যশোরের চৌগাছায় চলতি মওসুমে চিনাবাদাম উৎপাদনে হতাশ চাষীরা

0
102

কে এম রফিক, যশোর
যশোরের চৌগাছায় চলতি মওসুমে চিনাবাদাম উৎপাদন ব্যাপক ভাবে হ্রাস পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষীরা।
চাষীদের অভিযোগ চিনাবাদামের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলের ফলনে এমন বির্পযয় সৃষ্টি হলেও চৌগাছা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কোন প্রকার খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, চৌগাছা উপজেলায় প্রায় দুইশ হেক্টর জমিতে চীনা বাদামের চাষ হয়ে থাকে। তবে উপজেলার বাদাম উৎপাদনের সিংহভাগ উৎপাদিত হয় জগদিশপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর, স্বর্পরাজপুর, কান্দি ও জগদিশপুর গ্রামে, পাতিবিলা ইউনিয়নের পাতিবিলা, মুক্তদাহ ও নিয়ামপুর গ্রামে ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের ইলেশমারি, ভগবানপুর, হোগলডাঙ্গা, বড়খানপুর, বাদেখানপুর, নারায়ণপুর, পেটভরা, গুয়াতলী, বুন্দলীতলা, বাটিকামারি, হাজরাখানা ও টেঙ্গুরপুর গ্রামে ব্যাপকভাবে বাদামের চাষ হয়ে থাকে।
ভগবানপুর গ্রামের কৃষক আবুজার রহমান বলেন, চলতি মওসুমে তিনি তিন বিঘা জমিতে চিনা বাদাম চাষ করেছিলেন। তিন বিঘা জমিতে যেখানে কমপক্ষে ২৫ মন বাদাম উৎপাদন হওয়ার কথা সেখানে বাদাম উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১২ মন।
একই গ্রামের বাদাম চাষী তোহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন তার বাদাম উৎপাদন হয়েছে মাত্র দুই মন।
বাদাম চাষীদের মধ্যে ভগবানপুর গ্রামের ওহিদুল ইসলাম দেড় বিঘা, রফিকুল ইসলাম দুই বিঘা, লিয়াকত আলী পাঁচ বিঘা, আব্বাস আলী আড়াই বিঘা, আজিজুর রহমান সাড়ে চার বিঘা, আলী হোসেন সাড়ে তিন বিঘা, আবুল বাশার আড়াই বিঘা, অমেদুল আড়াই বিঘা ও মতিয়ার রহমান তিন বিঘাসহ এ গ্রামের প্রায় সকল কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। তারা সবাই বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বাদামের উৎপাদন অর্ধেকেরও কম হয়েছে।
মির্জাপুর গ্রামের বাদাম চাষী মিজানুর রহমান বলেন, বাদাম চাষ একটি অত্যান্ত লাভজনক চাষ। প্রথমত বাদাম চাষের জন্য তেমন কোন উর্বর জমির প্রয়োজন হয়না। দ্বিতীয়ত বাদাম চাষে জমির উপরে কোন সার প্রয়োগ করতে হয়না। কেবলমাত্র মাটির তলাতে সার প্রয়োগ করলেই চলে। তৃতীয়ত বাদাম মাত্র তিন মাসের মধ্যে উৎপাদিত হয়। এসব কারণে বাদাম চাষে খরচ কম লাভ বেশি। যারফলে আমাদের এলাকার কৃষকেরা প্রচুর পরিমানে বাদাম চাষ করে থাকে। কিন্তু এ বছর বাদামের উৎপাদনে একেবারে ধ্বস নেমেছে।
বাদাম চাষী আবুজার রহমান বলেন, বাদাম অল্প সময়ের ফসল। ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময় বাদামের বীজ রোপন করতে হয় আর অগ্রহায়ণ মাসের শেষ থেকে পৌষ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বাদাম উঠানো হয়ে যায়। তাছাড়া কম খরচে বাদামে বেশি টাকা লাভ হয় যারফলে কৃষকেরা বাদাম চাষে আগ্রহী হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন এ বছর বাদামের উৎপাদন কম হলেও অন্যবারের তুলনায় দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর বাদামের মন প্রতি দাম ছিল ৫/৬ হাজার টাকা। এ বছর সেখানে মন প্রতি বাদাম বিক্রি হচ্ছে দশ থেকে এগারো হাজার টাকা।
এ বছর বাদাম উৎপাদন এত কম কম হওয়ার কারণ স¤পর্কে জানতে চাইলে কৃষক আলী হোসেন ও আবুল বাশার বলেন, আমরা ধারনা করছি এ বছর বাদামের যখন ফুল এসেছিল তখন বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছিল সেকারণে হয়তো ফলন কম হতে পারে। এ ছাড়া ভিন্ন কোন কারণেও ফলন কম হতে পারে, আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা।
ফলন কম হওয়ার কারণ জানতে কোন কৃষি কর্মকর্তা বাদামের ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন কিনা জানতে চাইলে বাদাম চাষীরা বলেন এ বছর না, বিগত এক যুগেও কোন কৃষি কর্মকর্তা আমাদের বাদামের ক্ষেত পরিদর্শন করেনি। তারা আক্ষেপ করে বলেন, শুনেছি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা হাজার হাজার টাকা বেতন পান অথচ কৃষকেরা তাদের চিনেনা। তারা আরো বলেন বাদাম যে আমাদের দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল তা হয়তো কৃষি কর্মকর্তারা জানেনা।
বাদামের উৎপাদন স¤পর্কে জানতে চাইলে নারায়ণপুর গ্রামের কৃষক তুহিন সর্দার বলেন, বাদাম একটি চমৎকার ফসল। বাদাম চাষে খরচ কম আবার লাভ বেশি। তিনি বলেন বাদাম বিক্রি করে কেবল লাভ বেশি হয় তাই নয়, বরং বাদাম গাছ গরু ছাগলের উৎকৃষ্ট খাবার। সারা শীতকাল জুড়ে গরুছাগলকে বাদামের গাছ খাওয়ানো গেলে গরু ছাগলের স্বাস্থ্য অটুট থাকে এবং মাংস বৃদ্ধি পায়। একারণে আমাদের এলাকার কৃষকেরা বাদাম চাষে আগ্রহী হয়। তিনি বলেন এ বছর বাদামের ফলন ব্যাপক হারে কম হওয়া সত্বেও কৃষি বিভাগের কোন মাথাব্যথা নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বি হুসাইনের কাছে ফলন কম হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবহাওয়া জনিত কারণে কোন কোন গ্রামে বাদামের উৎপাদন কম হতে পারে। আমরা মাঠ পর্যায়ে খোঁজ খবরনিয়ে বাদামের ফলন বৃদ্ধি করতেই চাষীদের পরামর্শ দেবো।