কাঁচামরিচের কেজি ৩শ, সবজির দামও চড়া

0
168

টাইমস ডেস্ক:
চার মাসের বেশি সময় ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচের দাম নতুন করে আরও বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ভালো মানের ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। অর্থাৎ এক কেজি কাঁচামরিচের দাম পড়ছে ৩২০ টাকা। অবশ্য আধা কেজি বা এক কেজি নিলে দাম কিছুটা কম পড়ছে। ভালোমানের আধা কেজি কাঁচামরিচ ১৫০ টাকা এবং এক কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন কিছুকিছু ব্যবসায়ী। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর এবং খিলগাঁওয়ের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। নতুন করে কাঁচামরিচের দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যায় কাঁচামরিচের খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। যে কারণে জুলাই মাস থেকেই কাঁচামরিচের দাম চড়া। এখন বৃষ্টি কাঁচামরিচের খেতের আরেক দফা ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে দাম নতুন করে বেড়ে গেছে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভালো মানের কাঁচামরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। আর নিম্ন মানের (কিছু অংশ পচা অথবা বেশিরভাগ লাল হয়ে যাওয়া) কাঁচামরিচের পোয়া বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। শান্তিনগর বাজারে ৮০ টাকা পোয়া কাঁচামরিচ বিক্রি করা মো. জুয়েল বলেন, আড়তে ফ্রেশ মরিচ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। বেশিরভাগ মরিচের বোটা পচা। কয়েকদিন ধরে এই অবস্থা। এ কারণেই মরিচের দাম বাড়তি। তিনি বলেন, গত শুক্রবার যে দামে মরিচ কিনেছিলাম, আজ (গতকাল শুক্রবার) কেজিতে তার থেকে ১০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। এই ৮০ টাকা পোয়া বিক্রি করলে লাভ তেমন হবে না। সকালে প্রথমদিকে কেউ কেউ কাঁচামরিচের পোয়া ১০০ টাকাও বিক্রি করেছে। খিলগাঁও তালতলায় ৮০ টাকা পোয়া কাঁচামরিচ বিক্রি করা নুরুন্নবী মিয়া বলেন, গত সপ্তাহে এক পোয়া কাঁচামরিচ ৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ যে দামে কিনতে হয়েছে তাতে ৮০ টাকার নিচে পোয়া বিক্রি করা সম্ভব না। তবে আধা কেজি নিলে ১৫০ টাকা এবং এক কেজি নিলে ৩০০ টাকা রাখা যাবে। মালিবাগ হাজীপাড়া বৌ-বাজারে ভালো-নষ্ট মিশিয়ে কাঁচামরিচের পোয়া ৬০ টাকা বিক্রি করা আশরাফ আলী বলেন, দুদিন ধরে কাঁচামরিচের দাম বেশি। বুধবারও এক পোয়া কাঁচামরিচ ৪০ টাকা বিক্রি করেছি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার থেকে ৬০ টাকা পোয়া বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ এ মরিচের মান আগের মরিচের থেকে খারাপ। তিনি বলেন, দাম বেশি হওয়ায় পরও আড়তে ঠিকমতো কাঁচামরিচ পাওয়া যাচ্ছে না। আড়ত থেকে মরিচ বেছে নেওয়ারও সুযোগ নেই। একপাল্লা মরিচে প্রায় আধা কেজি পচা গলা থাকছে। আড়ত থেকে আনার পর এসব মরিচ বেছে ফেলে দিতে হচ্ছে। কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান সরদার বলেন, কাঁচামরিচের খেত সব শেষ। বন্যায় কাঁচামরিচের গাছ পচে যাওয়ার পর এখন বৃষ্টিতে আবার কাঁচামরিচের খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মূলত এ কারণেই কাঁচামরিচের দাম বেশি। তিনি বলেন, আড়তে আসার আগেই ট্রাকে অনেক মরিচ পচে যাচ্ছে। খেত থেকেও তেমন মরিচ উঠছে না। এরপরও বাজারে কাঁচামরিচ পাওয়া যাচ্ছে এটাই বড় কথা। আমাদের ধারণা সামনে কাঁচামরিচের দাম আরও বাড়বে। কারওয়ানবাজার থেকে কাঁচামরিচ কেনা লিটন নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমি প্রতি সপ্তাহে এখান থেকে বাজার করি। এলাকার বাজার থেকে এখানে কম দামে কেনা যায়। আজ মরিচের দাম শুনতেই ব্যবসায়ী বলেন- এক পোয়া ৭০ টাকা। পরিচিত ব্যবসায়ী, তাই প্রথমে মনে করেছিলাম মজা করছে। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম আসলেই মরিচের এত দাম। কিছুটা অবাক হয়েছি। কারণ গত সপ্তাহেই ৪০ টাকা পোয়া কিনেছি। সপ্তাহ ঘুরতেই দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বাজারে সবকিছুর দামে আগুন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে দেশটা যেন মগের মুল্লুক, বলেন লিটন। খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা জাফর বলেন, কিছুদিন আগে যে কাঁচামরিচ ৪০ টাকা পোয়া কিনেছি, আজ সেই কাঁচামরিচের দাম চাওয়া হলো ৮০ টাকা। কয়েক দোকান ঘুরে ৭০ টাকা দিয়ে এক পোয়া কাঁচামরিচ কিনেছি। তিনি বলেন, আমার হিসেবে কাঁচামরিচের পোয়া ৪০ টাকা হওয়ায় বেশি, সেখানে ৮০ টাকা পোয়া কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না। সংশ্লিষ্টের উচিত দ্রুত বাজার মনিটরিংয়ে নামা। কারণ শুধু কাঁচামরিচ না এখন সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক।
চড়া সবজির বাজার: দীর্ঘদিন ধরেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। ছয়টি সবজির কেজি ১০০ টাকা ছুঁয়েছে। বাকি সবজির বেশিরভাগের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার কাছাকাছি। সবজির এমন চড়া বাজারে নতুন করে দাম বেড়েছে ডিম, আলু ও কাঁচা মরিচের। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে বেড়েছে ১২০ টাকা পর্যন্ত। ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ৫ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আলুর দাম বেড়ে হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ১১০ থেকে ১১৫ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিমের দাম বেড়ে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর ৪০ থেকে ৫০ টাকা পোয়া (২৫০) বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে কাঁচা মরিচের দাম ১২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এদিকে শিম, পাকা টমেটো, গাজর, বেগুন, বরবটির সঙ্গে নতুন করে ১০০ টাকা কেজির তালিকায় নাম লিখিয়েছে উস্তা। এর মধ্যে পাকা টমেটো গত কয়েক মাসের মতো এখনো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা এবং গাজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। আর উস্তের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। বরবটির কেজি গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা। বেগুনও গত সপ্তাহের মতো ৮০ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শুধু এই ছয় সবজি নয়, বাজারে অন্য সবজিগুলোও স্বস্তি দিচ্ছে না। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এক হালি কাঁচকলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ঝিঙা, কাঁকরোল, ধুন্দুলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। বাজারে নতুন আসা ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে মুলা ও পেঁপে। এর মধ্যে মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। এদিকে স্বস্তি মিলছে না পেঁয়াজের দামেও। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আমদানি করা বড় আকারের ভারতীয় পেঁয়াজের কেজির জন্যেও গুনতে হচ্ছে ৮০ টাকা। গত মাসে ভারত রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই এমন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারে আসা আবদুর রহমান বলেন, বাজারে এসে মোটেও শান্তি পাই না। সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক। ১০০ টাকার সবজি দিয়ে এক বেলাও হয় না। সবজির এত দাম আমার ৫০ বছরের জীবনে আর দেখিনি। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই সবজির দাম চড়া। এর মধ্যেই তেল, চিনি, আলু, পেঁয়াজ, ডিমের দাম বেড়ে গেল। আগে কখনো পুরাতন আলুর কেজি ৪০ টাকা কিনে খাইনি। এখন পুরাতন আলুর কেজি ৪৫ টাকা কিনে খেতে হচ্ছে। এক পোয়া কাঁচা মরিচ কিনতে হচ্ছে ৭০ টাকা দিয়ে। ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। সবকিছুর দাম এমন হলে আমরা চলবো কীভাবে? রামপুরার বাসিন্দা তাবারুল ইসলাম বলেন, বাজারে গেলেই শুনি কোনো না কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে। একের পর একটা জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। কিন্তু আমাদের আয় বাড়ার বদলে উল্টো কমেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে আমাদের পক্ষে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. রাসেল বলেন, বাজারে আগের তুলনায় শিম, গাজরের সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু অন্যান্য সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম। এ কারণে শীতের আগাম সবজি আসার পরও দাম কমছে না। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে শীতের সবজি ভরপুর না আশা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই।