মিয়ানমার থেকে দেশে ঢুকছে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার ইয়াবা

0
212

টাইমস ডেস্ক :
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার ইয়াবা এদেশে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশ এখন মিয়ানমারের ইয়াবা চোরাচালানের বিশাল বাজার। ইয়াবা চোরাচালানের এই বাজার মিয়ানমার কোনভাবেই হারাতে চাচ্ছে না। ফলে বন্দুকযুদ্ধ, আত্মসমর্পণ, আইনি সহায়তা ও পুনর্বাসনের আশ্বাস কোন কিছুতেই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেটকে টলানো যাচ্ছে না। মাদক কারবারের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষণার পরও মিয়ানমার থেকে আসা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিনিয়তি পাচার হয়ে আসা ইয়াবার চালান। ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে রোহিঙ্গাসহ মাদক পাচারকারী চক্র। আইন-শৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মিয়ানমার থেকে নানা কৌশলে টেকনাফ, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম হয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা ট্যাবলেট রাজধানী ঢাকায় পাঠাচ্ছে। আর রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে, মানুষজনের হাতে হাতে ইয়াবা চলে যাচ্ছে। হাত বাড়ালেই এখন মরণনেশা ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে। বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব, পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিটের চোখে ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত ইয়াবা কারবারের সিন্ডিকেট। প্রতিবছর মিয়ানমার থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ৪০ কোটি ইয়াবার চালান এদেশে আসছে। দু’দেশের সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট ছাড়াও ইয়াবা পাচারকারীরা বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ উপেক্ষা করে জীবন বাজি রেখে গভীর রাতে ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকা ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে। সীমান্তে নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান বন্ধ করা যাচ্ছে না। যদিও ইয়াবাসহ মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, এদেশে ইয়াবার প্রধান উৎস মিয়ানমার। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের দুই পারেই পাচারকারী সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাছাড়া ভারতের কিছু অংশ ও থাইল্যান্ড থেকেও ইয়াবা চালান দেশে আসছে। মিয়ানমার থেকে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসে ইয়াবা। আর মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্যই সরাসরি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে সীমান্ত রক্ষীদের কারো কারো সহযোগিতায়ও দুই দেশের পাচারকারী সিন্ডিকেটগুলো ইয়াবা নিয়ে আসছে। সমুদ্রপথে ইয়াবা টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া, সাবরাং, উখিয়া উপজেলার মনখালী, মহেশখালীর সোনাদিয়া, ঘটিভাঙ্গাসহ পেকুয়া উপজেলার মগনামা ও উজানটিয়া, কুতুবদিয়া ও আনোয়ারা উপজেলায় খালাস করা হয়। বিশেষ করে টেকনাফ উপকূল দিয়ে সবচেয়ে বেশি ঢুকছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চোরাচালান আসা অপ্রতিরোধ্য হয়েই উঠেছে। বন্দুকযুদ্ধ, আত্মসমর্পণ, আইনী সহায়তা ও পুনর্বাসনের আশ্বাস কোন কিছুতেই ভ্রƒক্ষেপ করছে না ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যরা। নানা কৌশলে টেশনাফ, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে রাজধানী ঢাকায় আসছে।
সূত্র আরো জানায়, গত জানুয়ারি মাসে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চোরাচালান নিয়ে আসার পর র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফে দুুই রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এর আগে রাজধানী ঢাকায় আনার পথে কক্সবাজার এলাকায় উদ্ধার করা হয় প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ৮ লাখ পিস ইয়াবার বড় চালান। কঠোর অবস্থানের পরও বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিটের চোখ ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনা অব্যাহত আছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কোন ইয়াবার চালান ধরা পড়ার পরই ইয়াবা সিন্ডিকেট সদস্যরা ইয়াবা পাচারে নতুন কৌশল অবলম্বন করে। ইয়াবা পাচারের জন্য রোগী বহনকারী এ্যাম্বুলেন্সসহ নানা ধরনের গাড়িতে বহনের পাশাপাশি বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি ও কুরিয়ার সার্ভিসের পার্সেলের মাধ্যম কোন কিছুই বাদ যাচ্ছে না।
এদিকে বিজিবির সদর দফতর পিলখানায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মাদক পাচারসহ সব ধরনের চোরাচালান বন্ধে কাজ করছে বিজিবি। বাহিনীর সার্বিক কর্মকান্ড ও সফলতার লক্ষ্যে মাদকসহ সার্বিক চোরাচালান বন্ধে বিজিবি সততার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এাঁ পরিবার, সমাজ, সামাজিক সংগঠন, সমাজকর্মী, সর্বোপরি সব বাহিনীর কাজ। ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের সব সংস্থার সব স্তরের লোক জড়িত। তাছাড়া ইয়াবা ব্যবসায়ের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে রোহিঙ্গাও জড়িত আছে। ইয়াবা ব্যবসার জন্য মিয়ানমারেও কিছু রোহিঙ্গা আছে। যাদের দিয়ে তারা এ ব্যবসা করায়। এদেশেও অনেক লোক এর সঙ্গে জড়িত।
অন্যদিকে পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, জলসীমান্তে কাজ করছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী। স্থল সীমান্তে কাজ করছে বিজিবি। তারপরও প্রায়ই ইয়াবাসহ বিভিন্ন চোরাচালান পণ্য আসছে। আটকও হচ্ছে। মিয়ানমারে তো আছেই। বাংলাদেশেও অনেক অসাধু লোক ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। দুই দেশে অবস্থান করা কিছু রোহিঙ্গাও জড়িত আছে এই ইয়াবা ব্যবসায়ের সঙ্গে। যারা ইয়াবার সঙ্গে ধরা পড়ছে, তারা মূলত বাহক। মূল ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে ধরা গেলে ইয়াবার চালান কমে আসবে।
এ প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, ইয়াবা চালান বন্ধ না হওয়ার প্রাথমিক কারণ হচ্ছে, মানুষ ইয়াবা সেবনে অভ্যন্ত হয়ে গেছে। এখন চাহিদা থাকলে তো যোগান আসবেই। এখনো কিছু রোহিঙ্গা ইয়াবা চালানের বাহক হিসেবে কাজ করছে। ইয়াবাসহ মাদক চোরাচালান বন্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিনই ইয়াবার চালান আসছে এবং অভিযান চালিয়ে ইয়াবা আটকও করা হচ্ছে।