কাজে লাগছে না ডাকঘরের জন্য কেনা কোটি কোটি টাকার পিওএস মেশিন

0
465

খুলনাটাইমস এক্সক্লুসিভ: ডাকঘরের জন্য কোটি কোটি টাকায় কেনা পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) বা পওস মেশিন কোনো কাজেই লাগছে না। সরকার ডাক বিভাগে গ্রাহক সেবা আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে ‘ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ প্রকল্প শুরু করে। ওই প্রকল্পের ব্যয় ৫শ’ ৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রথমে ৫ হাজার ৫শ’ ৬টি ডাক ঘরকে ই-পোস্ট অফিসে রূপান্তর করা হয়। কেনা হয় প্রায় ২০ হাজার পিস পওস মেশিন। এ মেশিনের মাধ্যমে ক্যাশ কার্ড ক্যাশ ইন-ক্যাশ আউট হয়। প্রতিটি পওস মেশিনের খুচরা বাজার মূল্য ৬/৭ হাজার টাকা। কিন্তু ডাক বিভাগ প্রকল্পের আওতায় একেকটি মেশিন দরপত্রের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকার বেশি দরে ৭০ কোটি টাকায় পওস মেশিন কেনা হয়েছে। বিগত ২০১৭ সালে ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো পওস মেশিনগুলোর প্যাকেটই খোলা হয়নি। শাখা পোস্ট অফিসগুলোতে মেশিনগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ধুলোবালিতে মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। পোস্ট অফিসগুলোতে সরবরাহের গত তিন বছরে একবারের জন্যও ব্যবহৃত হয়নি ওসব পওস মেশিন। ডাক বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নানা জটিলতায় কেউ আর ক্যাশ কার্ড ব্যবহারই করছেন না। যাও দু’চার জন্য ক্যাশকার্ডের মাধ্যমে বয়স্কভাতা তুলতেন- তারাও এখন আর ডাক বিভাগ প্রবর্তিত ক্যাশ কার্ড ব্যবহার করছেন না। ফলে ক্যাশ কার্ডের অ্যাক্টিভ গ্রহিতা খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। তাছাড়া ‘ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ প্রকল্পের আওতাভুক্ত দেশের প্রায় সব পোস্ট অফিসেই পওস মেশিন ব্যবহার হচ্ছে না। অথচ ই-পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বয়স্কভাতা প্রদানের কথা বলা হয়েছিল। ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’র প্রকল্পের সুবিধাটি নিতে হলে গ্রাহককে ৪৫ টাকা ব্যয়ে একটি আবেদনপত্র পূরণ করে ‘পোস্টাল ক্যাশ কার্ড’ কিনতে হয়। পরে আর কোনো খরচ নেই। তবে প্রতিটি লেনদেনের ৫ থেকে ১০ টাকা সেবা মাশুল নেয়া হয়। ই-ক্যাশ কার্ডে টাকা উত্তোলন এবং জমা দেয়া যায়। পোস্টাল ক্যাশকার্ডধারী গ্রাহকদের সেবা দিতে প্রয়োজন ‘পয়েন্ট অব সেল’ বা পিওএস (পওস)। এ যন্ত্রটি ডাক বিভাগের মূল সার্ভারের সঙ্গে সম্পর্কিত। পওস মেশিনের মাধ্যমে ক্যাশ কার্ড ক্যাশ ইন-ক্যাশ আউট হয়। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২০ হাজার পিস পওস মেশিন কেনা হয়।
সূত্র জানায়, ডাক বিভাগ অফিসিয়ালি দাবি করে আসছে যে, তাদের প্রবর্তিত পোস্টাল ক্যাশ কার্ডের সংখ্যা ৫০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। ক্যাশ কার্ড থেকে আয়-রোজগারও শুরু হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। ক্যাশ কার্ডের গ্রাহক দিনকে দিন হ্রাস পাচ্ছে। কিউ ক্যাশের এটিএম বুথে কিছু পোস্টাল কার্ড ব্যবহৃত হলেও পোস্ট অফিসে গ্রাহকরা আসেন না। মূলত কোনো গ্রাহক সেবা নয়, প্রকল্পের অর্থ লোপাট করার উদ্দেশ্যেই পোস্টাল কার্ড গ্রাহকের সুবিধার কথা বলে ২০ হাজার পওস মেশিন কেনা হয়। বাস্তবে কোনো শাখা পোস্ট অফিসেই পোস্টাল কার্ডের ২০ জন গ্রাহকও সক্রিয় নেই। অভিযোগ রয়েছে, ই-সেন্টারে পোস্টাল কার্ডের কোনো সেবাই দিতে পারছে না ডাক বিভাগ। বরং সেবা প্রদানের নামে কোটি কোটি টাকার অর্থ লোপাট হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ই-সেন্টার প্রকল্পের পওস মেশিন নিছক একটি অপচয় প্রমাণিত হলেও ‘মেইল প্রসেসিং প্রজেক্ট’র আওতায় আরো ২৫ হাজার মেশিন কেনা হচ্ছে। ডাক বিভাগ সংশ্লিষ্টদের মতে, কোটি কোটি টাকার কমিশন বাগিয়ে নেয়ার জন্যই তা করা হচ্ছে। কারণ ইতিপূর্বে কেনা পওস মেশিনগুলো যেভাবে রিসিভ করা হয়েছিল সেভাবেই পড়ে আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভেতরে কি আছে তা প্যাকেট খুলেও দেখেনি। আক্ষরিক অর্থে কোনো কাজেই লাগেনি ডাক বিভাগের ‘পোস্টাল ক্যাশ কার্ড’ ক্যাশ-ইন-ক্যাশ আউট মেশিন-‘পয়েন্ট অব সেল’ (পিওএস)।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত স্বার্থে এসব প্রকল্প গ্রহণ করছেন। কথিত এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি পাতানো টেন্ডার করেন। গোপন সমঝোতায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্যে যন্ত্রপাতি কেনেন। হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস জানান, দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন-এ কথা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সব সেক্টরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। অনিয়ম কিছু ঘটে থাকলে নিশ্চয়ই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।