মোরেলগঞ্জের পানগুছিতে ভাঙ্গন, হুমকিতে ১০ গ্রাম

0
212

নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাঙ্গের ভাঙ্গন কেউ আর থামাইতে পারে না, খালি ভাঙ্গে আর ভাঙ্গে। ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি, দোকানপাট-জায়গা-জমি হারিয়ে এখন আর সরে যাওয়ার জায়গাও নাই। বর্ষায় প্রবল ¯্রােত নদীর পাড়ের মাটি ধুয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে যায়। গাঙ্গ ভাঙ্গে আর ভাঙ্গে…’ এভাবেই নদী ভাঙনের কথা বলছিলেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পানগুছি নদীর তীরবর্তী পঞ্চকরনের পাচগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সত্তার মাঝি, ওই গ্রামের একজন স্বচ্ছল কৃষক ছিলেন তিনি। কিন্তু টানা নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এখন সর্বশান্ত। সবশেষ তার বসতভিটাও নদী গর্ভে বিলীনের অপেক্ষায়। এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- মোরেলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রাম, বারইখালী ইউনিয়নের কাষ্মামীর গ্রাম, পঞ্চকরনের পাচগাঁও গ্রাম, বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ফুলহাতা গ্রাম, পুটিখালি ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রাম সহ নদীতীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের বিভিন্ন এলাকা এখন নদীর ভাঙনে ভাঙনে রীতিমতো বিপর্যস্ত। প্রতি বছরই ভাঙ্গনের শিকার হয় পানগুছির নদীর কোলঘেষা অনেক গ্রাম । সিডর,আইলা,আমফানের মত বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে ভাঙ্গন কবলিত লোকালয়ের মানুষদের টিকে থাকতে হয়,ভুক্তভোগী এলাকার সাধারন মানুষ জানান ঘুর্নিঝড় আমফানের পরে নদীর তীরে কয়েকটি গ্রামে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। গত বছর ঘুর্নিঝড় আমফানের পওে নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন উপজেলার বহরবুনিয়া, পঞ্চকরন, পুটিখালী, বারইখালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের অন্তত অর্ধশত পরিবার। তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পাশে পায় নি বলে অভিযোগ ভাঙন কবলিতদের। বারইখালীর কাষ্মীর গ্রামের স্থানীয় একজন চায়ের দোকানদার জানান তার দেখা ১২ বছরে নদী কমপক্ষে ১০০ মিটার ভেঙেছে। মূল নদী তাদের গ্রাম থেকে অনেক দূরে ছিল। কিন্তু এখন নদীর দক্ষিণ পাড়ে বিশাল চর জেগে উঠেছে। নদী চলে এসেছে তাদের বাড়ির আঙিনায়। কিন্তু এতদিন পেরিয়ে গেলেও ভাঙন রোধে কেউ কোনও উদ্যোগ নেয়নি। ফলে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব সময় নদী ভাঙছে। এখন নদী ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।এদিকে বহরবুনিয়া গ্রামের ফুলহাতা গ্রামের প্রতিনিয়ত নদীর ফাটল দেখা দিয়েছে। কিছুদিন পরপর এসব ফাটল নদী গর্ভে ধসে যায় গত কয়েক বছরে পানগুছির ভাঙ্গনে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসত বাড়ি ও আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সরেজমিনে স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে গত কয়েক বছরে শত একর আবাদি জমি বিলীন হয়েছে নদী গর্ভে। বাড়িঘর হারিয়ে ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিনের ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতিনিয়ত পানগুছির ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে এসব নদীতীরবর্তী গ্রামগুলো। সোনাখালী গ্রামের নেসার উদ্দিন জানান, প্রায় কয়েকবছর ধরে নদীভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। নদী সবকিছু কেড়ে নিয়ে তাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। গৃহহারা হয়েছে পরিবার। খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্টে জীবন পার করছেন তারা। একই এলাকার গৃহবধূ সালেহা বেগম বলেন, কোথায় যাব কিছুই বুঝতে পারছি না। বর্তমানে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। প্রতি বছরই নদী ভাঙ্গছে, এরপরও ভাঙ্গন রোধে কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। বাধ্য হয়ে নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরে আবারো বসতি গড়ার চিন্তা করছি। পানগুছি নদীর এই ভাঙন প্রতিরোধ করতে হলে সুনির্দিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। ইতিমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাডঃআমিরুল আলম মিলন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এম পি, কে মোরেলগঞ্জের নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করিয়েছেন, নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন কালে মন্ত্রী পানগুছির ভাঙ্গন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে একটি বড় প্রকল্প গ্রহন করার কথা বলেছিলেন, বর্তমানে সেই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকাবাসীর দাবি স্থানীয় সাংসদের প্রচেস্টায় সরকার তাদের এই নদী ভাঙ্গন রোধে অতিদ্রæত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এ ব্যপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেস্টা করলে তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে অফিস সুত্রে জানা যায় ভাঙন প্রতিরোধে তারা বড় ধরনের প্রকল্প জমা দিয়েছে। অনুমোদন পেলে তারা কাজ শুরু করবে। এটি মন্ত্রণালয় অনুমোদন করলে পানগুছির এই ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব