হাড়কাঁপানো শীতে চরম দুর্ভোগে ছিন্নমূল মানুষ

0
473

শেখ নাদীর শাহ্: ঘনকুয়াশা আর আকষ্মিক শীতের চাদরে মোড়া গোটা দেশ। হাড়কাঁপানো শীতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী,ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের খেটেখাওয়া মানুষেরা । দিনের বেলায় তারা প্রায় কাজের সন্ধানে বাইরেই বের হতে পারছেননা বলাচলে। হঠাৎ জেঁকেবসা প্রচন্ড ঠান্ডায় ঘরে বসেই কর্মহীন অলস সময় পার করতে হচ্ছে অনেকের। শীত নিবারণের জন্যও নেই তেমন ভাল গরম কাপড়। দিনের বেলা সূর্যের তাপই তাদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু গত কয়েকদিনের নরম আবহাওয়ায় সূর্যের দেখা নেই। এমন অবস্থায় তাদের অসহায় আর্তনাদ অনেকটাই ঢাকা পড়ছে শীতের চাদরে।
প্রতিবেদনকালে সরেজমিনে দেখাগেছে,খড়কুটোয় আগুন জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকেই।অন্যদিকে প্রচন্ড ঠাণ্ডায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। তাদের মধ্যে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। হাসপাতালগুলোয় সর্দি কাশি, নিউমোনিয়া ডায়রিয়াজনিত রোগীদের ভর্তির হার ইতোমধ্যে বহুলাংশে বেড়েগিয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, দিনে তাপমাত্রা নেমে যাওয়া, সর্বোচ্চ ও সর্বনিন্ম ব্যবধান হলেও বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি, ঘন কুয়াশা ও সূর্যের আলো দেখা না যাওয়ায় শীত তুলনামূলক বেশি অনুভূত হচ্ছে। যদিও শৈত্যপ্রবাহ কেটে গিয়ে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যে কুয়াশাও সরে যাবে আর তখন সূর্যের আলো দেখা গেলে তাপমাত্রা বেড়ে শীতের মাত্রা কমে আসবে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
তবে আবহাওয়াবিদদের মতে, ডিসেম্বর জুড়ে শীতের পরিমান বেশি থাকবে, বিশেষ করে এ সপ্তাহের বৃহস্পতিবার নাগাদ বিরূপ আবহাওয়ার সৃষ্টি হতে পারে। এ সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে। সে সময় তাপমাত্রার বড় ধরনের হেরফের না হলেও শীত বেশি থাকবে। এ মাসের শেষদিকে আবারও শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। সব মিলিয়ে ডিসেম্বরে তীব্র শীতের কবল থেকে সহজে রেহাই মিলছে না। তারা জানান, শুক্রবার দেশের সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ফরিদপুরে ১০.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জনবহুল শহরে শীতের দাপট বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে ফুলহাতা সোয়েটার, মাফলার, টুপির ব্যবহার। গরম কাপড়ের দোকানগুলোয় ভিড় বেড়েছে। গরম কাপড়ে শহরবাসীর মুখে হাসি ফোটালেও শিশু-বৃদ্ধদের শীতজনিত শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। শিশুরা সর্দিজ্বর, কাশি, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বাড়ছে। এর ফলে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), হাঁপানির রোগী ও ফুসফুসের অসুখে আক্রান্তরা বেশি সমস্যায় পড়ছেন। এজন্য তাদের সকাল-সন্ধ্যা হাঁটতে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একান্তই বের হতে হলে রক্ষাকবচ হিসেবে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন। তাপমাত্রার হঠাৎ পতনে বাতাসে ভাসমান ভাইরাস সক্রিয় হওয়ায় দেহে সর্দি-কাশি বাসা বাঁধতে সময় লাগে না। ফুসফুসের অসুখ যাদের রয়েছে, তাদের বিশেষ সাবধান থাকা উচিত।এমতবস্থায় শিশুদের যথেষ্ট গরম জামাকাপড় পরিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
তাই দেশজুড়ে এ হাড়কাঁপানো শীতে আসুন মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী ছিন্নমূল মানুষদের অন্তত একটাকরে শীতবস্ত্র দিয়ে সহোযোগিতার হাতবাড়াই,আমাদের এ সামান্য সহযোগিতা তাদের শীতনিবারণের একমাত্র সম্বল হয়ে মসৃণ মুখে আনন্দের হাসি ফোটাতেপারে।