খুমেক হাসপাতালের সোয়া ৬ কোটি টাকার সরবরাহের কাজ ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ

0
300

টাইমস প্রতিবেদক:
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার মালামাল সরবরাহের কাজে সিন্ডিকেটের অভিযোগ উঠেছে। ৪টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যোগসাজসে ৬টি গ্রুপের ওই কাজ ভাগবাটোয়ারা করে বাগিয়ে নিয়েছেন, এমন অভিযোগ বঞ্চিত ঠিকাদারদের। এক্ষেত্রে চক্রটি একটি বিশেষ পরিবারের নাম ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে উল্লেখিত সরবরাহের কাজে সিন্ডিকেট যে হয়নি, তা পুরোপুরি অস্বীকার করেননি খোদ খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দার।
খুলনাটাইমস প্রতিবেদকের কাছে তিনি বলেন, যে বা যারা সিন্ডিকেট করেছে, তারা বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই জড়িত নয়। উপরুন্তু কর্তৃপক্ষ মালামালের মান ও দর যাচাই-বাছাই করেই তবে তা গ্রহণ করবে, গড়মিল দেখা দিলে পুনরায় দরপত্র আহবান করা হবে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে ৬টি গ্রুপের এম, এস, আর সামগ্রী ও অন্যান্য মালামাল ক্রয়ের জন্য চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর কয়েকটি পত্রিকায় উন্মুক্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, শর্তসম্বলিত প্রতি সেট সিডিউল মূল্য সাত শত পঞ্চাশ টাকা। যা সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিয়ে সিডিউল ক্রয় করতে হবে হাসপাতাল থেকে। ১৯ অক্টোবর হতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দরপত্র বিক্রয়ের তারিখ এবং পরদিন ১৬ নভেম্বর বেলা ১১টা পর্যন্ত হাসপাতাল পরিচালকের দপ্তরে দাখিলের দিন ধার্য্য করা হয়। ওইদিনই বেল্ া সাড়ে ১১টায় দরপত্র বাক্স খোলার তারিখ নির্ধারণ হয়। ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই দরপত্র বৈধতার মেয়াদ ঘোষণা করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
সেখানে আরও উল্লেখ, ক গ্রুপের ইডিসিএল বহির্ভূত ওষুধ সামগ্রী ক্রয়ের জন্য ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, খ গ্রুপের সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা, গ গ্রুপের কেমিক্যাল ও ফ্লিম সামগ্রীর জন্য ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য ৬০ হাজার টাকা, গজ, ব্যান্ডিজ, তুলা ইত্যাদি সামগ্রী ক্রয়ের জন্য ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং লিনেন ও রাবার সামগ্রী ক্রয়ের জন্য ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা আর্নেস্টমানি এবং সিকিউরিটি মানি হিসেবে কার্যাদেশ মূল্যের শতকরা ১০ ভাগ অর্থ ধার্য্য করার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোট ৫টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২৪টি সিডিউল বিক্রি হয়। তবে নির্ধারিত দিনে জমা পড়ে ১৮টি। ৪টি প্রতিষ্ঠান যোগসাজসে এসব সিডিউল জমা দেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে খুলনার হেরাজ মার্কেটের সাইফুল ইসলাম ট্রেড লিংক, জামান এন্টারপ্রাইজ, রহমান ফার্মেসী, রাইসা এন্টারপ্রাইজ ও ফুলতলা উপজেলার দামোদর এলাকার তাকরীর এন্টারপ্রাইজ।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দার খুলনাটাইমসকে জানিয়েছেন, জমাকৃত সিডিউলগুলো মূল্যায়নের জন্য ৭ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, একজন প্রকৌশলী, একজন শিক্ষক, সমাজসেবা’র উপ-পরিচালক এবং তিনজন চিকিৎসক যথাক্রমে ডা: সম দেলোয়ার হোসেন, ডা: তুষার আলম ও ডা: ফরিদ উদ্দিন রয়েছেন। এই কমিটি আগামী ৭দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিবেন এবং প্রয়োজনে বাজার দর যাচাই কমিটি করে অত:পর ঠিকাদারী কার্যাদেশ প্রদান করবেন। এছাড়া ৩ সদস্যের কমিটি কার্যাদেশে বর্ণিত মালামালের মান যাচাইপূর্বক তা গ্রহণ করবেন। আগামী ২৯ নভেম্বর দরপত্র মূল্যায়নের তারিখ ধার্য্য হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০-২১ অর্থবছরে এমএসআর খাতে বরাদ্দ ১০ কোটি টাকা। যদিও এই অর্থ হাসপাতালের জন্য অপ্রতুল। বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক অর্থাৎ ৫ কোটি টাকা শুধুমাত্র ক-গ্রুপের ওষুধ ক্রয়ের জন্য নির্ধারিত। অবশ্য এর ৭৫ শতাংশ অর্থ অর্থাৎ ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ওষুধ এ্যাসেন্সিয়াল ড্রাগ কোম্পানী লিমিটেড (ইডিসিএল) থেকে ক্রয় বাধ্যতামূলক। বাকি ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা স্থানীয় ওষুধ (ইডিসিএল বর্হিভূত) ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ। যার মূল্য এমআরপি (ম্যাক্সিম্যাম রিটেইল প্রাইস) দরে মূল্যায়ন করা হয়। এছাড়া এমএসআর খাতে বরাদ্দকৃত ১০ কোটি টাকার বাকী অর্ধেক অর্থাৎ ৫ কোটি টাকা অন্য ৫টি গ্রুপের জন্য নির্ধারিত।
এদিকে সাইফুল ইসলাম ট্রেড লিংকের মালিক খান সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীক প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে নানান ধরণের ষড়যন্ত্রমূলক তথ্য ছড়াচ্ছেন।  যা সত্য নয়।