আমরা সরকার দলের লোক,‘তোমার মতো সার্জেন্ট কয় টাকা বেতনে চাকরি করো’

0
1110

নিজস্ব প্রতিবেদক,খুলনাটাইমস :
স্কুলের সামনে ডাবল লেনে পার্কিং করে রাখা প্রাইভেটকারটিকে সরিয়ে দিতে অনুরোধ করতে করতে এগোচ্ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট ঝোটন সিকদার। গাড়ির ভেতরে থাকা এক নারী তার সেই বিনীত অনুরোধের জবাব দিচ্ছিলেন ঠিক এভাবে….।

‘এই কার গাড়ির ছবি তোলো? এটা সরকারি দলের লোকের গাড়ি। কার গাড়ির ছবি তোলো? বেশি…কইরো না! তোমার মতো সার্জেন্ট কয় টাকা বেতনে চাকরি করো’? কয় টাকা বেতনে চাকরি করে তোমার মতো সার্জেন্ট? আমরা প্রধানমন্ত্রীর লোক, ঠিক আছে? যদি সাহস থাকে…আমার বাবা জাতীয় কমিটির সদস্য, আমার বাবা এমপি……. ঠিক আছে? তোমার মতো হাজারটা সার্জেন্ট…ঠিক আছে? কয় টাকা বেতনে চাকরি করো? হ্যাঁ চাকরই তো..চাকরই তো!

 

রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বরে স্কলাস্টিকা স্কুলের সামনে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্টের প্রতি ‘সরকারদলীয় এমপির মেয়ে’ দাবি করা এক নারীর আগ্রাসী আচরণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে কথা বলা ওই নারীর নাম পরিচয় জানা যায়নি। আইন লঙ্ঘন করার ভিডিও নেয়ার সময় পুলিশদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভিডিওটি শেয়ার করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন সার্জেন্ট ঝোটন সিকদার।

পোস্টে লিখেছেন, এই ভদ্র মহিলা মিরপুর ১৩ নম্বর স্কলাস্টিকা স্কুলের সামনে তার প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো গ. ২৬-৯৩৪৭) ডাবল লেনে পার্কিং করে রেখেছেন। তার গাড়ির জন্য পেছনের গাড়িগুলো আসতে পারছে না। প্রচন্ডজ্যাম লেগে আছে। তাকে অনেকবার সবিনয় অনুরোধ করলাম, আপু আপনার গাড়ির ড্রাইভারকে ডেকে দ্রুত গাড়িটি সরিয়ে পেছনের গাড়িগুলো আসার সুযোগ করে দিন এবং জ্যামমুক্ত করেন। কিন্তু না, তিনি আমার কোনো কথা তো শুনলেনই না, বরং আমাকে খারাপ ভাষায় গালাগালি করেন এবং সঙ্গে বলেন তুমি সরকারের দুই টাকার চাকর, আমাকে চেনো তুমি? কার গাড়ি জানো এটা? আরও অনেক খারাপ কথা!’
এ পোস্টির পরে সার্জেন্টের কমেন্টবক্সে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মিহাদ রহমান লিখেছেন, অন্যায় যে করবে সে অপরাধী, হোক আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি কোনো ছাড় নেই। সার্জেন্ট ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য।
এদিকে পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পর ফেসবুকে অনেকেই ওই নারীর কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের ভিডিও শেয়ার করে তার কঠোর সমালোচনা করেন। মো. দিদারুল ইসলাম লিখেছেন, আপনার সাথে যে ব্যবহার করছে এটার জন্য শাস্তি দেয়া দরকার। ভাই সত্যিই আমরা তাদের কাছে অসহায়। আল্লাহর কাছে বিচার দেয়া ছাড়া কোন উপায় নাই।
হাসান রিজভি নামের চট্রগ্রামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, এরা রাস্তাঘাটে সরকারের নাম অন্যায় কাজে বিক্রি করে কষ্টে অর্জিত দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। ফেনীর মো. হারুন নামের এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন, তাহলে বাংলাদেশের আইন এই মহিলার কাছে হার মানলো। তাহলে এই মহিলার কি বিচার হবে না। বাংলাদেশের আইন শুধু রিক্সায়ালার জন্য। রিক্সায়ালা হইলে তো পাচায় বেত দিয়ে পিতাতেন এই আপনাদের আইন।

 

কাজী কামরুল নামে এক ব্যবসায়ী লিখেছেন, ওনাকে ও উনার গাড়িটা আটক করা উচিত ছিল। তারপর দেখা যেত তিনি কোন নেতার বউ বা মেয়ে। এরা দলের ক্ষতি করে। উনার কথাগুলো রেকর্ড করা ছিল তাই আটক করা যেত।

যদিও তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় জানা যায়নি। তবে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পরে একাধিক ব্যক্তির আইডি’র কমেন্টস্ থেকে তার নাম ফারজানা জেসমিন শিমু বলে জানা যায়। তার ফেসবুক প্রোফাইলে পরিচয় দেওয়া ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী। এছাড়া দেশের ‘সড়ক ব্যবস্থাপনা মেরামতে’ শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মতো বড় ঝাঁকুনি দেওয়ার পরও নিয়ম ভেঙে উল্টো ট্রাফিক সার্জেন্টকে এমন হুমকি দেওয়ায় ওই নারীর তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকে তার পরিচয় শনাক্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।