অনন্ত শ্রদ্ধা ও ভালবাসার এক নাম কামরুল স্যার

0
764
??????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????

ওবায়দুল কবির (সম্রাট): ১৯ফেব্রুয়ারি রাত ১১ টায় চির বিদায় নিয়ে পরপারে চলে গেলেন আমাদের সবার প্রিয় শিক্ষক কয়রা মদিনাবাদ মডের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ক্রীড়া শিক্ষক মোস্তফা কামরুল ইসলাম সানা (৬৫)। অনন্ত ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় যিনি ‘কামরুল স্যার’ নামেই আমাদের কাছে চির নমস্য। ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে তাঁর মৃত্যুসংবাদে অনেকের মতো আমার হ্নদয়ও কেঁদে ওঠে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে স্যারের মৃত্যুসংবাদটা প্রথমে জানতে পারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই। রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটে কয়রা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মোস্তফা শফিকুল ইসলাম আমার কাছে ফোন করছিল স্যারের মৃত্যুর সংবাদ শুনে। আমি রাতে দ্রুত ঘুমানোর কারনে তার ফোনটা রিসিভ করতে পারিনি। সকালে অবশ্য উনি এ কথাই জানান। তখন নিশ্চিত হই স্যার আর বেঁচে নেই। জানতে পারি স্যার খুলনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভুগচিলেন। স্যারের মৃত্যু সংবাদে খানিকটা নিস্তব্দ হয়ে পড়ি। চোখের সামনে ভেসে উঠে স্যারের সাথে স্কুল জীবনের নানান স্মৃতি। অন্তচক্ষু দিয়ে দেখতে পাই উচ্চকিত কন্ঠস্বর, বিশুদ্ধ উচ্চারণ আর পরিচ্ছন্ন পোশাকের সেই অনন্য মানুষটিকে। ভাবতে থাকি জীবনে যতোটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি সেখানে নিভৃতচারী প্রিয় স্যারের কতো না ছায়া-মায়া, আদর-ভালোবাসা লেগে আছে। আমাদের বেড়ে উঠার পেছনে রয়েছে তাঁর অনন্য অসামান্য অবদান। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে একটানা দশম শ্রেণী পর্যন্ত তাঁকে শিক্ষক ও খেলাধুলার অভিভাবক হিসেবে পাই।
মনে আছে সে সময় ভাল ফলাফলের পাশাপাশি স্কুলের মর্যাদা এবং সম্মানকে জাতীয়ভাবে তুলে ধরতে স্যারের সৃজনশীল ও বুদ্দিমত্তা দিয়ে খেলাধুলায় বিশেষ করে ফুটবল ও ক্রিকেট সারা বাংলাদেশের কাছে সুনাম অর্জন করে। স্যারের কঠিন পরিশ্রম ও চেষ্টার ফলে স্কুল পর্যায়ে আমাদের স্কুল ফুটবল ও ক্রিকেট খেলায় কয়েকবার জেলা চ্যাম্পিয়ন ও বাংলাদেশ রানার আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। কুচকাওয়াজ, মার্চ পিটি ও সকল খেলাধুলায় স্যারের পরিশ্রম ও চেষ্টার আমাদের স্কুল কয়রা মদিনাবাদ মডেল সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সব সময় ছিল উপজেলার সবচেয়ে সেরা এসব কিছু হতে থাকে তাঁর সুন্দর তদারকিতে। একই সাথে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাঝে শক্তিশালী নৈতিকতা তৈরি, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতেও তিনি স্বচেষ্ট থাকেন।
ক্রিড়া শিক্ষক হিসেবে ‘কামরুল স্যার বরাবরই ছিলেন এক আদর্শ শিক্ষকের প্রতিচ্ছবি। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, সুন্দর শারিরীক চর্চার পাঠদান, পরিপাটি পোশাক-পরিচ্ছদ, সুন্দর সাবলীল উচ্চারণ ও ভাষা প্রয়োগ, সততা-এসব মিলিয়ে তিনি ছিলেন এক অনুপম ব্যক্তিত্বের অধিকারী। স্বভাবতই তিনি হতে পেরেছিলেন সবার প্রিয় এক আদর্শবান শিক্ষক। পরিপূর্ণ একজন শিক্ষক বলতে যা বুঝায় তিনি সেটাই ছিলেন। নির্বিবাদেই বলতে হয় বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেষ্ট ক্রীড়া শিক্ষক হওয়ার সবটুকু যোগ্যতা তাঁর ভেতরে ছিল বা আমি মনে করি তিনিই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
আজকে কয়রা মদিনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খেলাধুলায় যে উচ্চমাত্রায় আসীন সেখানে তাঁর অবদান অসামান্য। ক্রীড়া শিক্ষক থাকা অবস্থায় স্কুলের খেলাধুলার উন্নয়ন, আর ভালো ফলাফলের বাইরে স্যার যেনো কিছুই ভাবতেন না। নিজের খ্যাতি নিয়ে চিন্তা করতেন না। শুধুই ভাবতেন লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় স্কুলের মার্যাদাকে আরও কত উপরে তোলা যায়।
কামরুল স্যার’ -যতদিন বেঁচে থেকেছেন ততদিনই সত্য ও সুন্দরের পক্ষে কথা বলেছেন। বিশুদ্ধ মানবিক মানুষ ও খেলোয়ার তৈরির জন্য নিরবে কাজ করেছেন। তিনি সফলও হয়েছেন। তাঁর হাতে গড়া শিক্ষার্থী ও খেলোয়ারদের অনেকেই আজ দেশ ও দেশের বাইরে বরেণ্য ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব খেলোয়াড় । তবে তাঁর মতো গুনীজনকে যে এ সমাজ সঠিকভাবে মূল্যায়িত করতে পারেনি এটাও সত্য। সেটা করতে পারলে কোনো ব্যক্তি নয়, আমাদের সমাজই বেশি লাভবান হতো। তবুও তিনি যে নৈতিকতা ও আদর্শের পথ দেখিয়ে গেছেন তা এ প্রজন্মের কাছে, এ প্রজন্মের সকল খেলাধুলা প্রেমীদের কাছে অবশ্যই মহামূল্যবান। আলোকিত, আদর্শবান,ক্রীড়াবিদ পরিপূর্ণ এক শিক্ষকের অনন্য উদাহরণ হয়েই ‘কামরুল স্যার’ সবার মাঝে বেঁচে থাকবেন ।