খুলনায় সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ম্যানেজারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

0
347

খুলনাটাইমস প্রতিবেদক:
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক খুলনার ডুমুরিয়া শাখার এসএভিপি ও ম্যানেজার মোঃ মোতালেব হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যাংকের ওই শাখায় বসে তিনি এমন কোন অনিয়ম নেই যে করেননি। গ্রাহকদের মোটা অংকের ঋণ দিয়ে তাদের সাথে ব্যবসায়িক পার্টনার হন তিনি। এছাড়া ব্যাংকে চাকুরীর আড়ালে নিজের ঠিকাদারী ব্যবসার কোটি কোটি টাকা লেনদেন করেন গ্রাহকদের একাউন্টে। তার এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে টের পেয়ে অনেক গ্রাহক তাদের একাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। অনুসন্ধানে এ ধরনের চিত্রই ফুটে উঠেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক খুলনার ডুমুরিয়া শাখার এসএভিপি ও ম্যানেজার মোঃ মোতালেব হোসেন নানা শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে সখ্যতা তৈরি করেছেন। বিশেষ করে একশ্রেণীর ঠিকাদার ও সরকারি চাকুরীজীবীরা এরমধ্যে সংখ্যায় বেশি। খুলনা ও বাগেরহাট জেলার অনেক ঠিকাদারের সাথে তার খুব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ তার ব্যবসায়িক পার্টনার। তাদের অনেককেই তিনি ব্যাংকের ওই শাখা থেকে মোটা অংকের ঋণ দিয়ে অঘোষিতভাবে সেই ব্যবসায় পার্টনার হিসেবে রয়েছেন। তাছাড়া অনেককে ঋণ দিয়ে টাকার একটি অংশ ধার হিসেবে রেখে দেন। পরবর্তিতে সেই টাকা নিয়ে অনেক গ্রহকের সাথে বিবাদেও জড়িয়ে পড়েন এ ব্যাংক কর্মকর্তা। এমনই কয়েকজন গ্রাহকের সাথে কথা বলে এসকল তথ্য বেড়িয়ে আসে।
অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, ব্যাংকের গ্রাহক মেসার্স শাওন ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক খুলনার ডুমুরিয়া শাখায় এই প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট নম্বর ১১৩১৩৩০০০০৮৭৮। ২০১৬ সালের ২২ফেব্রæয়ারি ব্যাংকের ওই শাখায় একাউন্টটি খোলা হয়। ব্যাংক ম্যানেজার মোঃ মোতালেব হোসেন মেসার্স শাওন ট্রেডার্স’র মালিক মোঃ জলিল শিকদারের সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে তাকে মোটা অংকের টাকা ঋণ নেয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির মালিক তার কাছ থেকে ঋণ নিবেন না বলে জানান। এরপর ওই ব্যবসায়ীর সাথে পার্টনারে ঠিকাদারী ব্যবসা শুরু করেন ব্যাংক ম্যানেজার মোতালেব হোসেন। তিনি মেসার্স শাওন ট্রেডার্স’র মালিকের কাছ থেকে বন্ধুত্ব ও ব্যবসায়ীক পার্টনারের সুযোগ নিয়ে ওই একাউন্টের বেশ কিছু চেকের পাতায় স্বাক্ষর করিয়ে নিজের কাছে রাখেন। ব্যাংক ম্যানেজার তাকে বলেন, ব্যবসার টাকা পয়সা লেন দেনে আমার একাউন্ট ব্যবহার করলে সমস্যা হবে। এরপর মসার্স শাওন ট্রেডার্স’র মালিকের মুঠোফোনে তার প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ওই একাউন্টের লেন দেনের ম্যাসেজ আসতে শুরু করে। তিনি তার একাউন্টে বড় বড় অংকের টাকার লেন দেনে একটু বিব্রত হতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি তার একাউন্টের এস্টেটমেন্ট তুলতে গেলে তাকে দেয়া হয়না। পরে তিনি মাত্র ১৩ মাসের একটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিতে সক্ষম হন। তাতে দেখা যায় মাত্র ১৩ মাসেই সোস্যাাল ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজার মোঃ মেতালেব হোসেন ওই একাউন্টে প্রায় ৪ কোটি টাকা লেন দেন করেছেন। চলতি বছরের গত ৫মার্চ তিনি এ চিত্র দেখে দ্রæত তার একাউন্টটি বন্ধ করার জন্য ব্যাংকে আবেদন করেন। এরপর তিনি অনেক চেষ্টা করেও তার একাউন্টের এস্টেটমেন্ট নিতে পারেননি। মেসার্স শাওন ট্রেডার্স’র মালিক ব্যসায়ী মিঃ জলিল এসকল অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন।
ব্যাংকের ওই শাখার গ্রাহক খুলনা মহানগরের সোনাডাঙ্গা মডেল থানাধীন বাইপাস সড়কের বাসিন্দা (ব্যবসায়ী) মোঃ বাদল হোসেন জানান, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ডুমুরিয়া শাখার এসএভিপি ও ম্যানেজার মোঃ মোতালেব হোসেন তাকে ব্যাংক থেকেন ১৫ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি ৩লাখ টাকা রেখে দেন। তিনি ওই টাকা গ্রাহক মোঃ বাদলের কাছ থেকে ধার হিসেবে রেখে দেন। পরবর্তিতে নির্দিষ্ট সময়ে গ্রাহকের ওই তিনলাখ টাকা না দিয়ে নানা তালবাহানা শুরু করেন ব্যাংক ম্যানেজার মোতালেব হোসেন। একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে অপর একজন ব্যবসায়ীর মধ্যস্থতায় মিট মিমাংসা করা হয়।
বটিয়াঘাটা এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম নামে একজন গ্রাহক নিজের জমির দলিল ব্যাংকের ওই শাখায় জামানত রেখে ৫লাখ টাকা ঋণ নেন। সিরাজুল ইসলাম ঋণের ওই ৫ লাখ টাকা তার বন্ধু ওই ব্যাংকেরই অপর গ্রাহক মোঃ বাদলকে সাথে নিয়ে ব্যাংক ম্যানেজার মোতালেব’র নিকট দিয়ে আসেন। কিন্তু গ্রাহক সিরাজুল ইসলামের সেই জমির দলিল ফেরত দিতে ব্যাংক ম্যানেজার মোতালেব হোসেন কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানান। এরমধ্যেই গত জুলাই মাসে করোনা আক্রান্ত হয়ে গ্রাহক সিরাজুল ইসলাম মারা যান। তার স্ত্রী এ প্রসঙ্গে ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে গেলে তিনি জানান তার স্বামীর ঋনের টাকা পরিশোধ হয়নি। এনিয়ে অনেক শালশী বৈঠকের পর ব্যাংক ম্যানেজার মোতালেব হোসেন স্বীকার করেন মৃত গ্রাহক সিরাজুল ইসলাম তার কাছে ১লাখ টাকা পাবেন। ওই ঘটনার স্বাক্ষী ব্যাংকেরই অপর গ্রাহক মোঃ বাদল জানান, আমি সাথে থেকে ৫লাখ টাকা দিয়ে এসেছি। পরে কি হয়েছে তা আর জানিনা।
এ সকল অভিযোগের বিষয়ে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক খুলনার ডুমুরিয়া শাখার এসএভিপি ও ম্যানেজার মোঃ মোতালেব হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।