শীত মৌসুমে খেজুর রস সংগ্রহ বাংলা চাষীদের শেকড়ের ঐতিহ্য

0
619

শেখ নাদীর শাহ্: খেজুর রস শীতকালে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকায় যেন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখলকরে আছে।স্বপ্ন ও প্রত্যাশার অনেক খানি খেজুর গাছের সঙ্গে চাষীদের অঙ্গাঅঙ্গিভাবেই জড়িয়ে পড়তে হয়। চাষীর জীবন সংগ্রামে অনেক কষ্টের মাঝে অনেক প্রাপ্তিই যেন যুক্ত হয় বাংলার এমন জনপ্রিয় তরুবৃক্ষ খেজুর গাছের সঙ্গে। কারণ, শীত মৌসুমে খেজুর গাছইতো চাষীর অন্নযোগায়।
হেমন্তের শেষেই শীতের ঠান্ডা পরশে গ্রামবাংলার বিভিন্ন স্তরের চাষীরা খেজুর গাছের মিষ্টি রসে নিজকে চুবিয়ে নেওয়ার সুন্দর মাধ্যম তৈরী করেন। আবহমান গ্রামবাংলার চাষীদের যেন একঘেয়েমির যান্ত্রিকতায় জীবনযাপনের অনেকটা পরিবর্তন নিয়েআসে শীতের ঋতুচক্র।
শীতের প্রকৃতির মাঝে খেজুর রস চাষীরা চষে বেড়ায় সকাল, বিকাল ও সন্ধ্যায় মেঠো পথ ধরে, তারই ধারাবাহিকতায় যেন চমৎকার নান্দনিকতা এবং অপরূপ দৃশ্য সৃষ্টি করে, এ যেন প্রাচীন ঐতিহ্যের এক অপরূপ নিদর্শন। এমন শৈল্পীক আস্থা ও বিশ্বাসকে বুকে নিয়ে প্রকৃতির মাঝে বিশাল আকৃতির কুয়াশার চাদরে মুড়ি দিতে হয় চাষীদের। এই শীতেকালে গ্রামীন চাষীদের রূপ-সৌন্দর্যের আর একটি উপাদেয় সামগ্রী খাঁটি শরিষার তেল, যা শরীরে মালিশ করলে চাষীদের অনেকাংশেই ত্বকের মশ্রিণতা এবং ঠান্ডা দূর করে খেজুর গাছে উঠতে। গ্রামে খুব ভোরে খেজুর গাছ হতে রসের ভাঁড় নামিয়ে আনতে ব্যস্ত হন চাষীরা। রাতের হিমশীতল রস ভোরের হাঁড়কাপানো ঠান্ডায় গাছ থেকে নামিয়ে খাওয়ার স্বাদই যেন ভিন্ন।
আবার হাঁড় কাপানো শীতে ভোরবেলা রস খাওয়ার পর শরীরের কাঁপুনি যেন চরম মজাদায়ক।শীতের কুয়াশামোড়া সকালে রূপবৈচিত্রময় গ্রামবাংলার ছেলে/মেয়েরা ঘুম থেকে খুব ভোরে উঠে হাত মুখ ধুয়ে খড় কুটোয় আগুন জ্বেলে শরীর গরম করার চেষ্টাকরে আর অপেক্ষায় থাকে কখন সূর্য মামা দেখাদেয়। তাদের রোদ পোহানোর আরামের সঙ্গে অপেক্ষা করে, খেঁজুর রস নিয়ে কখনযে বাড়িতে আসে গৃহকর্তারা। রস নিয়ে আসলে তারা আনন্দ উল্লাস করতে থাকে, গ্রামবাংলার ছোট ছোট ছেলে/মেয়েদের এ সামান্য পাওয়ায় যেন তৈরীহয় এক উৎসবমূখর পরিবেশ যা সাধারণত শীতের সকালেরই জানান দেয়।
সাধারণত খেজুরগাছ ছয়/সাত বছর বয়স থেকে রস দেওয়া শুরু করে,পঁচিশ থেকে ত্রিশ বছর পর্যন্ত রস দেয়। গাছ পুরনো হয়ে গেলে রস কমেযায়,কিন্তু পুরনো খেজুর গাছের রস তুলনামূক মিষ্টি হয়। মাঝ বয়সী গাছ থেকে সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায়।কিন্তু খুববেশী রস সংগ্রহ আবার গাছের জন্য অনেক ক্ষতিকর।রস সংগ্রহের জন্য কার্তিক মাসে খেজুর গাছ কাটা শুরু হয়। কার্তিক মাস থেকেই রস পাওয়া যায়, শেষ হয় ফাল্গুন মাসে। শীতের সঙ্গে রসের যেন এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। শীত যত বেশি পড়ে গাছথেকে রস তত বেশি ঝরে। অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ মাস হলো রসের ভরা মৌসুম। অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত একটি খেজুর গাছে মাসে প্রায় ৪০ কেজি রস পাওয়া যেতে পারে।
মূলত শীতের মৌসুমে চাষীরা দিনের বেশিরভাগ সময় রস সংগ্রহের কাজে একগাছথেকে অন্য গাছ করে বেড়ায়।শীতকালে রূপ-বৈচিত্র্যপূর্ণ গ্রামীন সংস্কৃতির মাঝে ‘খেজুর রসের পিঠা’এবং পায়েস ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে প্রতি বছরই ফিরে আসে।