কেনোশা সফরে গিয়ে পুলিশের পক্ষ নিলেন ট্রাম্প

0
226

খুলনাটাইমস বিদেশ : শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্যের গুলিতে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অশান্ত হয়ে ওঠা উইসকিনসনের কেনোশা শহরে গিয়ে বর্ণবাদী বিদ্বেষ নিরসনের ডাক না দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর ভ‚মিকার প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্টকে কেনোশা থেকে দূরে থাকতে অনেকে আহŸান জানালেও মঙ্গলবার তিনি শহরটি সফর করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র যখন বর্ণবাদ ও পুলিশি নির্যাতনের মতো ইস্যুগুলোতে দ্বিধাবিভক্ত, ট্রাম্প তখন শ্বেতাঙ্গ সমর্থকদের ঘাঁটিগুলোতে গিয়ে ‘আইন ও শৃঙ্খলার’ বার্তা নিয়ে হাজির হচ্ছেন। বিভিন্ন জনমত জরিপেও ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্ব›দ্বী জো বাইডেনের সঙ্গে তার ব্যবধান কমতে দেখা যাচ্ছে। সা¤প্রতিক বিভিন্ন বক্তৃতায় ট্রাম্পকে পুলিশের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের কারণে সৃষ্ট বর্ণবাদী ক্ষত নিয়ে খুব একটা কথা বলতে দেখা যায়নি; করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে যুক্তরাষ্ট্রে যে এক লাখ ৮০ হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছে, সে প্রসঙ্গও তিনি এড়িয়ে চলছেন।৭৪ বছর বয়সী এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাট মেয়র শাসিত যেসব শহরে অস্থিরতা চলছে সেখানে স্থানীয় কর্মকর্তাদের আপত্তি সত্তে¡ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর আরও সদস্য পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন। “এক পর্যায়ে, এটা আমাদেরই করতে হবে,” বলেছেন তিনি। কেনোশা সফরে গেলেও ট্রাম্প পুলিশের গুলিতে আহত জেইকব বেøক বা তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেননি। পিঠে, কোমরে ৭টি গুলি খাওয়া বেøক চিরতরে পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষ্ণাঙ্গ এ যুবকের পরিবারের কারও সঙ্গে দেখা না করলেও ট্রাম্পের সঙ্গে বেøকের মায়ের দুই যাজকের দেখা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এদিন কেনোশা সফরে এসে শহরটি পুনর্গঠন এবং উইসকনসিনের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে আরও অর্থ ছাড় করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অন্যতম ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ উইসকনসিনে গতবার ট্রাম্প সামান্য ব্যবধানে হিলারিকে হারিয়েছিলেন। পুনর্নির্বাচিত হতে এই অঙ্গরাজ্যে জয়লাভ করাটা তার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেনোশা সফরে ট্রাম্প পুড়ে যাওয়া একটি আসবাবপত্রের দোকান পরিদর্শন করেন। সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এ দোকানটিকে পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অস্থায়ী কমান্ড সেন্টারেও পরিণত করা হয়েছিল। ট্রাম্প সেখানে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনীর সদস্যদের ভ‚য়সী প্রশংসা করেন। বেøকের আহত হওয়াকে কেন্দ্র করে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের পর কয়েক রাত ধরে চলা লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও গোলাগুলি থামাতে স্থানীয় পুলিশকে সহায়তা করতে ওই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছিল। “এগুলো মোটেও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ছিল না, ছিল অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস,” একটি হাই স্কুলের জিমে স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের অনেকের অভিযোগ, সহিংস আন্দোলনকারীদের বেশিরভাগই শ্বেতাঙ্গ, তারাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ছিনতাই করে সম্পদ ধ্বংস, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো তৎপরতার দিকে নিয়ে গেছে। অনেকে আবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ব্যর্থতারও কড়া সমালোচনা করছেন; বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজের ধরন নিয়ে নতুন করে চিন্তা করা। “রাজনৈতিক এ সহিংসতা বন্ধ করতে হলে, আমাদেরকে অবশ্যই উগ্রবাদী মতাদর্শেরও মোকাবেলা করতে হবে। পুলিশবিরোধী যে ধরনের আলোচনা আছে তার নিন্দা করতে হবে আমাদের,” বলেছেন ট্রাম্প। তিনি সাহায্য না করলে কেনোশা ‘হয়তো মাটির সঙ্গে মিশে যেতো’ বলেও মন্তব্য করেছেন এ রিপাবলিকান। ট্রাম্পের এ সফরে খানিকটা সহমর্মিতার মিশেলও ছিল। পদ্ধতিগত বর্ণবাদ ও পুলিশের মধ্যে থাকা সমস্যা নিয়ে প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গেলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট পুলিশের গুলিতে বেøকের আহত হওয়ার ঘটনাকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, “যিনিই এ ধরনের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যান, তার জন্য খারাপ লাগে।” বেøকের মায়ের দুই যাজকের সঙ্গে দেখা হওয়ায় সম্মানিত বোধ করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর উত্তেজনা আরও উসকে দিতে পারে এ শঙ্কায় ট্রাম্পকে কেনোশায় না যেতে শহরটির ডেমোক্র্যাটিক মেয়র ও উইসকনসিনের ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর দুজনই অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ট্রাম্প তাদের অনুরোধ তো রক্ষা করেনইনি, উল্টো কেনোশা সফরে এসে শহরটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে ১০ লাখ ডলার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৪০ লাখ ডলার এবং উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যজুড়ে জননিরাপত্তায় ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন।