল্যা মোঃ নুরুল আসলাম বলেন, দিনকে দিন এইডস পজিটিভ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৮ সালের বাংলাদেশে ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এইচআইভি পজিটিভ পাওয়া গেছে ৬ হাজার ৪৫৫ জন। এর মধ্যে মারা যায় ১ হাজার ৭২ জন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে এইচআইভি পজিটিভ পাওয়া যায় ৮৬৯। এর মধ্যে মারা যায় ১৪৮ জন। খুমেক হাসপাতাল থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ৩২ জনকে এইচআইভি/এইডস পজিটিভ সনাক্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ রয়েছে ১৬ জন। এছাড়া গর্ভবতী মায়ের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে দুইজনের এইচআইভি/এইডস পজেটিভ পাওয়া গেছে। এ সময়ের মধ্যে মারা যায় ৩ জন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেছে ১১ জন।
বর্তমানে খুমেক হাসপাতাল এআরটি কর্নার থেকে ১২ জেলার ২৪৫ জন এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে এন্টি রেক্টোভাইরাল থেরাপী (এআরটি) বিনামূল্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে খুলনায় ৮০ জন, যশোরে ৫৬ জন, সাতক্ষীরায় ৩৬ জন, নড়াইলে ২৭ জন, ঝিনাইদহে ১০ জন, বাগেরহাটে ১৪ জন, মাগুরায় ৪ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৪ জন, গোপালগঞ্জে ৫ জন, ফরিদপুরে ৪ জন, পিরোজপুরের ৩ জন, বরগুনায় ১ জন (হিজড়া) ও রাজশাহী ১ জন (হিজড়া) এইচআইভি/এইডস আক্রান্তকে এআরটি সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
এদিকে খুলনা সিটিসহ জেলার সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এইচআইভি পরীক্ষা বাধ্যতামুলক করার লক্ষে হাসপাতালে পরিচালক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি পত্র প্রেরণ করেন। গত ১৮ জুলাই খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পরিচালক বরাবর পত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালের ১লা অক্টোবর থেকে সরকারিভাবে এইচআইভি পরীক্ষাসহ এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিদের বিনামুল্য বিনামুল্য ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি ১৫ নভেম্বর থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম এবং ইউনিসেফ এর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় prevention of mother to child transmission of HIV (PMTCT)পরিচালিত হচ্ছে। প্রতি মাসে খুলনা মেডিকেল কঔেৎ হাসপাতালে সাধারণ জনগন এবং গর্ভবতী মায়েদের এইচআইভি পরীক্ষা করে ৪-৫ জন করে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের সনাক্ত করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে ওই প্রকল্পটি খুলনা সিটি হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিচালকদের নিয়ে ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভার আয়োজন করে। উক্ত সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, খুলনা সিটিসহ সকল জেলার সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো কোন রোগীর সিজার/অপারেশন বা অন্য কোন সার্জারি করার আগে অবশ্যই এইচআইভি পরীক্ষা করা উচিত। উল্লেখ করা যায়, যে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির মাধ্যমে যে কোন ভাবে সেবা প্রদানকারী আক্রান্ত হতে পারে। যার কারণে সেবাপ্রদানকারী ও রোগীর অনেক বেশি ঝুকিতে থাকতে হয়।