একজন সারমিন সালাম স্বীয় গুণে ধ্রুবতারার ন্যায় জ্বলছে

0
139

টাইমস প্রতিবেদক:
রাষ্ট্র ও সমাজের উন্নতি সাধনে সর্বক্ষেত্রেই নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আর তাইতো কবি বলেছেন,-“বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”। কালের বিবর্তনে অতীতের অবহেলিত জীবন থেকে নারী সমাজকে জাগ্রত ও তাদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে ও মানবের কল্যাণে বেগম রোকেয়া, নবাব ফয়জুন্নেছা মাদার তেরেসার ন্যায় বর্তমান সমাজে এমনই একজন মহীয়সী নারী যিনি সমাজ ও নারীর কল্যাণে কাজ করে চলেছেন। একাধারে তিনি একজন সফল স্ত্রী, সফল মা, সফল ব্যবসায়ী, সফল মানবসেবী ও দক্ষ সংগঠক। তিনি হলেন সাবেক কৃতি ফুটবলার ও খুলনা-৪ এমপি আব্দুস সালাম মুর্শেদী পতœী সারমিন সালাম। ছোটবেলায় তিনি যখন স্কুলে পড়তেন ঠিক তখন থেকে নিজের খাবার সহপাঠীদের খেতে দিতেন, কারো কলম-খাতা না থাকলে নিজেরটা দিয়ে দিতেন। এমনকি কারো পরীক্ষা ফি ও বেতনের টাকাও তিনি দিয়ে দিতেন। একবার তিনি যে রিকশায় বেশির ভাগ সময় চড়তেন সেই রিকশা চালকের ৮ বছর বয়সী মেয়ে বিলকিসের অসুখ হলে, চিকিৎসা করানোর টাকা পাচ্ছিল না। সেটা জানতে পেরে মা ফিরোজা সালেহিনে খুব দরকারি টাকা থেকে কিছু টাকা লুকিয়ে নিয়ে ঐ রিকশা চালকের মেয়ের চিকিৎসার জন্য দিয়েছিলেন। এজন্য মা’য়ের কাছে তাকে বকা শুনতে হয়েছিল। এভাবে মানুষকে ভালবাসা ও তাদের উপকার করা স্কুল জীবন থেকে শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে দেশবরেণ্য কৃতি ফুটবলার ও উদীয়মান ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ে হওয়ায় এ সকল কাজের পরিধি আরো বেড়ে যায়। স্বামীর সহযোগিতা, উৎসাহ আর অনুপ্রেরণায় তিনি মানব কল্যাণে নিজেকে মেলে ধরেন। একজন নারী যে জাতীয় জীবনে, সংসার জীবনে, নারীর কল্যাণে এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এনভয় গ্রæপ-এর অধীনে রয়েছে ১৩টির মত গার্মেন্টস শিল্প। যেখানে প্রায় বিশ হাজার নারী শ্রমিক কর্মরত আছেন। আর এই বিপুল সংখ্যক নারীদের দক্ষ করে তোলা এবং নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ তৈরিতে এনভয় গ্রæপের পরিচালক হিসেবে সারমিন সালামের অবদান অগ্রগণ্য। এনভয় গ্রæপের পরিচালক হিসেবে এখানে কর্মরত সকল শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করে চলেছেন। বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের জন্য, মাতৃত্বকালীন ছুটি, দুগ্ধদান মহিলাদের ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার, শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। যার ফলে এনভয় গ্রæপে সকল শ্রমিকদের কাছে তিনি মানবতার মা হিসেবে পরিচিত। জাতীয় জীবনের অর্জন বা কৃতিত্বের পিছনে নারী কর্মীবান্ধব সারমিন সালামের অবদান অনস্বীকার্য। তাইতো আদর্শ জননী রূপে একজন সফল নারী হয়ে মানবসেবী সারমিন সালাম স্বীয় কর্মে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে, কোটি মানুষের হৃদয়ে যুগযুগ নশ্বর পৃথিবীতে অবিনশ্বর হয়ে বহমান থাকবে। দেশবরেণ্য ব্যবসায়ী, অল্প সময়ের রাজনীতিতে জনদরদী জনপ্রতিনিধি ও সাবেক কৃতি ফুটবলার আব্দুস সালাম মূর্শেদী’র সহধর্মীণি সারমিন সালাম মানব সেবার ব্রত নিয়ে নিরলস ছুঁটে চলছেন। রূপে-গুনে অনিন্দ্য সুন্দর এ নারী তার সুন্দর মন, অমায়িক ব্যবহার ও সেবামূলক কর্মকান্ড দিয়ে আজ প্রশংসায় ভাসছেন। তিনি কারো কাছে প্রিয় ভাবী; কারো কাছে শ্রদ্ধেয় চাচিমা; তার মানব সেবায় আকৃষ্ট হয়ে কেউ কেউ তাকে ‘মানবতার মা’ স্বীকৃতি দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় ভাবেও মানবসেবা ও জনকল্যাণ মূলক কাজের জন্য খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে সারমিন সালাম কে মাদার অফ হিউম্যানিটি পুরস্কার দেওয়ার সুপারিশ পাঠানো হয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। এই সারমিন সালামের স্বামী সালাম মূর্শেদী একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও তিনি সাধারণ মানুষের সাথে চলাফেরা করেন, শুনেন তাদের সুখ দুঃখের কথা। দিন শেষে পরিবারকে সময় দেন। প্রিয় সহধর্মণীকে ভালবেসে ‘বুড়ি’ বলে ডাকেন। তাঁকে উৎসাহ দেন। এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেন। একজন নারী, মা ও মানবসেবী হিসেবে তার অবস্থান সমানুপাতিক গতিতে বিদ্যমান। সালাম মূর্শেদী ও সারমিন সালাম দাম্পতির এক মেয়ে ও দুই ছেলেসহ তিন সন্তানেক সফল করে গড়ে তোলার সিংহ ভাগ কৃতিত্বের দাবিদার মা সারমিন সালাম। একথা স্বামী সালাম মূর্শেদী বারবার অকপটে স্বীকার করেছেন। মা হয়ে সারমিন সালাম অনেক চড়াই উৎরাই করে সন্তানকে আদর, মমতা আর সোহাগে মানুষ করার চেষ্টা করে থাকেন। বড় মেয়ে শেহরিন সালাম ঐশী যখন লন্ডনের ব্যারিস্টারি পড়তেন তখন তিনি পরম মমতা মাখানো হস্তে মেয়ের পছন্দের খাবার রান্না করে প্রতি সপ্তাহে ছুঁটে যেতেন সুদূর লন্ডনে মেয়েকে দেখভাল করার জন্য। এভাবে সন্তানদের সঠিক পরিচালনা, উৎসাহ-অনুপ্রেরণা, আদর- ভালবাসা ও বন্ধুসুলভ আচরণ দিয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে আজ সফল মানুষরূপে গড়ে তুলেছেন। তাইতো শেহরিন সালাম ঐশী দেশের সর্বকনিষ্ঠ ব্যারিস্টারের তকমা অর্জন করতে পেরেছেন। একাধারে তিনি তরুন সফল উদ্যোক্তা হয়ে দেশের ব্যবসায়ী অঙ্গনে তিনি সুনাম অর্জন করেছেন। বড় ছেলে ইসমাম সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আজ সফল একজন ব্যবসায়ী। ছোট ছেলে আইয়ান সালামকে আমেরিকান ইন্টারন্যশনাল স্কুলে দশম গ্রেডে ও পবিত্র কোরআনের হাফেজ করে তুলছেন। বড় মেয়ে ব্যরিষ্টার শেহরিন সালাম ঐশী তার মা সম্পর্কে বলেন, আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর মা হলেন আমার মা। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সমস্ত অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া। নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা প্রাথমিক শিক্ষা এবং মা’র কাছ থেকে আমি বিভিন্ন কাজের উৎসাহ-অনুপ্রেরণা পেয়ে আজ আমি ঐশী হয়েছি। আমি যা হতে পেরেছি তা আমার মায়ের জন্য। মা আমার মনে করেন আমি সেরা হতে পেরেছি আর মা মনে করেন বলেই আমি আজ এখানে আসতে পেরেছি। আমরা তিন ভাই-বোন উচ্চ শিক্ষিত হয়ে ওয়েল ষ্টাবলিষ্ট হতে পেরেছি। তাই আমার মাকে নিয়ে কিছু বলতে হলে বলতে হয়, প্রথম স্পর্শ মা, প্রথম পাওয়া মা, প্রথম শব্দ মা, প্রথম দেখা মা, আমার স্বর্গ তুমি মা। একজন সফল নারী হিসেবে তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। জাতীয় জীবনে অর্থনীতি, রাজনীতির পাশাপাশি নিজের সংসার জীবন ঠিক রেখে, নারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও কল্যাণে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিশেষ অবদান রেখে চলছেন বহুগুণে গুণান্বিত এই নারী। স্বামীর পাশাপাশি সারমিন সালাম মানবিক অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলছেন। হাই প্রোফাইল দম্পতি হয়েও স্বামী সালাম মূর্শেদীর সাথে তার সুন্দর বোঝাপড়া। আর সেজন্য তাদের ভালবাসার বন্ধন অনেক অটুট। তাইতো সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব স্বামীর সহযোগী সবসময় তার কাজে সাহায্য করে চলছেন। আজ সালাম মূর্শেদীর অর্থ-বিত্ত, নাম, যশ-খ্যাতি তার পিছনে স্ত্রী সারমিন সালামের অবদান কল্পনাতীত। তাইতো কবির ভাষায় বলতে হয়, “কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পুরুষের তরবারী; প্রেরনা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষী নারী”। সারমিন সালাম ১৯৬৯ সালে ২২ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোঃ সালেহিন, মাতা ফিরোজা সালেহিন। তিনি শিক্ষা জীবনে ইডেন কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। সারমিন সালাম একজন সাহিত্য অনুরাগী। কবিতা পড়তে ও লিখতে তার ভীষণ ভাল লাগে। মানবসেবায় আর জনকল্যাণে তার জীবনের পুরো সময়টা একটা ধ্রæব জোতির ন্যায় আলো ছড়াবে বলে মনে করেন অনেকে। তিনি তার নামে বা বেনামে অনেক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ভাবে মানুষের কল্যাণে নিরালশভাবে কাজ করে চলছেন। কয়েকটি সামাজিক সাংস্কৃতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণে অত্যন্ত দক্ষ ও সাহসি ভূমিকা পালন করেছেন। যেমন, সালাম মূর্শেদী সেবা সংঘ, সালাম মূর্শেদী বøাড ব্যাংক, সারমিন সালাম অক্সিজেন ব্যাংক, সারমিন সালাম মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ও পূর্ণবাসন কেন্দ্র। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০জন চক্ষু রোগী এবং চার জন ক্যান্সার রোগীসহ বিভিন্ন রোগের কারনে অসুস্থ্য প্রায় শতাধিক মানুষকে নিজ অর্থে চিকিৎসা দেওয়া হয়। দুই শতাধিক দুঃস্থ মহিলাদের বুনিয়াদ সুদৃঢ় করার জন্য ছাগল ও শতাধিক মহিলাকে সেলাই মেশিন প্রদান করেছেন। বহু অসহায় কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা-মাতার বিবাহযোগ্য কন্যাদের নিজ অর্থে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। করোনায় বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘ ঘোষিত রূপসার ‘রিয়েল লাইভ আঁখি’কে তার স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রায় ১২ লক্ষাধিক টাকার গার্মেন্টস স্থাপনের মেশিনারিজ দিয়েছেন। এবং খুলনার তিন উপজেলা রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়ায় সাংবাদকিসহ গরীব, দুঃস্থ-অসহায় মানুষের বিপদে আপদে তিনি সব সময় পাশে দাড়ান।