কেএমপি’র খানজাহান আলী থানা পুলিশ কর্তৃক ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ৮

0
132

নিহতের স্ত্রীকে সেলাই মেশিন ও নগদ অর্থ প্রদান
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কেএমপি’র খানজাহান আলী থানা পুলিশ কর্তৃক ক্লু-লেস হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ হত্যাকান্ডে জড়িত ৮ জন আসামী গ্রেফতার এবং ভিকটিমের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ইজিবাইকের অংশ বিশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: মোজাম্মেল হক, বিপিএম-বার, পিপিএম-সেবা বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে কেএমপি সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে এই তথ্য জানান। তখন কেএমপি’র পক্ষ থেকে নিহতের স্ত্রীকে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সেলাই মেশিন ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।

কেএমপি’র পক্ষ থেকে নিহতের স্ত্রীকে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সেলাই মেশিন ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়

গ্রেফতারকৃত ৮ জন আসামী হচ্ছে, খুলনা জেলার রূফসা থানার কর্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ও পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থানার চারাখালী গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেন মকবুলের ছেলে মনির হাওলাদার @ মনির (৩২), খানাজাহান আলী থানাধীন আটরা পশ্চিমপাড়ার মৃত আব্দুল গনির ছেলে মোঃ রনি শেখ (৩৬), ফুলতলা থানাধীন পয়গ্রাম হাফরাস্তা নিবাসী মোহাম্মদ শেখের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৮), ফুলতলা থানাধীন পয়গ্রাম নিবাসী আলমাস হোসেনের ছেলে ফোরকান হোসেন @ তোহান (২৯) ও মৃত লতিফ লস্করের ছেলে রিয়াদ লস্কর @ রিয়াদ (২৩), খানজাহান আলী থানার আটরা মীর পাড়ার মৃত: আহসান আলী মীর এর ছেলে সৈয়দ মোহন হোসেন @ মোহন (৩৭), দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা সেনপাড়া নিবাসী মোঃ আবুল কাশেম এর ছেলে মোঃ জাহিদুল ইসলাম @ জাহিদ (৩৮) এবং দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা জিয়া কলেজ রোড, মুন্সিপাড়ার মোঃ আব্দুর মজিদ কাজীর ছেলে মোঃ আলামিন কাজী @ আলামিন (৩৫)। সিডিএমএস পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত ৮ জন আসামী

জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একদিন আগে রাত অনুমান ৯টার সময় খানজাহান আলী থানাধীন আটরা পশ্চিম পাড়া নতুন রেল লাইনের পূর্ব পাশে জনৈক সাইফুল ইসলামের সরিষা ক্ষেত হইতে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় খানজাহান আলী থানা পুলিশ অজ্ঞাত একটি মৃত দেহ উদ্ধার করে। অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে খানজাহান আলী থানা পুলিশ লাশটির সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি লোকমুখে শুনে রুপসা মাস্টার পাড়া এলাকা থেকে রাণী বেগম নামক একজন মহিলা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসে অজ্ঞাতনামা লাশটি তার স্বামী মোঃ আবুল কালাম আজাদ (৫৬) বলে সনাক্ত করে। পরবর্তীতে ভিকটিম মোঃ আবুল কালাম আজাদ (৫৬)’র পরিচয় জানা যায় যে, সে ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানা এলাকার দত্তের পশুরি বুনিয়া নিবাসী মৃত ইসহাক মোল্লা ও কুলসুম বেগম দম্পতির ছেলে এবং খুলনা থানাধীন রুপসা মাষ্টারপাড়া, খেয়াউদ্দিন ডাক্তারের বাড়ীর ভাড়াটিয়া।
এই ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী রাণী বেগম খানজাহান আলী থানায় এসে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে এজাহার দায়ের করলে বাদীর এজাহারের ভিত্তিতে খানজাহান আলী থানার অফিসার ইনচার্জ মামলা নং-০২, তারিখ-০৮/০১/২০২৪, ধারা-৩০২/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড রুজু করে। পরবর্তীতে খানজাহান আলী থানার একটি চৌকস তদন্ত দলের নেতৃত্বে এই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ও পারিপার্শ্বিক পর্যালোচনায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামীদের গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য যে, এই মামলার মূল আসামী ভিকটিমের ইজিবাইকটি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ ভিকটিম মোঃ আবুল কালাম আজাদকে ফলো করে আসছিলো এবং অন্যান্য আসামীদের যোগসাজসে তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন অর্থাৎ ৫ জানুয়ারি ভিকটিমকে রুপসা ঘাট থেকে রিজার্ভ ভাড়া করে আটরা-আফিল গেট এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক অবস্থানরত অপরাপর আসামীরা ভিকটিমের ইজিবাইকে উঠে প্রধান আসামী মনির হাওলাদার তার স্ত্রীকে আনার কথা বলে মশিয়ালি নামক স্থানে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে আসামীরা বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে ইজিবাইক চালক ভিকটিম মোঃ আবুল কালাম আজাদকে থামায় এবং হঠাৎ তাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ী থেকে ফেলে দিয়ে অন্ধকারের ভিতর প্রধান আসামী মনির হাওলাদারসহ আসামী মোঃ রনি শেখ, জাহাঙ্গীর হোসেন, ফোরকান হোসেন @ তোহান, রিয়াদ লস্কর @ রিয়াদ ও সৈয়দ মোহন হোসেন @ মোহন মিলে এই হত্যাযজ্ঞে শামিল হয় এবং তোহান ও রিয়াদ মাফলার দিয়ে ভিকটিমের নাক-মুখে প্যাচ দেয় এবং রনি শেখ ও জাহাঙ্গীর হোসেন ভিকটিমের হাত ধরে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করে। তৎপরে মনির হাওলাদার ভিকটিমের শ্বাসরোধ করে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু নিশ্চিত করে হাত-পা বেঁধে সরিষা ক্ষেতে ফেলে দিয়ে ইজিবাইকটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এই ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি অন্য কোথাও বিক্রি করলেও ধরা পড়বে বিধায় ইজিবাইকটির যন্ত্রাংশ পার্ট পার্ট করে খুলে মালিক সেজে আসামী সৈয়দ মোহন হোসেন @ মোহন গ্রেফতারকৃত অন্য আসামী মোঃ জাহিদুল ইসলাম @ জাহিদ এর নিকট বিক্রি করে এবং পরবর্তীতে সে মোঃ আলামিন কাজী @ আলামিন এর নিকট ইজিবাইকটির যন্ত্রাংশ বিক্রয় করে।
অত্র মামলাটির তদন্তকালে জানা যায় যে, মৃত আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘদিন যাবৎ অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। পরবর্তীতে সে ইজিবাইকটি ভাড়া নিয়ে চালিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চালাতো। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে সাধ্য অনুযায়ী মানবিক ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। সেই প্রেক্ষিতে কেএমপি’র পক্ষ থেকে নিহত ভিকটিমের স্ত্রী রাণী বেগমকে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য একটি সেলাই মেশিন ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সর্বদা তৎপর। আমরা বিগত কয়েক মাস থেকেই অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, জঙ্গী, মাদক ব্যবসায়ী, সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত আসামী, হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ও ভূমিদস্যুসহ সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তিশালী যারা নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে তাদের গ্রেফতারের জন্য সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি। গত আগস্ট ২০২৩ খ্রি: থেকে ইতোমধ্যেই আমরা ১৮ টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৩২ রাউন্ড গুলি, ২৫ টি চোরাই মোটরসাইকেল, ককটেল, গান পাউডার, স্বল্প সময়ে ক্লু-লেস হত্যা মমলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ আসামী গ্রেফতার, চোরাই স্বর্ণালঙ্কার ও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।