যৌবন হারিয়েছে কয়রা উপজেলা যুবলীগ

0
408

ওবায়দুল কবির সম্রাট: খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার যুবলীগের নতুন কমিটি না হওয়ায় এক যুগেরও বেশি পুরানো যুবলীগের কমিটি হারিয়েছে যৌবন, থেমে আছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। বয়স্ক, নিষ্ক্রিয়, বিদ্রৌহী, বিতর্কিত ও নানামুখী অপরাধে অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে দলের দুঃসময়ে নির্যাতিত, ত্যাগী, পরিচ্ছন্ন, সাবেক ছাত্রনেতা এবং তারুণ্যনির্ভর ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি করার দাবি জানিয়েছেন কয়রা উপজেলার তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৬ সালে কয়রা উপজেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়। ওই কমিটিতে এস এম শফিকুল ইসলামকে সভাপতি এবং জাফরুল ইসলাম পাড়কে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছর পরেও কয়রা উপজেলায় যুবলীগের নতুন কোন কমিটি হয়নি। এতে যুবলীগের বর্তমান কমিটি সাংগঠনিক গতিশীলতা তথা প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী, বর্ধিত সভা, দলীয় নির্দেশনা স্থবির হয়ে গেছে। যুবলীগের অনেকেই এখন আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। এছাড়া যুবলীগের সভাপতি এস এম শফিকুল ইসলাম গত উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান হন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম পাড় বর্তমানে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন।
এভাবে কয়রা উপজেলার যুবলীগের দায়িত্বশীল নেতারা আওয়ামী লীগ সহ অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত। এতে একদিকে যেমন হারাতে বসেছে যুবলীগের অতীত ইতিহাস এবং ঐতিহ্য। অন্যদিকে কয়রা উপজেলায় যুবলীগ যৌবন হারিয়ে ঝিমিয়ে পড়েছে। এমনটাই দাবী করছে যুবলীগের পদ প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় যুবলীগ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। প্রার্থী হিসেবে আসন্ন কমিটিতে পদ পেতে কাজ শুরু করেছে কয়রা উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ সহ অনেকে। এতে নড়বড়ে কমিটি ছাড়াও ওয়ার্ড, ইউনিট পর্যায়ের একাধিক নেতা আগামী যুবলীগের কমিটিতে স্থান পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলা যুবলীগের নতুন কমিটি সম্মেলন কিংবা ঘোষণা, যেভাবে হোক যুবলীগের কমিটিতে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে মরিয়া দীর্ঘদিন ধরে পদ প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। সাংগঠনিক সম্পাদক সহ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে লবিং করছে সাবেক অনেক ছাত্রলীগ নেতারা। ছাত্ররাজনীর সম্মুখ শ্রেণিতে থাকা সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা দীর্ঘদিন যুবলীগের কমিটি না হওয়ায় তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত। যত দ্রæত সম্ভব মেয়াদোত্তীর্ণ কয়রা যুবলীগের আসন্ন নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসতে তারা দলের ঊধ্বর্তন দায়িত্বশীলদের আশীর্বাদ চেয়েছেন।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর অন্তর সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও দীর্ঘদিনে তা আর হয়ে উঠেনি কয়রা উপজেলায়। উপজেলার সবগুলো ইউনিয়ন কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। নেতৃত্ব শূণ্যতায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে যুবলীগের কার্যক্রম। এতে ত্যাগী ও পরীক্ষিতরা হচ্ছেন বঞ্চিত, এমনটাই অভিযোগ দুই ভাগে বিভক্ত উপজেলা যুবলীগ নেতাকর্মীদের।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও কয়রা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ্যাড. কেরামত আলীর ছেলে সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমান যুবলীগকে সুসংগঠিত করতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে যুবলীগের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
জানতে চাইলে সাবেক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ খুলনা জেলা শাখার সাবেক প্রচার সম্পাদক ও যুবলীগনেতা এ্যাড. আরাফাত হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন সংগঠনের কমিটি না হওয়ায় সাংগঠনিক কর্মকাÐে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান কমিটির অনেকে বিতর্কিত, বয়স্ক ও দলের বিদ্রোহী। কমিটির কোন কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ে না। বাংলাদেশ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক সংগঠনকে শক্তিশালী করতে দ্রæততম সময়ের মধ্যে কয়রা যুবলীগের নতুন কমিটি দিয়ে হতাশাগ্রস্থ, যৌবন হারা যুবলীগকে চাঙ্গা করার ব্যবস্থা করবেন।তিনি বলেন, তিনি বলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের ঘোষনা অনুযায়ী গত ২৭ মার্চ সারা দেশব্যাপী হেফারত, জামায়ত ও বিএনপির সহিংসতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিলেও সে অনুযায়ী উপজেলা যুবলীগের পক্ষথেকে কোন কর্মসূচি পালন করা হয়নি পরে আমি সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে সফল ভাবে কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচি পালন করলে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কাছে হেনস্তার শিকার হই। শুধু তাই নয় এর আগে যুবলীগের প্রতিষ্টা বার্ষিকি পালন করায়ও রীতিমত হেনস্তার শিকার হতে হয় ওই য্বুলীগ নেতার হাতে।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজামান বাবু ভাইয়ের দিক নির্দেশনায় যুবলীগকে সংগঠিত করতে সাবেক ছাত্রলীগকে সংগঠিত করছি। দল আমাকে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যোগ্য মনে করলে আমি দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। করোনায় গরীব-অসহায় যুবলীগের কর্মীসহ হাজার হাজার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে যুবলীগের পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু ভাইয়ের সহযোগিতায় খাদ্য ও বস্ত্র, চিকিৎসা সামগ্রী ও আর্থিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। করোনাকালীন সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উপজেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে আমি সব সময় সাধারণ জনগণের পাশে থেকেছি, মানবিক সহায়তা করেছি আর ভবিষ্যতে করবো।
কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক ইমদাদুল হক টিটু বলেন, দীর্ঘদিন সম্মেলন হচ্ছে না। এক কমিটি আর কতো দিন, কবে কমিটি হবে? অনেক বছর পার হয়ে গেছে। নতুন কমিটি না হওয়ার কারণে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। সাংগঠনিক কর্মকাÐেও স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে তিনি দাবি করেন।
সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন লাভলু বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও হরতালের নামে সাধারণ মানুষ হত্যার প্রতিবাদে আমি প্রতিটি কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে প্রতিরোধ করি। সম্প্রতি সকল অরাজকতা ও নাশকতা বিরোধী কর্মকাÐ প্রতিরোধ কর্মসূচিতেও আমরা ছিলাম। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঝিমিয়ে পড়া, যৌবন হারা যুবলীগকে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করছি।
নেতা-কর্মীরা বলছেন, পদ চলে যেতে পারে, এমন শঙ্কায় এত দিন যুবলীগের সম্মেলন দেওয়া হয়নি। যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের মূল কমিটিতে ভালো পদ পাননি বলেই সম্মেলন দিতে গড়িমসি করছেন।
উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক জাফরুল ইসলাম জানান, জেলা যুবলীগকে বার বার জানিয়েছি তারা সভাপতির সাথে আলাপ আলোচনা সাপেক্ষে সম্মেলন করার কথা বলেন কিন্তু সভাপতি সময় হয়ে ওঠেনি এবং বিভিন্ন বাধা বিপত্তি আসায় সম্মেলন আটকে আছে।
তবে এ বক্তব্য মানতে নারাজ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটা পদ ধরে রাখার বিষয় না। আমরা জেলা ও কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে সকল কর্মসূচি সফল ভাবে পালন করে আসছি।যুবলীগকে সংগঠিত করতে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে উপজেলা যুবলীগ। তিনি আরও বলেন, আমরাও চাই দীর্ঘ দিনের কমিটি নতুন কেউ আসুক। আমরা জেলাকে বার বার জানিয়েছি কিন্তু জেলা কমিটির অনেকে মুল দলে বড় বড় পদে আছেন। জেলা ও কেন্দ্র থেকে নির্দেশা না পাওয়ায় সম্মেলন করা হয়নি।