রাজশাহী-খুলনায় পাটকলে আমরণ অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শ্রমিকরা

0
240

খুলনাটাইমস: বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে রাজশাহী ও খুলনা আমরণ অনশনে থাকা পাটকলের শ্রমিকদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রাজশাহী: রাজশাহী পাটকল শ্রমিকদের গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মত আমরণ অনশন চলে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে জুটমিলের প্রধান ফটকে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। রাজশাহী জুট মিলসের সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জিল্লুর রহমান বলেন, আগের রাত থেকে সকাল পর্যন্ত পাঁচ শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরা হলেন- মোস্তাফিজুর রহমান (৪০), সাইদুর রহমান (৫৫) ও আবদুল গফুর (৪৮), মনসুর ও পাটকলের অবসরপ্রপ্ত কর্মচারী আসলাম হোসেন (৬৫)। তাদের মধ্যে গফুর, আসলাম ও মনসুরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জিল্লুর রহমান জানান। তিনি বলেন, রাতে তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়লে জুট মিলের চিকিৎসক মাহফুজুর রহমান তাদের প্রাথমিক পরীক্ষা করে আসলামকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। আর মোস্তাফিজুর ও সাইদুরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আবদুল গফরকে এবং বেলা ১১টার দিকে মনসুরকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। দেশের ২৬টি রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকলের মধ্যে ১২টি পাটকলের শ্রমিকরা এই আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে খুলনা অঞ্চলের নয়টি, রাজশাহীর একটি নরসিংদীর একটি এবং চট্টগ্রামের একটি পাটকলের শ্রমিকরা রয়েছেন বলে শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন। নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে অন্য পাটকলের শ্রমিকরা এ কর্মসূচিতে অংশ নেন নি বলেও জানান তারা। আন্দোলনরতদের ১১ দফা দাবির মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারীর সিদ্ধান্ত বাতিল, কাঁচা পাট কিনতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা কথা রয়েছে। জিল্লুর রহমান বলেন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারীর সিদ্ধান্ত বাতিল, কাঁচা পাট কিনতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধসহ ১১ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত তাদের এ কর্মসূচি চলবে। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত ২৩শে নভেম্বর থেকে দেশের ১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা সভা, বিক্ষোভ মিছিলসহ ধর্মঘট পালন করে আসছে বলে জানান তিনি।
খুলনা: ক্রমান্বয়ে বাড়ছে খুলনায় আমরণ অনশনে গিয়ে অসুস্থ হওয়া শ্রমিকের সংখ্যা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টা পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের প্রায় শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের অনেককে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শ্রমিক নেতারা জানান, আগামী ১৫ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় পাট মন্ত্রণালয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পাটমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য গত বুধবার রাতে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত খুলনার কর্মসূচি স্থগিত করার অনুরোধ করেছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। কিন্তু শ্রমিকরা তা মানেনি। এর আগে মঙ্গলবার থেকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের শ্রমিকরা। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে তারা এ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। আন্দোলনে থাকা পাটকলগুলো হচ্ছে- ক্রিসেন্ট জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল, স্টার জুট মিল, আলিম জুট মিল ও ইস্টার্ন জুট মিল, কার্পেটিং জুট মিল ও জেজেআই জুট মিল। আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলেন, শ্রমিকরা নিজেদের কাঁথা-কম্বল নিয়ে অনশনে নেমেছে। সমস্যার সমাধান করতে যদি মরতে হয়, তবুও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চলবে। এর আগ পর্যন্ত শ্রমিকরা ঘরে ফিরবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, শীতে এবং অনাহারে থাকায় প্রায় শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে ২৫/২৬ জনকে খুমেক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের অনশন স্থানেই স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গত বুধবার রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বাসায় শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রতিমন্ত্রী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করার প্রস্তাব দেন। ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার মিটিংয়ে শ্রমিকদের দাবি পূরণ হবে। কিন্তু শ্রমিক নেতারা মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবে বালে জানান। এদিকে অনশন কর্মসূচির কারণে পাটকলগুলোতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। একইসঙ্গে বিআইডিসি সড়কের দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে। পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলনে খুলনার শিল্পাঞ্চল উত্তাল হয়ে পড়েছে। অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে গোটা শিল্পাঞ্চলে। গত ১৭ নভেম্বর ১১ দফা দাবিতে ৬ দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। গত ২৫ নভেম্বর থেকে কর্মসূচি শুরু হয়।