সহজে ব্যবসার সূচকে এক ধাপ অগ্রগতি

0
571

খুলনাটাইমস ডেস্কঃ
কোনো দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ম-কানুন ও তার বাস্তবায়ন কতটুকু সহজ বা কঠিন তার ওপর বিশ্বব্যাংকের তৈরি সূচকে বাংলাদেশের এক ধাপ উন্নতি হয়েছে। তবে কোনো কোনো মানদণ্ডে বিশেষ করে ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি হয়েছে। মূলত বিদ্যুৎ সংযোগের মানদণ্ডে উন্নতি হওয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান এক ধাপ এগিয়েছে। ডুয়িং বিজনেস-২০১৯ নামে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন গতকাল বুধবার ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৭৬তম। ১০০ স্কোরকে সর্বোত্তম ধরে এবার বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৯৭, যা আগের বছরে ছিল ৪১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৭তম। গত বছর এক ধাপ পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ। তার আগের বছর দুই ধাপ এগিয়ে ছিল। গুণগত মান বিবেচনায় কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ মোটামুটি একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। ভারতের ২৩ ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। দেশটির অবস্থান ১০০ থেকে এবার ৭৭ হয়েছে। আফগানিস্তান ১৬ ধাপ উন্নতি করে ১৬৭তম অবস্থানে গিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে গেছে। ভারতে ৬টি ক্ষেত্রে সংস্কার হয়েছে। আফগানিস্তানে হয়েছে ৫টি ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে কোনো ক্ষেত্রে সংস্কার হয়নি বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

১০টি নির্দেশক বা মানদণ্ডের মধ্যে ৬টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান পিছিয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ব্যবসা শুরু করা,  নির্মাণ কাজের অনুমোদন, ঋণপ্রাপ্তি, ক্ষুদ্র শেয়ারধারী বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, দেউলিয়াত্ব ঠেকানো ও সীমান্ত বাণিজ্য। অন্যদিকে বিদ্যুৎ সংযোগ, সম্পত্তি নিবন্ধন ও কর প্রদান মানদণ্ডে উন্নতি হয়েছে। ব্যবসায়িক চুক্তি কার্যকর বিষয়ে একই অবস্থান আছে। চলতি বছরের ১ মে পর্যন্ত ডাটা বা উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। দেশটির স্কোর ১০০ এর মধ্যে ৮৬ দশমিক ৫৯। নিউজিল্যান্ডের পরে প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকার অবস্থান ১০০তম, ভুটান ৮১তম, নেপাল ১১০তম, মালদ্বীপ ১৩৯তম এবং পাকিস্তানের অবস্থান ১৩৬তম।

মতামত জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বাংলাদেশের সামান্য উন্নতি হয়েছে। অন্যান্য দেশ বেশি উন্নতি করায় অবস্থানে মাত্র এক ধাপ এগিয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিটি মানদণ্ডে উন্নতির জন্য কোনো মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কী দায়িত্ব তা বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। এবারের অবস্থান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আগামী ৫ বছর নাগাদ বাংলাদেশের অবস্থান ১০০-এর মধ্যে আসবে বলে তিনি আশাবাদী। কেননা বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইন পাস হয়েছে। এই সেবা খুব শিগগিরই চালু হবে।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ মাশরুর রিয়াজ সমকালকে বলেন, গুণগতভাবে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি হয়নি। এর কারণ, যেসব সংস্কার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে, তার অনেক কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। অবস্থানের দৃশ্যমান উন্নতির জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। বিডার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমন্বয় বাড়াতে হবে। এখানে ঘাটতি আছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর্যায়ে আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে বড় সংস্কারে না গেলে বাংলাদেশের এ অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে।

কোন মানদণ্ডে কী অবস্থা :ব্যবসা শুরু করার মানদণ্ডে গত বছর অবস্থান ছিল ১৩১তম। এবার পিছিয়ে ১৩৮তম হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে কোনো ব্যবসা শুরু করতে ৯টি প্রক্রিয়া রয়েছে, যা অনেক বেশি। নিউজিল্যান্ডে মাত্র একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। ব্যবসা শুরু করতে সময়ে লাগে ১৯ দশমিক ৫ দিন। অনেক দেশে এক্ষেত্রে মাত্র ১ দিনের মধ্যে অনুমোদন পাওয়া যায়। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে অবস্থান গত বছরের ১৮৫তম থেকে কিছুটা উন্নতি হয়ে ১৭৯তম হয়েছে। আগে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে সময় লাগত ৪০৪ দিন। এখন তা কমে ১৫০ দিন হয়েছে। সম্পত্তি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অবস্থান ১৮৫তম থেকে পিছিয়ে ১৮৩তম স্থানে বাংলাদেশ। তবে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এখনও আগের মতো ৮টি প্রক্রিয়া রয়েছে। নিবন্ধনে সময় লাগে ২৭০ দিন। ব্যবসায়িক চুক্তি কার্যকরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯তম। ক্ষুদ্র শেয়ারহোল্ডার বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় ৭৬তম থেকে পিছিয়ে ৮তম স্থান এবং দেউলিয়াত্ব পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষেত্রে ১৫২ থেকে পিছিয়ে ১৫৩তম অবস্থানে গেছে বাংলাদেশ। কর পরিশোধ মানদণ্ডে ১৫২ থেকে এগিয়ে ১৫১তম এবং ঋণপ্রাপ্তির মানদণ্ডে ১৫৯ থেকে ১৬১তম অবস্থানে নেমেছে বাংলাদেশ।