আমাদের মানবাধিকার হরণ করা হয়েছে: ফখরুল

0
252

খুলনাটাইমস: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে পূর্বঘোষিত শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়েও পুলিশের বাধায় করতে পারেনি বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এর প্রতিক্রিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আজকে আমাদের পূর্ব ঘোষিত র‌্যালি করতে না দেওয়ায় আমাদের মানবাধিকার হরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, কী রকম একটা যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে রেখেছে পুলিশ আমাদের অফিসের সামনে। এই অফিসের সামনে থেকে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসটি পালন করার জন্যে আমরা একটা র‌্যালি করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। আমাদেরকে সরাসরি বলা হয়েছে যে, ‘নিচে নামলেই আপনাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব’। পুলিশের বাধার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা এই মুহূর্তে কোনো কনফনট্রেশনে যেতে চাই না, সংঘাতে জড়াতে চাই না। আজকের দিনটি ছিল দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে সারা বিশ্বের একটি ইস্যু, যে ইস্যুটা হচ্ছে-মানবাধিকার। সেই মানবাধিকারকে রক্ষার জন্য, সোচ্চার হওয়ার জন্যে দিনটি সারা পৃথিবীজুড়ে পালন করা হয়। আজকে আমাদেরকে পুলিশ সেই র‌্যালি করতে না দেয়ায়, আমাদের অধিকারগুলোকে বলতে না দেয়ায় আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি, আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি, নিন্দা জানাচ্ছি। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে থেকে সকাল সোয়া ১০টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল শোভাযাত্রা। এর আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপি মহাসচিব কার্যালয়ে আসেন। শোভাযাত্রা তারই উদ্বোধন করার কথা ছিল। পুলিশের এই অবস্থানের মধ্যে দলের নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের ভেতর ঢুকে যান। পুলিশের পক্ষ থেকে গেটের কাছ দাঁড়িয়ে থাকার নেতাকর্মীদের বলে দেওয়া হয়, কেউ প্রধান ফটকের বাইরে আসতে পারবে না। পুলিশের মতিঝিল থানা এডিসি এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আজকে ওয়ার্কিং ডে। যানজট এমনিতেই বেশি। র‌্যালির কোনো অনুমতি নেই। এই অবস্থায় জোর করে র‌্যালি করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরে কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপি মহাসচিব। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশে প্রতি মুহূর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী গত ১০ বছরে প্রায় ১৫৯৯ জন মানুষকে বিচারবহির্ভুত হত্যা করা হয়েছে, যেটাকে তারা নাম দিয়েছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’। আমাদের হিসাব মতে এটা প্রায় দুই হাজারের উপরে। আমাদের হিসাব মতে, সারা বাংলাদেশে আজকে শুধু রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকার কারণে ৩৫ লক্ষ লোককে আসামি করা হয়েছে, আজকে এক লক্ষের উপরে বেশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। গুম- যেটা একেবারে মানবতাবিরোধী একটা অপরাধ, সেই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে প্রায় হাজারের মতো। আমাদের দলের শুধু নয়, বাইরেও অনেক মানুষও একইভাবে নিখোঁজ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এখানে ভিন্নমত যিনিই পোষণ করবেন তারই অধিকারকে ক্ষুন্ন করা হয়, গ্রেফতার করা হয়, ভয় দেখানো হয়, হুমকি দেয়া হয়, না হলে তাকে গুম করে ফেলা হয়। এই ধরনের বিষয়গুলো অহরহ ঘটছে। তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দেশের জনপ্রিয় নেত্রী হওয়ায় তাকে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে। তার যে প্রাপ্য জামিন সেটাও তাকে দেওয়া হচ্ছে না। তার চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আজকে আমাদের পূর্ব ঘোষিত র‌্যালি করতে না দেওয়ায় আমাদের মানবাধিকার হরণ করা হয়েছে। বিএনপির আমলে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করা হয়নি বলে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের সংসদে বলা হয়েছে, বিএনপির সরকারের আমলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। আমার এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা জোর গলায় বলতে পারি, বিএনপির আমলে এখানে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগের আমলে যতটা নির্যাতন হয়েছে, তা আর কখনও হয়নি। ভারতের নাগরিকত্ব আইন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের সংসদের খুব পরিষ্কার করে বলা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে। এটা নাকি বিএনপির আমলে হয়েছে। নতুন নাগরিকত্ব বিলে বলা হয়েছে, অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু মুসলিমদের দেওয়া হবে না। সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।