সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন খুলনার আধুনিক রেল স্টেশন : মিজান এমপি

0
523
নিজস্ব প্রতিবেদক:
অবশেষে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হচ্ছে খুলনার আধুনিক রেল স্টেশন। দুই দফা সময় বৃদ্ধির পর খুলনা আধুনিক রেল স্টেশন নির্মাণ কাজ এখন শেষের পথে। বহু কাঙ্খিত দৃষ্টিনন্দন এ রেল স্টেশনের নির্মাণ কাজ আগস্টে সম্পন্ন হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বরে স্টেশনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার দুপুরে রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান স্টেশন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
পরিদর্শন শেষে মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আরও আগেই আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশনটি চালু হওয়ার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেটিতে বিলম্ব হওয়ায় খুলনার মানুষ কিছুটা হতাশ হয়েছেন। তবে সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্টেশনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
তিনি বলেন, স্টেশনটি আরও দৃষ্টিনন্দন ও এর সৌন্দর্যবর্ধনের লক্ষ্যে হাউজ বিল্ডিংয়ের ভবনটিও সরিয়ে ফেলা হবে। এ স্টেশন থেকেই বাংলাদেশ-ভারত নিরাপদ রেল যোগাযোগের মূল সেতুবন্ধ তৈরি হবে। যাত্রা আরও সহজ করতে ওয়ানস্টপ চেকিং ব্যবস্থা এবং ভাড়া কমানোর জন্যও পর্যায়ক্রমে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ সময় রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জিএম মুজিবুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী (অতি.) আবু জাফর মিয়া, প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সাহা ও আধুনিক রেল স্টেশন নির্মান প্রকল্পের পরিচালক রিয়াদ আহমেদসহ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জিএম মুজিবুর রহমান বলেন, কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান মডার্ন ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড প্লানার্সের ডিজাইনে ক্রটি থাকার কারণেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বিলম্ব হয়েছে। এ কারণে কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের এবং রেল কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। আগস্টে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হলে সেপ্টেম্বরে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে স্টেশনটি চালু করা সম্ভব হবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।
নির্মাণ ব্যয়, নিম্নমানের স্লিপার এবং রেলের জায়গা অবৈধ দখল সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে রেলওয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, নির্মাণ ব্যয় ৬০ কোটি টাকা অতিক্রম করছে না। ২০০৯ সালে আমদানিকৃত স্লিপার কিছুটা পুরাতন হওয়ায় ত্র“টি ধরা পড়েছে। তবে ত্র“টিপূর্ণ স্লিপার পরিবর্তন করা হচ্ছে। এছাড়া অবৈধ দখলদারদের বিষয়েও কর্তৃপক্ষ সতর্ক রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনাবাসীর দীর্ষদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ কাজ ২০১৫ সালের এপিলে শুরু হয়। ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ মাস মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন নির্ধারিত সময় কাজ শেষ করতে না পারায় দফায় দফায় সময় বৃদ্ধির কারণে নির্মাণ ব্যয় ৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়া এবং প্রকল্পে নতুন পানির ওভার হেডট্যাংকি যুক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় বেড়ে যায়। এরইমধ্যে কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনে ত্র“টির কারণে নির্মাণাধীন ২ নম্বর প্লাটফর্মের ছাদে ফাঁটল দেখা দেয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে বুয়েটের প্রকৌশলীদের পরামর্শে প্লাট ফর্মের ছাদের দু’দিকে নতুন করে ভীম নির্মাণ করা হয়।
সূত্রে আরও জানা যায়, নতুন রেলস্টেশনটি করা হয়েছে তিন তলাবিশিষ্ট। প্রথম তলায় স্টেশন ভবনে থাকছে ৬টি টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম ও সহকারী স্টেশন মাস্টারের রুম। দ্বিতীয় তলায় থাকছে স্টেশন মাস্টারের রুম, রেস্টুরেন্ট, ব্যাংকের শাখা, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ওয়েটিং রুম, ফাস্ট ফুড এবং রেল কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা কক্ষ। তৃতীয় তলায় থাকছে রেলওয়ের প্রকৌশলীদের অফিস কক্ষ। এ স্টেশন চালু হলে একসঙ্গে ৬টি ট্রেন স্টেশনে প্রবেশ এবং বের হতে পারবে। থাকছে সিটিং ব্যবস্থা, সিসি ক্যমেরা ও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা। স্টেশন চত্বরে থাকছে দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান এবং অধিক সংখ্যক গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও।
আধুনিক রেল স্টেশনটি চালু হলে খুলনার সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগ আরও সহজ হবে। সেইসঙ্গে যাত্রীদের খুলনা স্টেশনেই ইমিগ্রেশন ও চেকিংসহ সব ভ্রমণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং ভাড়া কমানোর বিষয়েও দু’দেশের মধ্যে আলোচনা করে নিরাপদ ও সহজ যাত্রার দ্বার উন্মোচন করা হবে। এ স্টেশনে একসঙ্গে ৬টি ট্রেন প্রবেশ এবং বের হওয়ার ব্যবস্থা থাকায় প্রতিদিন প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।