মায়ের সেবা ও সন্তানদের পড়াশোনা করানোর শর্তে দ-প্রাপ্ত আসামি প্রবেশনে

0
134

টাইমস ডেস্ক:
৫ বছরের দ-প্রাপ্ত আসামি মতি মাতবরকে প্রবেশনে (পরীক্ষাকাল) পরিবারের সঙ্গে থাকার সুযোগ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে প্রবেশনে থাকাকালে তার জন্য বেশকিছু শর্তারোপ করেছেন আদালত। প্রবেশন আইনের অধীনে হাইকোর্ট বিভাগে এটিই প্রথম ও ঐতিহাসিক রায় বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আদালত রায়ে আসামি মতি মাতবরকে দেড় বছর ধরে প্রবেশন অফিসারের অধীনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি আদালত শর্তারোপ করে বলেছেন, প্রবেশনে থাকাকালে মতিকে তার ৭৫ বছরের বৃদ্ধ মায়ের যতœ নিতে হবে। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে। আইন অনুসারে নির্ধারিত বয়সের আগে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবেন না। আর এসব শর্ত না মানলে তাকে জেলে যেতে হবে। আসামির রিভিশন আবেদন খারিজ করে এবং প্রবেশনের সুযোগ চেয়ে করা আবেদন গ্রহণ করে গতকাল রোববার বিচারপতি জাফর আহমেদের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রুহুল আমীন এবং আসাদ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এনামুল হক মোল্লা। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন আজিজুর রহমান মাসুদ। আসামিকে তাৎক্ষণিকভাবে তার হাতে তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেওয়া হয়। রায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির জানান, এটি বিশেষ প্রবেশন আইনের অধীনে হাইকোর্ট বিভাগের প্রথম রায়। যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ও যুগান্তকারী। ইয়াবা রাখার অভিযোগে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বরে ঢাকার কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়। এ মামলায় ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি আদালত তাকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদ- ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ রায়েরে বিরুদ্ধে আবেদনের পর আপিল খারিজ করে দেন মহানগর দায়রা জজ আদালত। মতি ২০১৭ সালের ১ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন আবেদন করেন। তিনি ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রেফতারের পর ২০ মাস কারাভোগ করেন। ২০১৭ সালের ৯ জুলাই হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন। রিভিশনের শুনানিতে আসামিপক্ষ এ মামলায় ১৯৬০ সালের প্রবেশন অধ্যাদেশর ৫ ধারা অনুযায়ী আদেশ দেওয়া যেতে পারে বলে উল্লেখ করে আইনজীবীরা বলেন, ‘যেহেতু মতির এটিই প্রথম অপরাধ এবং আর কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার রেকর্ড নেই। তিনি ভবিষ্যতে কোনও অপরাধ করবেন মর্মে ধারনা করার মতো কোনও তথ্য নেই। সে কারণে তিনি প্রবেশন আইনের সুযোগ পেতে পারেন।’ আইনজীবী শিশির মনির আরও বলেন, ‘আদালত দেড় বছরের জন্য মতির প্রবেশন মঞ্জুর করে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে তার পারিবারিক বন্ধন বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময় তাকে মায়ের সেবা করতে হবে। ছেলে মেয়ের লেখাপড়া ও দেখাশোনা নিশ্চিত করতে হবে। আইন অনুযায়ী বয়স না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দিতে পারবে না।’ প্রসঙ্গত, প্রবেশন বলতে কোনও অপরাধীকে তার প্রাপ্য শাস্তি স্থগিত রেখে, কারাবদ্ধ বা কোনও প্রতিষ্ঠানে আবদ্ধ না করে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ প্রদান করাকে বোঝায়। প্রবেশন ব্যবস্থায় প্রথম ও লঘু অপরাধে আইনের সঙ্গে সংঘর্ষে বা সংস্পর্শে আসা শিশু-কিশোররা বা অন্য কোনও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে প্রথম ও লঘু অপরাধে দায়ে কারাগারে বা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে না রেখে আদালতের নির্দেশে প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে এবং শর্ত সাপেক্ষে তার পরিবার ও সামাজিক পরিবেশে রেখে কৃত অপরাধের সংশোধন ও তাকে সামাজিকভাবে একীভূত করণের সুযোগ দেওয়া হয়। প্রবেশন একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক সংশোধনী কার্যক্রম। এটি অপরাধীর বিশৃঙ্খল ও বেআইনি আচরণ সংশোধনের জন্য একটি সুনিয়ন্ত্রিত কর্ম পদ্ধতি। এখানে অপরাধীকে পুনঃঅপরাধ রোধ ও একজন আইনমান্যকারী নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য সহায়তা করা হয়।