মেয়র রিটন যেভাবে মেহেরপুরের যুবকণ্ঠ থেকে গণকণ্ঠ হয়ে উঠলেন

0
152

মাহফুজুর রহমান রিটন মেহেরপুরের আওয়ামী রাজনীতিতে এক ধুমকেতুর নাম। স্বল্প রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দল, মত নির্বিশেষে গণমানুষের নজর কেড়েছেন এই সুদর্শন যুবনেতা। পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড এবং বন্ধুর পথে ক্লান্তিহীন নিরন্তর সংগ্রামের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেহেরপুরের রাজনীতিতে তিনি আজ এক আলোকিত নাম। মাহফুজুর রহমান রিটনের জন্ম ১৯৮০ সালে। অবৈধ সামরিক শাসক জেনারেল জিয়ার নির্বাচনের নামে প্রহসনের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে ৭৫ পরবর্তী বিধ্বস্ত আওয়ামীলীগ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় রত। এমনই সময়ে ৩০ জুন মেহেরপুর সদর উপজেলার ১ নং ওয়ার্ডের পিয়াদা পাড়ায় আব্দুল হালিম এবং সুরুজ জাহান দম্পতির কোল আলো করে ধরাধামে আসেন  ফুটফুটে এক পুত্র সন্তান। নাম রাখা হয় মোঃ মাহফুজুর রহমান রিটন। মেহেরপুর পৌরসভার এক কোণায় জন্ম নেওয়া সেদিনের সেই ফুটফুটে শিশুটিই আজকে হাজারো পৌরবাসীর কাছে আলোকবর্তিকা।

সংগ্রামের উত্তাল ঢেউয়ে জন্ম নেওয়া রিটন যেন মায়ের কোল থেকেই মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হন। অল্প বয়সেই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারীর ভোটারবিহীন নির্বাচন প্রতিহত করতে সারাদেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রাম যখন তুঙ্গে, এমনি সময়ে এইচ এস সি প্রথম বর্ষের ছাত্র রিটন সংগ্রামের বন্ধুর পথ বেছে নেন। মাত্র ১৫-১৬ বছর বয়সে শামিল হন ছাত্রলীগের পতাকাতলে। ২০০৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের চরম দুঃসময়ে মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিএনপি-জামায়াত জোট এবং ওয়ান ইলেভেন সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন তরুণ ছাত্রনেতা রিটন। ২০১০ সালের পর যুবলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। বিরোধী দলে থাকাকালীন আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় থাকার পুরস্কার হিসেবে জেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। যুবলীগকে সংগঠিত করতে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

কিন্তু পরের বছর তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকারের কালো ছায়া। ২০১১ সালের ১ এপ্রিল রাতে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় বড় ভাই শহর যুবলীগের সাধারন সম্পাদক এবং মেহেরপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মিজানুর রহমান রিপন মারাত্মকভাবে জখম হন। এক সপ্তাহ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ৮ এপ্রিল পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন যুবলীগের দক্ষ সংগঠক এবং তুমুল জনপ্রিয় এই কাউন্সিলর। বড় ভাইয়ের মৃত্যুতে অভিভাবকহীন হয়ে পড়া রিটন ভেঙে পড়েন নি। বরং ভাইয়ের শূন্যস্থান পূরনে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ রিটন রাজনীতিতে আরো বেশি সক্রিয় হন। শপথ নেন বড় ভাইয়ের প্রাণের সংগঠন যুবলীগকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার। প্রচন্ড সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পন্ন রিটন অল্প সময়েই জেলা যুবলীগের নিয়ন্ত্রণ নেন। ফলে ২০১৫ সালের পরবর্তী কাউন্সিলে তার সাংগঠনিক দক্ষতা এবং বড় ভাইয়ের অকাল মৃত্যুজনিত কারনে তার প্রতি নেতৃত্বের অপরিসীম সহানুভূতি তাকে জেলা যুবলীগের আহবায়ক নির্বাচিত করতে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

জেলা যুবলীগের আহবায়ক হয়ে তিনি যুবলীগকে ইতিবাচক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করেন। এর মাধ্যমে তিনি মেহেরপুরের যুবসমাজের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হন। সমগ্র জেলাব্যাপী যুবলীগকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার পাশাপাশি তিনি মেহেরপুর পৌরবাসীর অধিকার আদায়ে ও ছিলেন সদা তৎপর। সীমানা জটিলতার মামলা বছরের পর বছর জিইয়ে রেখে কৌশলে মেহেরপুর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করে রেখে যারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল তাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন যুবনেতা রিটন। তারই প্রচেষ্টায় সীমানা জটিলতা মামলার অবসান হয় এবং দীর্ঘবছর পর ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে মেহেরপুর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামীলীগের অনেক হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশীকে টপকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন ছিনিয়ে আনেন মাত্র ৩৭ বছর বয়সী যুবনেতা মাহফুজুর রহমান রিটন। নির্বাচনে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে ১৯৭৫ সালের পর আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথম বারের মত মেহেরপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন অপেক্ষাকৃত তরুণ এই যুবনেতা।

১৫ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন মেয়র রিটন। তার দায়িত্ব পালন ছিল অনেক চ্যালেঞ্জের। দলের অভ্যন্তর এবং বাহিরের অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। তবে সকল চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিবন্ধকতাকে তার বুদ্ধিমত্তা এবং সাংগঠনিক দক্ষতার সাহায্যে মোকাবিলা করে পৌরবাসীর আকাঙ্খা বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করেছেন এই তরুণ জনপ্রতিনিধি। মেয়র নির্বাচিত হয়ে পৌরসভায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করেন তিনি। অসংখ্য রাস্তাঘাট সংস্কার ও নির্মাণ করেন তিনি। যুবসমাজকে মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষা করতে তাদেরকে বিভিন্ন খেলাধুলা এবং সামাজিক ও মানবিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করেন। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পৌরবাসীর জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে আধুনিক ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ নির্মাণের কাজ শুরু করেন যা প্রায় সমাপ্তির পথে। মেয়র রিটনের উদ্যোগে পৌরবাসীর বিনোদনের জন্য ১৩.৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের “গড় পুকুর” টির ব্যাপক সংস্কার ও আধুনিকায়নের কাজ চলমান। যেখানে থাকবে রেস্টুরেন্ট, কফি হাউজ সহ মানুষের অবসর সময় কাটানোর নানাবিধ ব্যবস্থা। আধুনিক পৌর মার্কেট, কাঁচাবাজার এবং মাছ, মাংসের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন বাজার নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে হাতে নিয়েছেন তিনি। নির্মাণ করেছেন পরিবেশবান্ধব আধুনিক কসাই খানা।

করোনা ভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাবে ২০২০-২১ দু’বছর সমগ্র পৃথিবী স্থবির হয়ে পড়েছিল। মানুষের জীবন বাঁচাতে দেশে দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। করোনা আক্রান্ত স্বামীকে ছেড়ে স্ত্রীর চলে যাওয়া কিংবা করোনায় মৃত্যুবরণ করা পিতার লাশ গ্রহণে সন্তানের অস্বীকৃতি জানানোর মত ভুরিভুরি ঘটনা পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিল। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা অনেকের জানাযা পড়ার জন্য ইউএনও এবং কয়েকজন পুলিশের সদস্য ছাড়া কোনো মানুষ পাওয়া যায় নি। জীবনের ভয়ে মানুষ যখন স্বেচ্ছায় চার দেয়ালের মধ্যে নিজেকে বন্দী করে রেখেছিল এমন ভীতিকর পরিবেশে ও ঘরে থাকেন নি মেয়র রিটন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের ঘরে ঘরে স্বশরীরে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক পৌঁছে দিয়েছেন। মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ করেছেন। অসহায় ও কর্মহীন হয়ে পড়া খেটে খাওয়া পৌরবাসিকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। করোনাকালীন সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাঠানো ত্রাণসামগ্রীর পাশাপাশি তিনি নিজ উদ্যোগে ঝড়, বৃষ্টি, করোনা এবং সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় ও দরিদ্র ১৪,০০০ পরিবারের সদস্যদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। গণমানুষের প্রতি তার এই অপরিসীম দরদ ও মমত্ববোধ তাকে গণমানুষের হৃদয়ে জায়গা করে দিয়েছে। পৌরসভাকে তিনি দলের অফিসে পরিণত করেন নি। বরং দল, মত, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে মেহেরপুর পৌরবাসীর সেবা প্রাপ্তির নির্ভরযোগ্য ঠিকানায় রুপান্তরিত করেছেন।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে এমএলএ নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হয়েছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তী তোফায়েল আহমেদ ১৯৭০ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমান মন্ত্রীসভার অন্যতম সফল আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক ২০০৮ সালে মাত্র সাড়ে ২৮ বছর বয়সে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাজনীতি এবং জনসেবামূলক কর্মকান্ডের জন্য বয়স কোনো ফ্যাক্টর নয়, সেটা আরেকবার প্রমাণ করেছেন শক্তিমান যুবনেতা মেহেরপুর পৌরবাসীর মুখপত্র, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, যুবকন্ঠ মাহফুজুর রহমান রিটন তার পাঁচ বছর পৌর মেয়রের দায়িত্ব সফলতার সাথে সম্পন্ন করে। দলের হাইকমান্ডের কাছ থেকে পেয়েছেন কাজের স্বীকৃতি। দলের অনেক সিনিয়র এবং হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশীকে টপকে দ্বিতীয়বারের মত পেয়েছেন দলের মনোনয়ন।

জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন পাঁচ বছর। আগামীতে জনগণের জন্য আরও বেশি কাজ করতে চান। সুখে, দুঃখে তাদের পাশে থাকতে চান আজীবন। সকলের জন্য নিরাপদে বসবাসযোগ্য একটি পরিচ্ছন্ন, আধুনিক, তিলোত্তমা মেহেরপুর পৌরসভা গড়তে চান জনপ্রিয় এই যুবনেতা। পৌরসভার আওতাধীন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি, পৌর এলাকা মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও ইভটিজিং মুক্ত করতে অতীতের ন্যায় আগামিতে ও সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করতে চান এই পৌর মেয়র। সেজন্য প্রয়োজন আবারো জনগণের নিরঙ্কুশ সমর্থন। তার দৃঢ় বিশ্বাস জনগণ তার সাথে আছে। জনগণ তার উন্নয়নের পক্ষে পুনরায় রায় দিবে। ছলেবলে, কৌশলে যারা দীর্ঘবছর পৌরবাসীর ভোটাধিকার হরণ করেছে জনগণ গতবারের ধারাবাহিকতায় এবার ও তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস। আগামি ১৫ ই জুন মেহেরপুর পৌরসভার নির্বাচনে জনতার মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটনের প্রতি আপামর জনসাধারণ ব্যালট বিপ্লব ঘটিয়ে পুনরায় তাকে মেয়রের চেয়ারে বসাবে বলেই একজন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক কর্মি হিসেবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

লেখক- মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট ও তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা, খুলনা।