সাত নদীর পানি ১১ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে

0
163

টাইমস ডেস্ক:
দেশের বেশকিছু অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে দেশের সাতটি নদীর পানি ১১ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শনিবার দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। তাদের তথ্যানুযায়ী, গাইবান্ধা পয়েন্টে ঘাঘট নদীর পানি ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, চক রহিমপুর পয়েন্টে করতোয়ার পানি ১১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনার পানি ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, কাজীপুর পয়েন্টে যমুনার পানি ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, সিংড়া পয়েন্টে গুড় নদীর পানি ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, বাঘাবাড়ী পয়েন্টে আত্রাই নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, এলাসিন পয়েন্টে ধলেশ্বরী নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, আত্রাই পয়েন্টে আত্রাই নদীর পানি ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদনদীর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমছে এবং যমুনার পানি স্থিতিশীল আছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা উভয় নদীর পানি কমতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, অপরদিকে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীর পানি কমছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। গত শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে গতকাল শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সময়ে দেশে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়েছে ছাতকে ৮৪, কানাইঘাটে ৫৪, ভৈরব বাজারে ৫৮ এবং নোয়াখালীতে ৩৯ মিলিমিটার। একই সময়ে বাংলাদেশের উজানে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি।
বাড়ছে যমুনার পানি, তলিয়ে যাচ্ছে ফসল: কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে যমুনাসহ সিরাজগঞ্জের শাখা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে যাচ্ছে রোপা আমন ধান। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকরা। জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, নতুন করে যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার কাজিপুর, সদর, তাড়াশ, শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি ও উল্লাপাড়ার রোপা আমন ধানসহ উঠতি ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বাড়তে থাকায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন কৃষকরা। চরাঞ্চলের প্রায় ৮০ ভাগ রোপা আমন ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। যমুনার পানি দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার আউশ ও রোপা আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা হিসেবে বন্যাকবলিত সাতটি উপজেলার এক হাজার ২৪৫ জন কৃষককে বীজ দেয়া হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আবু হানিফ বলেন, জেলার বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোতে পাঁচ হাজার কৃষকের মধ্যে এক বিঘা করে মাসকলাই, এক হাজার ২৪৫ কৃষকের মধ্যে রোপা আমন চারা ও ৮২টি ইউনিয়নের ৩২ জন কৃষকের মধ্যে সবজির চারা বিতরণ করা হয়েছে। হঠাৎ আবারও যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকের বীজতলা তলিয়ে গেছে। তবে আমরা প্রাকৃতিক এ দুর্যোগ মোকাবেলায় তৈরি রয়েছি। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছরের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। মে মাসের শেষ থেকে যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। আবারও নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। তবে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। তিনি আরও বলেন, কাজীপুর উপজেলার পাটাগ্রাম ও শাহজাদপুর উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে কৈজুড়ী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার জায়গা অরক্ষিত রয়েছে। এখানে ভাঙন ছিল। ভাঙনরোধে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আরেকটি প্রকল্প অনুমোদন হলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।