কয়রায় প্রতিবন্ধী ,শিশু ও তরুনদের স্বপ্ন দেখানো শিখাচ্ছেন মানব কল্যাণ ইউনিট

0
842

ওবায়দুল কবির সম্রাট:কয়রা :-

বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে সুন্দরবন বেষ্টিত ভাঙ্গন কবলিত অবহেলিত অঞ্চল খুলনার কয়রা উপজেলার২০০৭ সালে ৯ উদ্যোগী তরুণ সংঘবদ্ধ হয়ে গড়ে তোলেন মানব কল্যাণ ইউনিট ।সংগঠনের উদ্যোগী তরুণদের সাথে কথা বলে জানা যায়,৯ বন্ধু তারা ভ্রমণের জন্য জমানো টাকা দিয়ে ভ্রমণের বাসনা পায়ে পিসে ২০০৭ সাথে সিডরের বিদ্ধংসী তান্ডবলিলা প্রত্যক্ষ করিয়া সিডরে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা অবশ্যক মনে করিয়া তারা ভ্রমণের জমানো টাকা দিয়ে অসহায়ের পাশে দাড়ানো টা শুরু করে ।সেখান থেকে সংঘবদ্ধ হয়ে মানব সেবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে সৃজনশীল চিন্তা ধারা নিয়ে গড়ে তোলে মানব কল্যাগ ইউনিট।সেই থেকে সংগঠনটি সমাজের নানা উন্নয়ণ মুলক কাজ করার পাশাপাশি বর্তমানে উপজেলার প্রতিবন্ধী, শিশু সহ সকল বয়সের মানুষ আইটি স্কুলের এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করে সকলের মাঝে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞানের আলো ছড়াতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।কয়রার এ মানব কল্যাণ ইউনিট পরিচালিত আইটি স্কুল থেকে দক্ষ ও আইটি এক্সপার্ট তৈরি করার লক্ষে শেখ রাসেল প্রতিবন্ধি ও শিশু উন্নয়ন প্রকল্পে বর্তমানে ফ্রি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ১৮ জন প্রতিবন্ধি , ৬৫ জন শিশু,৫৮ জন তরুণ -তরুণী,১০৩ জন জন বেকার ও বিভিন্ন পেশার ১৩ জনকে। প্রশিক্ষণের জন্য সকাল থেকে নিয়মিত ৩ জন শিক্ষক ও পার টাইম ৭ জন শিক্ষক আছেন।প্রশিক্ষণের জন্য কম্পিউটার আছে ৮টি । বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে সকলকে দক্ষ ও আইটি এক্সপার্ট তৈরি করার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তির আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন নিরলস ভাবে ।সংগঠণ সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সমাজসেবা ও মানব কল্যাণ মূলক কাজ করায় সৃজনশীল চিন্তাধারায় উজ্জীবিত সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি সিআরআই এর আয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এর কাছ থেকে ২০১৭ সালে জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড গ্রহন করে। সংগঠনটির ১১ বছর পথ চলায় এর বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়ণ, দেশ ও দশের স্বার্থে, স্বাধীনতার পক্ষে কার্যক্রম কয়রার সর্ব স্তরের মানুষের ব্যাপক নজর কেড়েছ।যার ফলশ্রুতিতে উপজেলাবাসীর মন জয় করে নিয়েছেন সংগঠনটি। সংগঠনে সম্পৃক্ত করে নিজেকে গড়তে আপন সন্তানকে এগিয়ে দিচ্ছে সচেতন অভিবাবকরা। আইটি স্কুলের শিক্ষার্থী ছোট্ট শিশু ফজলুল আজম সিফার সাথে কথা হলে জানান, আইটি স্কুলে আসতে তার অনেক ভালো লাগে। এখানকার ভাইয়ারা তাকে অনেক ভালোবাসে এবং আদর করে। সুন্দর করে বুঝিয়ে কম্পিউটারের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করান।মাধ্যমিকে পড়ুয়া ছাত্রী শিল্পী কর্মকার বলেন আইটি স্কুলে এসে সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তার স্বপ্ন সে বড় হয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবে। আর এই স্বপ্ন দেখার মূল কারণ কয়রা মানব কল্যাণ ইউনিট পরিচালিত এ স্কুল। আসাদুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক সর্ব প্রথম মানব কল্যাণ ইউনিটকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, “আমাগের কয়রার মতন উপুজেলায় ইরাম স্কুল কুরে আমাগে ছেলেবেলেরা ফ্রি কম্পিউটার শিখতি পাইরতিছে। যে জায়গায় কম্পিউটা কি তাই আমরা ঠিক মতন জানতাম না। এখন বুজতিছি ডিজিটাল বাংলাদেশের মানে কি”।কয়রা কপোতাক্ষ কলেজের প্রভাষক ও প্রবীন সমাজকর্মী আ. ব. ম. আব্দুল মালেক বলেন, আমরা বিগত সময়েও মানব কল্যাণ ইউনিট এর কার্যক্রম ও তাদের পরিচালিত আইটি স্কুলটি পরিদর্শন করেছি। সংগঠনের সভাপতি আল আমিন ফরহাদ এর পরিচালনায় অন্যান্য সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আগত দিনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করে যাচ্ছেন নিজেদের ব্যক্তি উদ্যোগে। আইটি স্কুলটির ব্যাপারে আমাদের ইতিবাচক ধারণা রয়েছে এবং স্কুলটি যাতে ভালোভাবে সামনের দিনগুলোতে তথ্য প্রযুক্তির সেবা দিয়ে যেতে পারে সেজন্য আমাদের সকলের চেষ্টা থাকবে।
প্রাথমিকভাবে নিজেদের অর্থায়নে আইটি স্কুল স্থাপন করা হয়, যেখানে সম্পূর্ণ ফ্রী প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে সরকারের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের দেওয়া ওই প্রকল্পের অর্থে যাবতীয় সরঞ্জামাদি ক্রয় করে প্রতিষ্ঠানটির কাজের গতি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রামে, গ্রাফিক্স ডিজাইন, আউট সোর্সিং প্রশিক্ষণ নিয়ে আয় মুখী হচ্ছে তরুণ- তরুণী ও যুব সমাজ।কয়রা কপোতাক্ষ কলেজের অধ্যক্ষ অদ্রীশ আদিত্য মন্ডল বলেন, একটি শিক্ষিত, সমৃদ্ধ, প্রগতিশীল মূল্যবোধ সম্পন্ন সমাজ গঠনের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেছেন মানব কল্যাণ ইউনিট নামক এ মানবিক ও তারুন্য নির্ভর সংগঠনটি। আমাদের এলাকাবাসীও এখন অনেক স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন এই সংগঠন নিয়ে। তাদের কাছে আমাদের চাহিদার পরিমানও বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। আমরা আমাদের ছাত্র ছাত্রীদেরও সেখানে সম্পৃক্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকি।কয়রা মদিনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহীদ সরোয়ার বলেন, মানব কল্যাণ ইউনিটের সামাজিক সকল কাজ সত্যি প্রশংসার দাবীদার। সরকার কিংবা যে কোন বেসরকারি সংস্থা তাদের দিকে একটু সহযোগিতার হাত বাড়ালে আরও ভাল কাজ করতে পারবে বলে মনে করি।’অবশেষে কথা হয় মানব কল্যাণ ইউনিট ও আইটি স্কুলের পরিচালক ও সভাপতি যিনি শ্রম দিয়ে নিজ চেষ্টায় এখনও ধরে রেখেছন শিশু, প্রতিবন্ধী ও তরুণ-তরুণী এবং বেকার যুবকদের স্বপ্ন দেখতে শেখানো এ প্রতিষ্ঠানটি। যার নাম আল আমিন ফরহাদ। তিনি বলেন, আব্বা আমার চাকরির জন্য এক টুকরো জমি বরাদ্দ রাখছিল! সে জমি বিক্রি করে আইটি স্কুলটি পরিচালনা করতেছি, যদিও তাতে আমাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমাদের এখানে প্রশিক্ষণার্থীর তুলনায় যন্ত্রাংশ ও চেয়ার টেবিল খুবই সীমিত। প্রতিবন্ধী ও শিশুদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানে ভাল কোন প্রজেক্টর নেই। কম্পিউটার থাকলেও চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ষ্টুডেন্টরা এসে ফিরে যায়, সবাই সুযোগ পায়না, বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থাও এখনো করতে পারিনি। তিনি বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশন ও সি আর আই এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশনকে সামনে রেখে ‘শুধু শিক্ষিত নয় চাই তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ জাতি’ , এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে তরুনদের সম্পৃক্তকরন তথা প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা আমাদের একমাত্র স্বপ্ন এখন। সে লক্ষে সুন্দর একটি সমাজ গঠনের অঙ্গীকারে মানব কল্যাণ ইউনিটের মাধ্যমে আইটি স্কুল স্থাপন করা হয়েছে। আমাদের এই শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আইটি স্কুলটিকে সরকারি সুযোগ সুবিধা শিক্ষকদের বেতন ভাতা প্রদান করলে কয়রা আইটি স্কুল শিশুদের সুদক্ষ ও আইটি এক্সপার্ট হিসাবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। সেই সাথে স্কুলটি আলো ছড়াবে শিশু ও প্রতিবন্ধীদের মাঝে,হাসি ফুটবে শিশুর বাবা-মার মুখে।একই সাথে তিনি জানান,প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা না হয়ে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আর দশ জন সাধারণ মানুষের মত দক্ষ ও সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে। তিনি এ ব্যাপারে আইসিটি ডিভিশন সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি ও কামনা করেন।