আমিনুলের স্বপ্নময় সময় নির্ঘুম রাতের পর

0
374

খুলনাটাইমস স্পোর্টস: মিরপুরে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের পর একটি ফোনকল পেলেন আমিনুল ইসলাম। যা শুনলেন, তারপর উত্তেজনায় আর ঘুম হলো না রাতে! পরদিন তার ঠিকানা হলো বাংলাদেশের টিম হোটেল। স্বপ্নের নায়করা তখন তার সতীর্থ। তাদের সঙ্গেই নামলেন মাঠে। পারফরম্যান্সও হলো নজর কাড়া। অভিষেক ম্যাচে হাতের চোট যদিও একটু ছন্দপতন ঘটিয়েছে। তবু কয়েক দিন ধরে যেন স্বপ্নের ঘোরে আছেন আমিনুল।
এই কয়েকদিন শুধু নয়, গত কয়েক মাসে আমিনুল এগিয়ে গেছেন যেন চলন্ত সিঁড়িতে চেপে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ভালো করেছিলেন ব্যাটিংয়ে। সেটি দিয়েই জায়গা হয়েছিল হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডে। সেখানে লেগ স্পিন দিয়ে নজর কাড়ার পর বাংলাদেশ ‘এ’ দল, ইমার্জিং দল হয়ে জাতীয় দলে। বুধবার হয়ে গেল আন্তর্জাতিক অভিষেক। ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪ ওভারে কেবল ১৮ রান দিয়ে নিলেন ২ উইকেট। লেগ স্পিন বুভুক্ষু ক্রিকেট জাতির সামনে দেখালেন আশা।
আলোচনা তাকে নিয়ে এমনতেই ছিল গত কয়েকদিনে। অভিষেকের পারফরম্যান্সের পর আরও বেড়েছে তাকে নিয়ে আগ্রহ। বৃহস্পতিবার সকালে টিম হোটেলে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে আমিনুল মেটালেন অনেক কৌতূহল। শোনালেন দলে ডাক পাওয়ার সময়ের রোমাঞ্চ।
“বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচের পর সোহেল স্যার (বিসিবির কোচ, এই সিরিজের সহকারী কোচ) ফোন দিয়ে বলেছেন, ‘একটা ভালো নিউজ পাবি, অপেক্ষা কর।’ এরপর সাব্বির ভাই (লজিস্টিকস ম্যানেজার) ফোন দিয়ে জানালেন, ‘অভিনন্দন, তোমাকে জাতীয় দলে নেওয়া হয়েছে।’ এরপর সারারাত ঘুমাতে পারিনি উত্তেজনায়ৃ প্রথমবার তোৃ।”
স্কোয়াড থেকে একাদশ জায়গা পেতেও সময় লাগেনি। ডাক পাওয়ার পর দলের প্রথম ম্যাচ তারও প্রথম। সতীর্থদের অনেকেই তার ছেলেবেলার নায়ক। এই তো, ২০১৬ সালে বিসিবির বয়সভিত্তিক একটি দলের হয়ে ভারত সফরে গিয়ে দেখা হয়েছিল আইপিএল খেলতে যাওয়া সাকিব আল হাসানের সঙ্গে। তখন সাকিবের সঙ্গে ছবি তোলা ছিল তাদের জন্যই বড় পাওয়া। সেই সাকিবের নেতৃত্বেই অভিষেক হলো। সব কিছ্ইু আমিনুলের কাছে স্বপ্নের মতো।
“সব ক্রিকেটারের স্বপ্ন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলা। আমার খুব ভালো লাগছিল (মাঠে নামার সময়)। ছোটবেলা থেকে যাদের খেলা দেখে এসেছি, তাদের সঙ্গে খেলা স্বপ্নের মতো। গর্বের একটা অনুভূতি।”
“শুরুতে আমি একটু নার্ভাস ছিলাম। পরে সাকিব ভাই, রিয়াদ ভাইয়ের মতো বড় ক্রিকেটাররা যখন সাপোর্ট দিয়ে বলছিলেন যে ‘এমন কিছু নয় এটা, নিজের মতো খেলে যা’, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে আত্মবিশ্বাস চলে এসেছে।”
প্রথম ম্যাচে প্রথম উইকেটের দেখা পেয়েছেন প্রথম ওভারে। স্নায়ুর চাপ থিতু হতে সময় লাগেনি একটুও। ৪১ বলে ৬২ রান করে ম্যাচ সেরা হওয়া মাহমুদউল্লাহ ম্যাচের পর জানিয়েছিলেন, আমিনুলকে কিভাবে সাহস দিয়েছিলেন তারা। আমিনুলও কৃতজ্ঞতা জানালেন সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রতি।
“যখন বোলিংয়ে যাই, একটু ইয়ে ছিলৃপরে সাকিব ভাই বললেন যে ‘তুই নরম্যাল যেভাবে বোলিং করিস, সেটাই কর।’ তারপর রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) কথা বলছিলেন। সবাই সাপোর্ট করছিলেন। বলছিলেন যে ভালো জায়গায় বল করলেই হবে। আমি সেটাই চেষ্টা করেছি।”
“সাকিব ভাই একটি কথায় বলছিলেন যে, লেগ স্পিনার হিসেবে এখানে জায়গায় বল করলেই হবে। জায়গায় বল করলেই ভালো কিছু সম্ভব। আমি সেটাই মাথায় রেখেছিলাম যে ব্যাটসম্যানকে বুঝে ভালো জায়গায় বল রাখব।”
ব্যাটিং প্রধান অলরাউন্ডারকে স্পেশালিস্ট লেগ স্পিনার বানিয়ে তোলার চেষ্টা নিয়ে গত কয়েকদিনে আলোচনা হয়েছে তুমুল। গত প্রিমিয়ার লিগে বিকেএসপির হয়ে ৪৪০ রান করেছেন, উইকেট ছিল কেবল একটি। গত জুলাইয়ে আফগানিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে দুই উইকেট নেওয়ার আগে ১৮টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে উইকেট ছিল কেবল ওই একটিই। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়েও স্বীকৃত কোনো ম্যাচে কখনও বোলিং করেনি।
ঢাকা লিগের পর হাই পারফরম্যান্স দলের অনুশীলনে কোচ সাইমন হেলমটের মনে ধরে যায় আমিনুলের লেগ স্পিন। মূলত এই অস্ট্রেলিয়ান কোচের আগ্রহে, নির্বাচকদের উৎসাহে আমিনুলের লেগ স্পিন পেতে থাকে বাড়তি গুরুত্ব। তিনি নিজেও নিশ্চিত করলেন প্রক্রিয়াটা।
“ক্যারিয়ারের শুরুতে বোলিং করতাম। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বোলিং করেছি। তবে মাঝখানে কিছুদিন কাঁধের ইনজুরির কারণে বোলিং করতে পারিনি। প্রিমিয়ার লিগে চার ম্যাচে বোলিং করে আর করতে পারিনি।”
“এইচপিতে আসার পর কাঁধের ইনজুরি ভালো হয়। বোলিং নিয়ে কাজ করি। তখন সাইমন হেলমট বোলিং দেখেছে। তারপর ওয়াহিদ স্যারের (বিসিবির কোচ, সাবেক লেগ স্পিনার) সঙ্গে কাজ করেছি, সোহেল স্যারের (বিসিবির কোচ) সঙ্গে কাজ করেছি। তারা পরামর্শ দিয়েছেন। আমি সেভাবেই চেষ্টা করে গেছি।”
শুরুটা যতটা আশা জাগানিয়া, আমিনুলের সামনে এগিয়ে চলার পথ হতে পারে ততই কঠিন। লেগ স্পিনে বড় কিছু করার নজির এই দেশের ক্রিকেট ইতিহাসেই নেই। ক্যারিয়ার দীর্ঘ হয়নি কোনো লেগ স্পিনারের। এখানকার ক্রিকেট সংস্কৃতিও লেগ স্পিনারদের গড়ে তোলার উপযোগী নয় কখনোই।
আমিনুলের স্বপ্ন¯্রােতে তাতে বাঁধ পড়ছে না। নিজে শক্ত পায়ে এগিয়ে গেলে পথচ্যুত করা কঠিন, তরুণ মনে এই পরিণত বোধ বাসা বেঁধেছে। আমিনুল তাই এগিয়ে যেতে চান সব প্রতিকূলতাকে জয় করে।
“আমি মনে করি, আত্মনিয়ন্ত্রণ অনেক বড় ব্যাপার। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। আমি দেখেছি আগে কে কেমন করেছে। চেষ্টা করব নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে দিন দিন উন্নতি করার। ম্যাচ বাই ম্যাচ ভালো করার চেষ্টা করব।”
অভিষেক ম্যাচেই হাতে চোট পাওয়ায় পরের ম্যাচে তার খেলা অনিশ্চিত। তবে এভাবে বোলিং করলে, এই মানসিকতা ধরে রাখলে, আরও অনেক ম্যাচেই তার দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।