রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি আসক’র

0
228

খুলনাটাইমস: রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে যেকোনও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাজধানীর আসাদ গেটে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে আসক এসব দাবি জানায়। মানববন্ধনে আসকের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজসহ মানবাধিকারকর্মীরা অংশ নেন। বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। আসকের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রীয় বাহিনীর যেকোনও ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা, যেমন−বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, দায়িত্বে অবহেলা ইত্যাদির অভিযোগ উঠলে তা দ্রুততম সময়ে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত এবং সম্পৃক্তদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শাস্তি প্রদান করতে হবে। এ পর্যন্ত সংঘটিত সকল গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে আটক বা গ্রেফতারের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সম্পূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে। নাগরিকদের মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার ও মৌলিক মানবাধিকার যাতে খর্ব না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনও ধরনের ভয়ভীতি কিংবা প্রতিহিংসার শিকার হওয়া ছাড়াই নাগরিকরা যাতে এ অধিকারগুলো চর্চা করতে পারে, সে পরিবেশ নিশ্চিতে জোর দিতে হবে। গণমাধ্যম ও নাগরিকদের মত প্রকাশের অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে হবে। নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতা বন্ধে কার্যকর সচেতনতামূলক ও প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত সনদের ধারা ২ এবং ১৬ (গ) থেকে আপত্তি প্রত্যাহার করা হবে। প্রতিবন্ধী, ইনডিজিনিয়াস, দলিত, তৃতীয় লিঙ্গ, অন্য অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও চা বাগানে কর্মরত শ্রমজীবী মানুষের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের পূর্ণ চর্চা নিশ্চিত এবং রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকারের বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিজ বিশ্বাস ও রীতি চর্চার অধিকার ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী আইন দ্রুততম সময়ে অনুমোদন করতে হবে। জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, আইন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর করে তুলতে হবে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত আমলা নিয়োগের যে ধারাবাহিকতা চলছে তা বন্ধ করতে হবে। জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেন স্বাধীনভাবে তাদের ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন করতে পারে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও গুরুত্বারোপ করতে হবে। মানববন্ধনে আসকের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, নির্যাতন, মত প্রকাশ ও মুক্তচিন্তার ওপর আঘাত, নারী ও শিশু নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের মতো জঘন্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলছে। কার্যকর জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করছে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে কেবল জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয় বরং সামগ্রিক উন্নয়ন, নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তাসহ সব মৌলিক অধিকার, জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে সংগঠনটির দাবি, এ বছর প্রথম ১১ মাসে সারাদেশে ৩৬২ জন মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগকে পাশ কাটিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- চলছে, যা ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। আসকের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, নির্যাতন, মত প্রকাশ ও মুক্তচিন্তার ওপর আঘাত, নারী ও শিশু নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের মতো জঘন্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলছে। কার্যকর জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করছে। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) সংগৃহীত পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৩৬২ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগকে পাশ কাটিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটিয়ে চলছে যা ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদ- মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তা সে যত বড় অপরাধের সঙ্গেই সম্পৃক্ত থাকুক না কেন। এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- আইনের শাসনের প্রতি আস্থাহীনতাকে প্রকট করে তুলেছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ তৈরি করে দিয়েছে। বক্তব্যে এ বছর ১৩ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এর মধ্যে চার জন ফিরে এসেছে আর একজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এসবের পাশাপাশি সম্প্রতি নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা এবং এর ধরন চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। গত এগারো মাসে এক হাজার ৩৫১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, এরমধ্যে ৯৪০ জন শিশু ধর্ষিত হয়েছে। ৪৪৩ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে এবং ৬৮২ জন শিশু নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এসব ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রুত বিচারের অভাব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথকে কঠিন করেছে এবং দুর্বৃত্তদের আরও বেশি বেপরোয়া করে তুলছে বলে বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়। গণমাধ্যমকর্মী ও নাগরিক সমাজের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও বহুল সমালোচিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অনুরূপ ধারা রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুমোদন করা হয়েছে। ফলে তথ্য ও যোগাযোগ আইনের ৫৭ ধারার অপব্যবহার রোধ হয়নি বরং আরও নতুনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। লিখিত বক্তব্যে আরও অভিযোগ করা হয়, জনগণের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার সর্বোপরি মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকার সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, সরকার ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না বা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হওয়ার পথে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কিন্তু মানবাধিকার সুরক্ষা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে কোনও উন্নয়নই দীর্ঘস্থায়ী হবে না। বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়নের ওপর জোর দিচ্ছে, অথচ টেকসই উন্নয়ন কেবল জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয় বরং জনগণের সামগ্রিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। বিশেষ করে নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তাসহ সব মৌলিক অধিকার, জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক হতে বলে জানায় সংগঠনটি।