রাণীশংকৈলে পাটের ঐতিহাসিক সোনালী আশ আজ প্রায় বিলুপ্তের সীমানায় !

0
725

রানীশংকৈলে (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় গত বছরের তুলনায় পাট চাষীদের মুখে কিছুটা মৃদু হাঁসি লক্ষ করা গেলেও এ উপজেলায় এবার পাট চাষীরা গত বারের চেয়ে বেশী দামে পাট বিক্রি করতে পারছেন বলে জানান লেহেম্বা , বাচোর ও রাতোর ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন পাট চাষীরা। এদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরেই পাট চাষ করে আসছেন তবে গত বছরের তুলনাই এবার তারা মন প্রতি ৫শত থেকে ৮ শত টাকা বেশি পাবেন বলে আশা করছেন। গত বছর তারা ১৪ থেকে ১৮ শত টাকায় পাট বিক্রি করলেও বর্তমানে মন প্রতি পাট বিক্রি করছেন ২ হাজার থেকে ২২ শত টাকায়। ২৮ আগষ্ট বুধবার রাণীশংকৈল কৃষি কর্মকর্তা সন্জয় দেব নাথের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ উপজেলায় এই অর্থ বছরে পাট আবাদ হয়েছে ১০৬০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরে আবাদ হয়েছিল তার থেকে কিছুটা বেশি। এ উপজেলায় পাট অধিদপ্তর কর্তৃক ১৫০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণের আওতায় এনে প্রায় ৩ হাজার জনকে (ও নাইন সেভেন) বীজ প্রদান করা হয়েছে। নতুন জাতের (রবি পাট-১) একটি বীজ দিয়ে শুধুমাত্র প্রদর্শণী করা হয়েছে। আগামী মৌসুমে ব্যাপকভাবে কৃষকের মাঝে দেওয়া হবে।’ একজন প্রবীণ পাট চাষী বলেন, এ উপজেলায় একসময় প্রচুর পরিমানে পাট আবাদ হতো। পাট চাষি তার কাংক্ষিত লাভজনক দাম পাচ্ছেন না অনেক বছর ধরে। দেশের স্বার্থে পাট শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে পাট চাষিদের স্বার্থকে সর্বাগ্রে বিবেচনায় নিতে হবে। চাষিদের স্বার্থকে উপেক্ষা করে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। পাট চাষিদের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার যে, উৎপাদন করতে যে সকল প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তার প্রতিকার করা। বিদেশে কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্যের রপ্তানি কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পাট চাষি ও পাট শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক, কর্মচারী ও ছোট ব্যবসায়ীরা। সন্ধারই গ্রামের রফিকুল ইসমান জানান, তিনি ২ বিঘা জমিতে এবার পাট চাষ করেছেন। সেচ পানি দিয়ে আবাদ করে এখন পাট পচানো বা গরানোর জায়গা পাচ্ছেন না। গতকাল সকালে তিনি স্যালো মেশিন দিয়ে পাট পচানোর চেষ্টা করছেন। নেকমরদ গ্রামের সামুল ইসলাম জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে পাঠ চাষ করেছেন কিন্তু পানি অভাবে পাট কাটতে ভয়ও পাচ্ছেন বলে জানান। আব্দুল বারী বলেন,‘পাট আমাদের বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। আমাদের দেশের ভ‚মি এবং জলবায়ু পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। পৃথিবীব্যাপী দুই জাতের পাটের চাষ হয়ে থাকে। তার মধ্যে দেশি পাটের উৎপত্তি আমাদের দেশে আর তোষা পাটের উৎপত্তি আফ্রিকা মহাদেশে। তবে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নতমানের দেশি ও তোষা পাট আমাদের দেশেই উৎপন্ন হয়ে থাকে। পাট তন্তু জাতীয় উদ্ভিদ। পাট গাছের ছাল থেকে পাটের আঁশ সংগ্রহ করা হয়। পাট আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপ‚র্ণ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। আমাদের দেশে দুইশত বছরের ও আগের থেকে বাঙালি মধ্যবিত্তের বিকাশে পাট অন্যতম প্রধান নিয়ামক হিসেবে ভ‚মিকা পালন করছে। নানাভাবে পাট ও পাট শিল্প আজ হতভম্ব, যার ফলে আমাদের সমাজ বিকাশে পাটের ঐতিহাসিক সোনালী আশ আজ প্রায় বিলুপ্তের সীমানায় । এক সময় প্রধান রপ্তানি পণ্য হিসেবে পাট খাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হত। রপ্তানি আয়ের একটি ভাল অংশ এখনও পাট খাত থেকে এসে থাকে। পাট থেকে সুতা সহ অন্যান্য পাট সামগ্রী উৎপাদন হয়ে তাকে। গড়ে বর্তমানে পৃথিবীতে ১৯ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করে ৩২ লাখ মেট্রিকটন পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। যার শতকরা ২৫ ভাগেরও বেশি অর্থাৎ ৮.৩৩ লাখ মেট্রিকটন বা পৃথিবীর মোট উৎপাদনের ২৬.০২ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদন হয়ে থাকে। পাটের রং সোনালী এবং পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয় বিধায় পাটকে সোনালী আঁশ বলা হয়ে থাকে। আমাদের সবারই জানা যে, আমাদের দেশের পাটের বাজারকে কেন্দ্র করে ১৯৫১ সালে নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠেছিল আদমজী পাট কলের মত বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব সরকারি ও বেসরকারি পাট কল রয়েছে সে গুলোকে সঠিক ভাবে ব্যবহারপযোগী করে তোলা প্রয়োজন। যদিও সবগুলিতে এখন উৎপাদন হয় না। আবার পাটকলগুলি পুরোনো হওয়ার কাঙ্খিত উৎপাদন পাওয়া যায় না। ফলে উৎপাদন খরচ বেশি হয়। যার ফলে মিলগুলিতে লোকসান হয়ে থাকে। পাট ও পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন ও বিকাশের জন্য যে পরিমাণে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন আমাদের সরকারের।স্বাধীনতার পর থেকে পাটের দাম উঠা-নামা করার মধ্য দিয়ে চলছে পাট চাষীদের এক ধরনের হতাশা। এদিকে উপজেলার পাট চাষীদের মধ্যে বাচোরের সফিকুল প্রায় ৩ বিঘা ,লেহেম্বার দিন বন্ধু ৩ বিঘা, রাতোরের ঘনেশ্যাম বাবু তিনিও প্রায় আড়াই বিঘার মত আবাদ করেছেন এবং পাটের আবাদ করে বিগত দিনে অনেক ক্ষয় ক্ষতি গুনতে হয়েছে বলেও জানান। তারা বলেন, এবারে উপজেলা কৃষি অফিসের সব সময় তদারকি করতে দেখেছেন। দামও ভালো পাবেন বলে আশা করছেন উত্তরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাণীশংকৈলের এসব কৃষকরা।