সুন্দরবনের গোলপাতা সংগ্রহে আগ্রহ কমেছে বাওয়ালীদের

0
655

শেখ নাদীর শাহ্: বনবিভাগের কঠোর নিরাপত্তা ও কড়াকড়ির মধ্যে চলতি মৌসুমে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জের একটি কূপে চলছে গোলপাতা আহরণ। মৌসুমের প্রথম ট্রিপে নির্বিঘ্নে গোলপাতা আহরণে রীতিমত ব্যস্ত সময় পার করছেন বাওয়ালীরা। তবে আগের তুলনায় চাহিদা কম থাকায় গোলপাতায় খানিকটা হলেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন সংশ্লিষ্ট বাওয়ালীরা।
উপকূলীয় অঞ্চল সমূহে একটা সময় গোলপাতার ঘরের বহুল প্রচলন ছিল, তবে সময় বদলেছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অধিকাংশ এলাকায় ঘরের ছাউনিতে এখন আর আগের মত গোলপাতার ব্যবহার হয়না। তাই চাহিদাও কমেছে আগের যেকোন সময়ের চেয়ে। দূর্যোগ প্রবন উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন সময় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব থেকে বাঁচতে গোলপাতার ব্যবহার ছেড়ে তারা এখন ঝুঁকছেন টিনের দিকে।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, সুন্দরবন থেকে বনজ দ্রব্য আহরণে কড়াকড়ি ও চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় মূলত গোলপাতা আহরণে আগ্র হারাচ্ছেন বাওয়ালীরা। গত কয়েক বছরের ন্যায় চলতি আহরণ মৌসুমেও গোলপাতা আহরণে বাওয়ালীদের বিএলসি (অনুমতি) দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর ছিল বন বিভাগ। ফলে বাওয়ালীদের পাশাপাশি এর সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমজীবিরা কিছুটা দেরিতে পামিট সংগ্রহ করে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জের কূপ (জোন) থেকে সুন্দরবন অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে।
এব্যাপারে বাওয়ালীরা জানান, অনেকেই বংশ পরম্পরায় গোলপাতা আহরণে জীবিকা নির্বাহ করেন। আবার অনেকে রয়েছেন, প্রায় দু’যুগ ধরে রয়েছেন পেশা আঁকড়ে। তবে ক্রমান্বয়ে বনজ সম্প আহরণে বন বিভাগের কঠোরতা বাড়ছে। একদিকে চাহিদা হ্রাস অন্যদিকে সুন্দরবন রক্ষার্থে বনজ দ্রব্য আহরণ কমানোর সিদ্ধান্তে উভয় সংকটে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। তারা আরও জানান, গোলপাতা আহরণে যে, পরিমাণ টাকা লগ্নি করতে হয় সে তুলনায় লাভ খুবই কম। তার উপর আহরণ মৌসুমে মহাজনদের কাছ থেকে অধিক লাভে টাকা নিয়ে সুন্দরবনে যেতে হয় তাদের। এব্যাপারে খুচরা গোলপাতা বিক্রয় মহলে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, চাহিদা কম থাকায় গত বারের আহরিত গোলপাতা এখনো রয়ে গেছে।
খুলনা রেঞ্জের রেঞ্জ সহযোগী শাহানশা নওশাদ জানান, সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জের ১টি কূপে গোলপাতা সংগ্রহ করতে ১৪২ টি বিএলসির অনুকুলে বাওয়ালীরা প্রথম দফায় ৭০ হাজার ৬ শ ৪৪ মণ গোলপাতা সংগ্রহের অনুমতি (পারমিট) নিয়েছে। গত ২৬ জানুয়ারি থেকে এ সকল বিএলসির অনুকুলে এসব পারমিট দেওয়া শুরু হয়েছে এছাড়া আহরণ চলবে ৩০ মার্চ পর্যন্ত।
খুলনা রেঞ্জের গোলপাতা কুপ কর্মকর্তা মোঃ আনিসুজ্জামান জানান, বাওয়ালীরা যাতে নিবিঘ্নে গোলপাতা কাটতে পারেন সেজন্য কূপের পক্ষে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। তবে চলতি মৌসূমে ব্যবসায়ী ও বাওয়ালীদের আগ্রহ কম থাকায় এবার আহরণ লক্ষমাত্রা পূরণে যথেষ্ঠ সংশয়ে রয়েছেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ আবু সালেহ সাংবাদিকদের বলেন, বাওয়ালীদের নির্বিঘ্নে গোলপাতা আহরণে বন বিভাগের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বশিরুল আল-মামুন জানান, বন রক্ষার্থে সুন্দরবনের উপর থেকে চাপ কমানোর জন্য বনজ দ্রব্য আহরণ সীমিত করা হয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি স্টেশন ও কূপে নিয়মিত তদারকিপূর্বক বিএলসি নবায়নের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আহরণের সময় যাতে গোলপাতা ঝাঁড়ের মাইজপাতা ও ঠেকপাতা কোনো ভাবেই কর্তন না করে এবং কূপে নৌকার সাথে মিল রেখে গোলপাতা কাটার নির্দেশনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।