শেষ বিকেলে নাসিমের হ্যাট্টিকের বিশ্বরেকর্ডে ইনিংস হারের মুখে বাংলাদেশ

0
259

খুলনাটাইমস স্পোর্টস : রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে বল হাতে আগুন ছড়িয়ে হ্যাট্টিক করলেন পাকিস্তানের তরুণ পেসার নাসিম শাহ। সর্বকনিষ্ট বোলার হিসেবে হ্যাট্টিকের বিশ্বরেকর্ডও গড়ে ফেলেন ১৬ বছর বয়সী নাসিম। তার এই বিশ্বরেকর্ডে সিরিজের প্রথম টেস্টে ইনিংস হারের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। ইনিংস হার এড়াতে ৪ উইকেট হাতে নিয়ে আরও ৮৬ রান করতে হবে টাইগারদের। ২১২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে তৃতীয় দিন শেষে ৬ উইকেটে ১২৬ রান করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৪৪৫ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিলো ২৩৩ রান। ওপেনার শান মাসুদের ১০০ ও বাবর রবিবারমের অপরাজিত ১৪৩ রানের সুবাদে দ্বিতীয় দিন শেষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেটে ৩৪২ রান করেছিলো পাকিস্তান। তাই ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ১০৯ রানে এগিয়ে ছিলো স্বাগতিকরা। বাবরের সাথে ৬০ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন আসাদ শফিক। তৃতীয় দিন দলের স্কোরটা বড় করার পরিকল্পনা ছিলো বাবর ও শফিকের। কিন্তু দিনের দ্বিতীয় বলে উইকেট পতনের তালিকায় নাম তুলেন বাবর। গতকাল বাংলাদেশের সফল পেসার আবু জায়েদের বলে মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন বাবর। ১৯৩ বলে ১৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৪৩ রান করেন বাবর। দিনের শুরুতে পাকিস্তান শিবিরে ধাক্কা দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে বাংলাদেশের অন্য পেসাররা। তাই ৩২ রানের মধ্যে পাকিস্তানের দুই স্বীকৃত ব্যাটসম্যানকেও প্যাভিলিয়নমুখী করেন এবাদত হোসেন ও রুবেল হোসেন। শফিককে ৬৫ রানে এবাদত ও রিজওয়ানকে ১০ রানে শিকার করেন রুবেল। সতীর্থরা ফিরলেও, ভড়কে যাননি হারিস সোহেল। টেল-এন্ডারদের নিয়ে লড়াই করার চেষ্টা করেন তিনি। এতে ব্যক্তিগতভাবে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন সোহেল। তাতে চারশ পেরিয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। এরপর ইয়াসির ও আফ্রিদিকে তুলে নিয়ে পাকিস্তানের লেজ ছেটে ফেলার পথ তৈরি করেন রুবেল। কিন্তু বাঁধা হয়ে ছিলেন সোহেল। দলীয় ৪৪২ রানে সোহেলকে শিকার করে বাংলাদেশের শেষ বাঁধাকে ছেটে ফেলেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ১০৩ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৫ রান করেন সোহেল। আর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রান আউট হন নাসিম। ফলে ৪৪৫ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। বাংলাদেশের জায়েদ ৮৬ রানে ও রুবেল ১১৩ রানে ৩ উইকেট নেন। তাইজুল ১৩৯ রানে ২ উইকেট ও এবাদত ৯৭ রানে ১ উইকেট নেন। চা-বিরতির আগে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। শুরুটা ভালো ছিলো দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সাইফ হাসানের। ৯ ওভারে ৩৯ রান যোগ করেন তারা। তবে ৫৩ রানের বিদায় নিতে হয় তাদের। তামিম ৩৪ রান করে স্পিনার ইয়াসিরের ও সাইফ ১৬ রান করে নাসিমের প্রথম শিকার হন। দুই ওপেনারকে হারানোর পর দলের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক মোমিনুল হক। উইকেট ও পাকিস্তানের বোলারদের লাইন-লেন্থকে আয়ত্বে নিয়ে নিয়েছিলেন তারা। তাই জুটিটি বড় হতে থাকে। এতে শান্ত-মোমিনুলকে নিয়েই দিন শেষ করার স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। কিন্তু সেটি হতে দেননি নাসিম। ৪১তম ওভারের চতুর্থ বলে শান্তকে ফিরিয়ে ৭১ রানের জুটি ভাঙ্গেন নাসিম। লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া দেননি নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে জমে যাওয়া জুটি ভাঙ্গে পাকিস্তান। শান্তর বিদায়ে উইকেটে যান নাইটওয়াম্যান তাইজুল। তাইজুলকেও লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে হ্যাট্টিকের পথ তৈরি করেন নাসিম। নাসিমের হ্যাট্টিকের সামনে পড়ে অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাতে ক্রিকেটপ্রেমিরা ভাবেন হ্যাট্টিক বঞ্চিত হবেন নাসিম। কিন্তু না, মাহমুদুল্লাহর ভুল শটে বিশ্বের সর্বকনিষ্ট বোলার হিসেবে হ্যাট্টিক পূর্ণ করেন নাসিম। এতে ভেঙ্গে যায় বাংলাদেশের স্পিনার অলক কাপালির ১৭ বছরের পুরনো রেকর্ড। ২০০৩ সালে ১৯ বছর বয়সে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে হ্যাট্টিক করেছিলেন কাপালি। তাই এতোদিন টেস্টের সর্বকনিষ্ট হ্যাট্টিকম্যান ছিলেন কাপালি। রবিবার কাপালির রেকর্ড ভেঙ্গে ১৬ বছর বয়সে বিশ্বরেকর্ড গড়েন নাসিম। নাসিম ঝড়ের পর শুন্য হাতে প্যাভিলিয়নে ফিরেন মোহাম্মদ মিঠুনও। তাকে শিকার করেন স্পিনার ইয়াসির। এরপর মোমিনুল ও লিটন দাস দিন শেষ করেছেন। মোমিনুল ৪টি চারে ৮৭ বলে অপরাজিত আছেন ৩৭ রানে। লিটন ১ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি। পাকিস্তানের নাসিম ২৬ রানে ৪ উইকেট নেন। স্কোর কার্ড (বাংলাদেশ ২৩৩/১০, ৮২.৫ ওভার, মোহাম্মদ মিঠুন ৬৩, নাজমুল হোসেন শান্ত ৪৪, শাহিন শাহ আফ্রিদি ৪/৫৩)। পাকিস্তান ব্যাটিং (আগের দিন পাকিস্তান- ৩৪২/৩, ৮৭.৫ ওভার, বাবর ১৪৩*, আসাদ ৬০*, জায়েদ ২/৬৬) :
শান মাসুদ বোল্ড ব তাইজুল ১০০
আবিদ আলি ক লিটন ব আবু জায়েদ ০
রবিবারহার আলি ক শান্ত ব আবু জায়েদ ৩৪
বাবর রবিবারম ক মিঠুন ব আবু জায়েদ ১৪৩
আসাদ শফিক ক লিটন ব এবাদত ৬৫
হারিস সোহেল ক তামিম ব তাইজুল ৭৫
মোহাম্মদ রিজওয়ান ক মাহমুদুল্লাহ ব রুবেল ১০
ইয়াসির শাহ এলবিডব্লু ব রুবেল ৫
শাহিন শাহ আফ্রিদি এলবিডব্লু ব রুবেল ৩
মোহাম্মদ আব্বাস অপরাজিত ১
নাসিম শাহ রান আউট (সাইফ হাসান ) ২
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-৩, নো-২, ও-১) ৭
মোট (অলআউট, ১২২.৫ ওভার) ৪৪৫
উইকেট পতন : ১/২ (আবিদ), ২/৯৩ (রবিবারহার), ৩/২০৫ (মাসুদ), ৪/৩৪২ (বাবর), ৫/৩৫৩ (আসাদ), ৬/৩৭৪ (রিজওয়ান), ৭/৪১৫ (ইয়াসির), ৮/৪২২ (আফ্রিদি), ৯/৪৪২ (হারিস), ১০/৪৪৫ (নাসিম)।
বাংলাদেশ বোলিং :
এবাদত হোসেন : ২৫-৬-৯৭-১,
আবু জায়েদ : ২৯-৪-৮৬-৩ (নো-১),
রুবেল হোসেন : ২৫.৫-৩-১১৩-৩ (ও-১, নো-১),
তাইজুল ইসলাম : ৪১-৬-১৩৯-২,
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ : ২-০-৬-০।
বাংলাদেশ ব্যাটিং :
তামিম ইকবাল এলবিডব্লু ব ইয়াসির ৩৪
সাইফ হাসান বোল্ড ব নাসিম ১৬
নাজমুল হোসেন শান্ত এলবিডব্লু ব নাসিম ৩৮
মোমিনুল হক অপরাজিত ৩৭
তাইজুল ইসলাম এলবিডব্লু ব নাসিম ০
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক হারিস ব নাসিম ০
মোহাম্মদ মিঠুন বোল্ড ব ইয়াসির ০
লিটন দাস অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (ও-১) ১
মোট (৬ উইকেট, ৪৫ ওভার) ১২৬
উইকেট পতন : ১/৩৯ (সাইফ), ২/৫৩ (তামিম), ৩/১২৪ (শান্ত), ৪/১২৪ (তাইজুল), ৫/১২৪ (মাহমুদুল্লাহ), ৬/১২৬ (মিঠুন)।
পাকিস্তান বোলিং :
শাহিন শাহ আফ্রিদি : ১১-২-৩৫-০ (ও-১),
মোহাম্মদ আব্বাস : ১১.৪-৫-২০-০,
নাসিম শাহ : ৮.২-২-২৬-৪,
ইয়াসির শাহ : ১১-২-৩৩-২,
আসাদ শফিক : ৩-০-১২-০।