মোড়েলগঞ্জে একান্ত সাক্ষাৎকারে যুদ্ধকালিন কমান্ডার লিয়াকত আলী খান : স্মৃতি বিজড়িত ৭১ আজও কাঁদায়

0
459

এম.পলাশ শরীফ,মোড়েলগঞ্জ থেকে॥
১৯৭১ সালে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজবুর রহমানে ডাকে ৭ই মার্চের ভাষনের পরই বাংলার দামাল ছেলেরা সেদিনকে মুক্তিযুদ্ধে যাপিয়ে পড়েছিলেন। ৭১ এর স্মৃতি আজও কাদায়। চোঁখের সামনে সহযোদ্ধার করুন আর্তনাদ পাক সেনাদের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন সেদিনকারা যে সব বীর সেনারা।
তাদের স্মৃতি চারনে মহান বিজয় দিবসে সর্ব প্রথম সকল বীর শহিদদের শহিদ বুদ্ধিজীবিদের, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রায়ত শেখ আব্দুল আজিজ সহ সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর(অবঃ) জিয়া উদ্দিন, স.ম. কবির আহম্মেদ মধু, নূর মোহাম্মদ হাওলাদার তথা সকল মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশ বাসী তথা স্বাধীনতা স্ব-পক্ষের সকল শক্তির প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা।
সম্প্রতি একান্ত সাক্ষাৎকারে মোড়েলগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও সুন্দরবন সাব-সেক্টরের যুদ্ধকালিন কমান্ডার লিয়াকত আলী খান বলেন, মোরেলগঞ্জের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত কাহিনী উপস্থাপন করতে ভিষনভাবে অনুপ্রনিত করে। চোঁখের সামনে প্রথম শহীদ হয়েছিলেন সহযোদ্ধা মোসলেম আলী হাওলাদার, ২য় শহীদ আবু বকর সিদ্দিক, ৩য় শহীদ নজরুর ইসলাম মুকুল পরে অনেকেই শহীদ হয়েছেন যাদের তালিকা উপজেলা চত্বরে স্মৃতি ফলকে লিপি বদ্ধ হয়েছে। শহীদ মোসলেম আলী শহীদ হয়েছেন খুলনার গল্লামারি রেডিও সেন্টার দখলের সময়।
এ সময় তার লাশটা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। শহীদ আবু বকর শহীদ হয়েছেন মোরেলগঞ্জ প্রথম যুদ্ধে কবর হয়েছে তার নজি বাড়ি কাঠালতলা গ্রামে। প্রতিবছর মুক্তিযোদ্ধারা প্রশাসন সহ তাকে শ্রদ্ধা জানাতে কবরের পাশে দাড়িয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই। তার রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করা হয়। তার মা বাবা কেউ বেঁচে নেই । তার ভাইয়েরা কয়েকজন বেচে আছে। অনেক বছর পরে শহীদ ভাতা চালু হয়েছে। আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। যে শহীদের ভাই বোনেরাও ভাতার আওতায় এসেছে। ৩য় বীর শহীদ নজরুল ইসলাম মুকুল বিএসসি পাশ করার পরে আমড়া গাছিয়া হাই স্কুলে বি এসসি শিক্ষক হিসেবে চাকুরী রত অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন।
প্রথমে ভারতে প্রশিক্ষন নিয়ে ৯নং সেক্টরে সুন্দরবন সাব-সেক্টরের মেজর জিয়া উদ্দিনের হাত ধরে সুন্দরবন সাব-সেক্টরের স্টুডেন্ট ক্যাম্পে যোগদেন। যোগদেন মুকুল তৎকালিন সে ক্যাম্পে নের্তৃত্ব ছিলাম আমি মো. লিয়াকত আলী খান। সুন্দরবন সাব-সেক্টরের মধ্যে সবচেয়ে বিহৎ ক্যাম্প ছিলো স্টুডেন্ট ক্যাম্প। প্রায় ৫ শতাধিক ছাত্র নিয়ে গঠিত এ ক্যাম্পটি সুন্দরবনের গহিন জঙ্গলের ভিতরে একটি মিনি ক্যান্টনমেন্টের মতই সাজানো হয়েছিলো। প্রকাশ থাকে যে ভারত থেকে যে সব প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আসতো তারা সবাই স্টুডেন্ট ক্যাম্পে নাম অর্ন্তভূক্ত করতেন।
পরবর্তীতে মেজর জিয়া উদ্দিন স.ম. কবির আহম্মেদ মধুর নির্দেশে বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হতে তাদের। শহীদদের কথা লিখতে গিয়ে অনেক কিছু লিখে ফেললাম। শহীদ নজরুল ইসলাম মুকুলের শহীদ হবার বনর্না এক ভয়াবহ মোরেলগঞ্জে এক ভয়াভহ যুদ্ধ হয় রাজাকারদের সাথে। এসি লাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকারের ক্যাম্প। ক্যাম্পটি উড়িয়ে দিতে নির্দেশ আসলো। একত্রে ৪টি স্থান থেকে নির্দিষ্ট করে ৪ জন কমান্ডের আওতায় যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে নজরুল ইসলাম মুকুল গুরুত্বর জখম হয়। পরবর্তীতে তাকে চিকিৎসার জন্য ভারতের পাঠাবার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। পথিমধ্যে শ্যাওলা নদীতে পাক বাহিনীর বিমান এবং নৌ-বাহিনীর গান বোর্ডের সামনে পড়ে যায়।
নজরুল ইসলাম মুকুলের মৃত্যু এতোটা বেধনাদায়ক আজও মনে পড়লে তার সেই স্মৃতি বারে বারে আমাকে কাঁদায়। সেদিনের সেই করুন দৃশ্য মনে করলে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা। সেই মৃত্যুক্ষনে সমস্থ সুন্দরবনের পশু পাখি তাদের কোলাহল বন্ধ রেখে নিরবে নিভূত্তে প্রত্যক্ষ করেছে। পাক বাহিনীর নর পিচাশরা তাকে একটি দ্বীপের মধ্যে বসিয়ে রেখে প্রথমে তার হাত পা গুলি করে ভেঙ্গে চরে বসিয়ে রাখে। ওপরে বিমান ও নদীতে গার্নবোর্ড পাহারা দিচ্ছিলো। কেউ ওকে উদ্ধার করতে আসে কিনা। আমাদের লোকবল এব অস্ত্র-সস্ত্রের সল্পতা ছিলো বিধায় আমরা তাকে উদ্ধার করতে পারিনি।
ওই চরটি যখন জোয়ারের পানিতে ডুবুডুবি তখনি এই জোয়ারের পানিতে ভেসে মুকুল শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুকুল আর্তনাথ করেছিলো কে আছো আমাকে বাঁচাও। আমি এখনও বেঁচে আছি। এরই নাম মুক্তিযোদ্ধা এর-ই-নাম স্বাধীনতা। শহীদের রক্তের সাথে যদি বেইমানি করে তাকে আমরা ছাড়বনা । আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শহীদের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার জন্য বিশেষ আহ্বান জানান তিনি।