খুমেক হাসপাতালের বহিঃবিভাগের টিকিট মুল্য ১শ’ টাকা

0
527

আছাব জাহিম সোয়াব
কমিশন লোভী কতিপয় ডাক্তার, স্টাফ, ফ্রি সার্ভিস ও আউটসোর্সিং এর কিছু অসাধু কর্মচারির কারণে খুলনা মেডিকেল কলেজ বহিঃবিভাগের শৃঙ্খলা ফিরছে না। বহিঃবিভাগে টিকিট কাউন্টারে রোগীর দীর্ঘ লাইন। এ সুযোগে হাসপাতালের কতিপয় অসাধু স্টাফের যোগসাজোসে টিকিট কালোবাজারে বিক্রির ঘটনাও ঘটছে।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, বহিঃ বিভাগে দালালমুক্ত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, সোনামুখি পরিবার নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বহিঃবিভাগ দালালমুক্ত রাখতে কাজ করছিলেন। সম্প্রতি কতিপয় ব্যক্তি হুমকি-ধামকি দেওয়ার কারণে তারা এখন কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। কালোবাজার টিকিট বিক্রি বিষয় তিনি বলেন, এই প্রথম বিষয়টি ধরা পড়েছে। কারো এর সাথে জড়িত তাদের খুজে বের করার চেষ্টা চলছে।
মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেম্বার অব কমার্স এর পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসকদের সাথে রোগীদের অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটনা ঘটেছে। এটা খুবই দুঃখজনক।
গত কয়েকদিনে খুলনা মেডিকেল কলেজ ( খুমেক) হাসপাতালে বহিঃবিভাগ ও আন্তঃবিভাগের এ সব নানা অনিয়মের চিত্র চোখে পড়ে। সম্প্রতি এক দালাল আগত রোগীদের হাতে ১শ’ টাকায় বহিঃবিভাগের টিকিট বিক্রির সময় হাতে নাতে আটক হয়। এ ঘটনার পর বিষয়টি স্পস্ট হয়ে উঠেছে বহিঃ বিভাগের টিকিট কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে। এ ঘটনার পর থেকে ‘সোনামুখি পরিবার’ সদস্যদেরকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়েছে। এমনি এসিড মারারও হুমকি প্রদান করা হয়। বিষয়টি হাসপাতালের পরিচালক কাছে অবহিত করা হয়।
বহিঃ বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, কেউ ভিজিটিং কার্ড বের করছেন, কেউ বা তাদের কোম্পানির ওষুধের নাম বলছেন রোগীর প্রেসক্রিপশনে প্রেসক্রাইব করার জন্য। দরজার বাইরে রোগীর লোক দাঁড়িয়ে আছেন। ওষুধ প্রতিনিধিরা ভেতরে থাকার কারণে ডাক্তারের রুমে ঢুকতেই পারছেন না আগত রোগীর অভিভাবকরা। আবার বাইরে ওষুধ কোম্পানির ব্যাগ রেখে দুইজন অপেক্ষা করছেন। বহিঃবিভাগের সার্জারি, অর্থপেডিক্স, মেডিসিন, ইএনটি চিকিৎসকদের রুমের সামনে জটলা করে দাঁড়িয়ে আছে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এদের মধ্যে কেউ রোগীর দীর্ঘ লাইন পাশ কাটিয়ে চিকিৎসকের চেম্বারে ঢুকে পড়ছেন। রোগীরা বের হওয়ার সাথে সাথে ওষুধ প্রতিনিধিরা সংঘবদ্ধ হয়ে রোগীকে আটকিয়ে রাখে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে কী ওষুধ এর নাম লেখা হচ্ছে। মোবাইল বের করেই ছবি তুলছে। একজন তুলছেন আরেকজন তোলার জন্য আবারও রোগীর হাত থেকে প্রেসক্রিপশনটা কেড়ে নিচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছ থেকে স্যাম্পল উপঢৌকন ও বিভিন্ন প্রকার উপহার সামগ্রী নিয়ে তাদেরকে যে কোনো সময় প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বিভিন্ন নামী দামী ওষুধ কোম্পানির পাশাপাশি রয়েছে ফুড সাপ্লিমেন্ট নামক পট কোম্পানির প্রতিনিধিরাও। চিকিৎসকরা ওষুধের মান ও গুণ বিবেচনা না রেখে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে ওই সব কোম্পানির ওষুধের নাম লিখে থাকেন। কোন কোম্পানি কত বেশি সুবিধা দিয়ে চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন করাতে পারে তা নিয়ে চলে রিপ্রেজেনটেটিভদের মধ্যে অঘোষিত প্রতিযোগিতা। রোগী চিকিৎসকের রুম থেকে বের হলে রিপ্রেজেনটেটিভরা সেই ব্যবস্থাপত্র যাচাই করে দেখে উপঢৌকন নেওয়া চিকিৎসকরা তাদের প্রতিষ্ঠানের ওষুধের নাম লিখছেন কি-না। হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে রয়েছে আরেক গ্রুপ ওষুধ প্রতিনিধি। ভেতর বাইরে সব জায়গায় হাসপাতাল দখলে রয়েছে রিপ্রেজেনটেটিভদের।