কেসিসি’র ৫০৪ কোটি ৩১ লাখ ২২ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা

0
224

খবর বিজ্ঞপ্তি:
২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য খুলনা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ৫০৪ কোটি ৩১ লাখ ২২ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বুধবার (২৬ আগষ্ট) সকাল ১১ টায় নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে এ বাজেট ঘোষণা করেন। একই সাথে তিনি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ৫৮২ কোটি ৭১ লাখ ৫৭ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেটও উপস্থাপন করেন।
বাজেট ঘোষণার শুরুতে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পনেরই আগস্টের কালো রাতে নিহত, জাতীয় চার নেতা এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া সিটি মেয়র করোনা মহামারীর কারণে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে মৃত্যুবরণকারী এবং কেসিসি’র প্রয়াত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং সকলের রূহের মাহফেরাত কামনা করেন।
বাজেট ঘোষণাকালে সিটি মেয়য় বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর প্রভাবে অন্যান্য এলাকার মত খুলনা মহানগরীর উন্নয়নমূলক কাজও বন্ধ রাখা হয়। সে কারণে বিগত অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্থ হয়। তারপরও আমরা বাজেটের শতকরা ৬৭ দশমিক ৩২ ভাগ অর্জনে সক্ষম হয়েছি। চলতি অর্থবছরের বাজেট লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ করা সম্ভব হবে বলে সিটি মেয়র আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সিটি মেয়র নগর ভবনকে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আমাদের লক্ষ্য খুলনার সার্বিক উন্নয়ন। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে খুলনাবাসীর সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে মহানগরীকে একটি পরিচ্ছন্ন ও উন্নত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নির্বাচন প্রাক্কালে দেয়া ইস্তেহারে নগরবাসীকে যে প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছিল এ বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তা বাস্তবে রূপ লাভ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাজেটের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে সিটি মেয়র বলেন, এটি একটি উন্নয়নমুখি বাজেট। এ বাজেটে নতুন কোন করারোপ করা হয়নি। বকেয়া পৌরকর, নবনির্মিত সকল স্থাপনার উপর প্রচলিত নিয়মে কর ধার্য্য এবং নিজস্ব আয়ের উৎস সম্প্রসারণের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বাজেটে কেসিসি’র সীমানা স¤প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সিটি মেয়র আরো বলেন, শহরের সড়ক ও ড্রেনেজ তথা জলাবদ্ধতা নিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে এ বাজেটে। এছাড়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাজেটে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও এ বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘোষিত বাজেটে নাগরিক সেবা স¤প্রসারণ ও সেবার মান উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, পার্ক, ধর্মীয় উপসানালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং কেসিসি’র বিভিন্ন দপ্তর আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
সিটি মেয়র বাজেট বক্তৃতায় আরো বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি মশক নিধন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে তা মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলাসহ বস্তি এলাকার রাস্তাঘাট, ড্রেন, ল্যাট্রিনসহ শিক্ষার মান স¤প্রসারণ করার দিক নির্দেশনাও এ বাজেটে রয়েঝে।
বাজেট ঘোষণা কালে সিটি মেয়র বলেন নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে কেসিসি অত্যন্ত আন্তরিক। জলাবদ্ধতা নিরসন ও রাস্তাঘাট উন্নয়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১৪শ ৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসনে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ রূপসা নদী ও ভৈরব নদের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় জোয়ারে পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। ফলে জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে পানি নিস্কাশনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য দ্রæত এ নদী দুটি খনন করা জরুরী হয়ে পড়েছে বলে সিটি মেয়র মতামত ব্যক্ত করেন।
উন্নয়ন কাজের গুনগত মানের প্রশ্নে কারো সাথে আপোষ নেই মন্তব্য করে সিটি মেয়র বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা খুলনার উন্নয়নে যে বরাদ্দ দিয়েছেন তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা মেরামত ও উন্নয়ন প্রকল্প, খুলনা মহানগরীতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড প্রকল্প, নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পসহ চলমান সকল প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এ সকল প্রকল্পের পাশাপাশি নতুন বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি উন্নয়নমূলক কর্মসূচির পাশাপাশি নিজস্ব আয় বৃদ্ধির খাত সম্প্রসারণ করা হবে বলে উল্লেখ করেন।
কেসিসি’র অর্থ ও সংস্থাপন স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শেখ মো: গাউসুল আজম-এর সভাপতিত্বে বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে জুম এ্যাপের মাধ্যমে বক্তৃতা করেন খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাউদ্দিন জুয়েল।
সম্মানিত অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, খুলনা মহানগরীকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এজন্য আমরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করছি। শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ খুলনায় বেশ কিছু মেঘা প্রকল্প বামস্তবায়নে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, খুলনার উন্নয়নে সকলে নিবেদিত থাকলে অচিরেই এটি একটি সমৃদ্ধ নগরীতে পরিণত হবে। সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল আরো বলেন, করোনাকালে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রায় ৩০ হাজার লোককে সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। এভাবে আজীবন তিনি খুলনার মানুষের পাশে থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অন্যান্যের মধ্যে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা, কেসিসি’র প্যানেল মেয়র মোঃ আমিনুল ইসলাম মুন্না, মো: আলী আকবর টিপু, মেমরী সুফিয়া রহমান শুনু, খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজা, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ মোশাররফ হোসেন, সধারণ সম্পাদক শেখ আশরাফ উজ জামান, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মুন্সী মো: মাহবুব আলম সোহাগ, খুলনা উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি শরীফ শফিকুল হামিদ চন্দন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ খুলনা মহানগরী শাখার সভাপতি বীরেন্দ্র নাথ ঘোষসহ কেসিসি’র কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা, সাংবাদিক, ১৪ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ এবং নগরীর গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কেসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) পলাশ কান্তি বালা।