একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও একজন সফল অধ্যক্ষ

0
170

মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে সরকারি সিরাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ এলাকার একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।ইতোমধ্যে একটি আদর্শ ও ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠানের রূপ নিয়েছে এটি। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন- এই সাফল্য এবং ধারাবাহিকতা ধরে সামনের দিকে নিয়ে যেতে অধ্যক্ষ নীতিশ বিশ্বাসের ত্যাগ ও অক্লান্ত পরিশ্রম । তাঁর বিচক্ষণতা ও দক্ষ পরিচালনায় প্রতিষ্ঠানের সফলতার সুফল ভোগ করছে এলাকাবাসী।
দেশের প্রায় সর্ব দক্ষিণের , অনগ্রসর পশ্চাদপদ এ এলাকায় শিক্ষাবঞ্চিত ও স্বল্প আয়ের অভিভাবকের ছেলে মেয়েদের শিক্ষাদানের লক্ষ্যে ১৯৬৮ সালে সিরাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ নামে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তৎকালীন জনপ্রতিনিধি, কতিপয় শিক্ষাবান্ধব পরিবার ও ব্যক্তির উদ্যোগে। এর প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আলহাজ্ব আব্দুল খালেক তালুকদার। তার পিতা সিরাজ উদ্দিনের নামেই এ কলেজটির নামকরণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়ে সুনামের সাথেই চলে এ কলেজটি। ফলে উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৮ সালে বর্তমান সরকার এটিকে সরকারিকরণের ঘোষণা দেয়। মাঝে কলেজটির খানিক ছন্দপতন ঘটে।
বিশেষ করে কলেজের দীর্ঘ সময়ের অধ্যক্ষ কাজী নুর উদ্দিন অবসর গ্রহণের পর থেকে কলেজে অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে সমস্যা দেখা দেয়। যাহোক, প্রফেসর নীতিশ বিশ্বাস যখন যোগদান করেন তখন এ প্রতিষ্ঠান ছিল বেহাল ও জরাজীর্ণ অবস্থায়।
২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বরে তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকে আবকাঠামো, শিক্ষার মানসহ সার্বিক পরিবেশের উন্নতি হয় এখানে। কলেজের অবকাঠামো, শোভাবর্ধন বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি প্রশাসনিক ও আর্থিক অর্থাৎ হিসাব শাখায় নানা সংস্কারমূলক উদ্যোগ, একাডেমিক পর্যায়ে উন্নতির বিভিন্ন উদ্যোগ এবং এগুলোর গতিশীলতা বৃদ্ধি , কলেজ ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ ও অপরাধমূলক কর্মকান্ড বন্ধে তৎপরতা, কলেজে শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি কলেজের অনার্স বিভাগগুলোর পূর্বের নড়বড়ে আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে সেখানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। জাতীয় দিবসগুলো যথাযথ ও নিয়মিত পালন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ক্রীড়া, সাহিত্য- সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি যথাযথ ও নিয়মিত পালনের প্রসংশনীয় প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তাদের মধ্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা ও পুরস্কার প্রদান কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তিনি সব পক্ষকে উৎসাহিত করেছেন প্রতিনিয়ত।
কলেজ সীমানা, পুকুর, মাঠ সহ কলেজের অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংরক্ষণে তিনি যথাযথ সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছেন যা সচেতন সবার কাছে সবিশেষ প্রশংসা কুডিয়েছে। বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে তিনি ছাত্রাবাস, ছাত্রীবাস ও শিক্ষক কর্মচারীদের আবাসিকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।
অধ্যক্ষ প্রফেসর নীতিশ বিশ্বাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে একাদশ দ্বাদশ শ্রেণি ( সাধারণ ও কারিগরি শাখা), ৪ টি অনার্স বিভাগ ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি ও স্নাতক প্রোগ্রামের ৩ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে প্রায় ৫০ জন অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী, সুপরিসর ক্লাসরুম, খেলার মাঠ।
বৈশ্বিক মহামারির কারণে সৃষ্ট লকডাউনে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রায় শিক্ষা-বিমুখ হয়ে পড়লেও অধ্যক্ষের সার্বক্ষণিক তদারকিতে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। তারা নিয়মিত অনলাইন ক্লাস ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া গরীব, অসহায় শিক্ষার্থী যেন ঝরে না পড়ে সেজন্য অভিভাবকদের সহযোগিতার মাধ্যমে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চলমান রাখেন। প্রতিষ্ঠানে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী স্কুল-কলেজ খোলার পর এ মহবিদ্যালয়ে শতভাগ শিক্ষার্থীদের উপস্থিত করতে চেষ্টা করেছেন অধ্যক্ষ নীতিশ বিশ্বাস। কলেজের রোভার স্কাউটস, রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট এবং কলেজ মসজিদের কার্যক্রমের উন্নয়নে ও এগুলোর গতিশীলতা আনতে তিনি উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
আসছে সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখে আধুনিক সিরাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ গড়ার কারিগর অধ্যক্ষ প্রফেসর নীতিশ বিশ্বাস অবসর গ্রহণ করবেন। ইতোমধ্যে কলেজ শিক্ষক পরিষদ ও অন্যান্য গোষ্ঠীর উদ্যোগে পন্ডিত এ ব্যক্তিত্বকে বিদায় সংবর্ধনা দেবার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সিরাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজে দায়িত্বরত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা বলেন, কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী ও কুচক্রী ব্যক্তি এ মহবিদ্যালয়ের ধারাবাহিক সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে স্যারের সুনাম নষ্ট করার জন্য বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র লিপ্ত হয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
অধ্যক্ষ প্রফেসর নীতিশ বিশ্বাস বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এ কলেজের দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী দ্বারা এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা দান করা, সততা, শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার উপর গুরুত্ব প্রদান করে আমরা শিক্ষার্থীকে সৎ, মেধাবী ও আধুনিক জ্ঞানের অধিকারী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়েছি। কেননা আমি বিশ্বাস করি যে, কেবলমাত্র সুশিক্ষাই পারে কোনো ব্যক্তির জীবন ধারার পরিবর্তন করতে।
তিনি বলেন, এ কলেজ পরিচালনায় আমি স্থানীয় মাননীয় সংসদ সদস্য এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন, পৌরসভার মেয়র এ্যাড. মনিরুল হক তালুকদার মহোদয় সহ স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় জনসাধারণ, অভিভাবকগণ, কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল, টিচার্স কাউন্সিল সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও ছাত্র নেতৃবৃন্দের উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা ও ভালোবাসা পেয়েছি। সবাই সঙ্গে থাকাতে আমি এ পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছি। আমি আমার প্রত্যাশা অনুযায়ী সব করতে পেরেছি তা বলবো না। আরও অনেক কিছু করার ছিল। কিন্তু আমার এখানে প্রায় ৪ বছেরর কর্ম জীবনের ২ বছর চলে যায় বৈশ্বিক মহামারি করোনা প্রাদুর্ভাবের জন্য। এই মহামারির মধ্যেও সকলের সহযোগিতা নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার আমি চেষ্টা করেছি। তাই আমি সবার কাছেই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আশাকরি আমার পরে যাঁরা এ দায়িত্বে আসবেন তাঁরা
আত্মমর্যাদা বোধসম্পন্ন, সৎ, মেধাবী ও নিয়ত পরিবর্তনশীল বিশ্বের আধুনিকতম জ্ঞানের অধিকারী মানুষ তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবেন। আমি আরও আশা করি, সকলের সহযোগিতা ও ভালোবাসায় সিরাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ আগামী দিনগুলোতে আরও সাফল্য বয়ে আনবে।