মাদক ও সন্ত্রাসীদের নতুন তালিকা করছে খুলনা নগর পুলিশ, নজদারিতে হঠাৎ ধনী

0
492

#সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভাড়াটিয়া তালিকা হালনাগাদ কাজ শুরু
#নাগরিক সেবা সহজিকরণে ‘হ্যালো কেএমপি’ অ্যাপস তৈরীর উদ্যোগ
# পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নাগরিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ

সুমন আশিক:
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কঠোর হচ্ছে খুলনা মহানগর পুলিশ। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে শহরে বসবাসরত বাড়ি মালিক ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য’র তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি চিহ্নিত সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং, মাদক বিক্রেতা ও পৃষ্টপোষকদের নতুন তালিকা তৈরীর কাজও চলছে। ওই তালিকায় অর্ন্তভূক্তি করা হবে হঠাৎ বনে যাওয়া কালো টাকার মালিক এবং অপরাধীদের গডফাদারের নামও।

প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে কয়েক দফা এধরণের তালিকা তৈরীর উদ্যোগ নেয়া হলেও অজানা কারণেই তা ভেস্তে যায়। তবে এবার এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন নবাগত খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)’র কমিশনার মো: মোজাম্মেল হক, বিপিএম-বার, পিপিএম-সেবা। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের ভ‚মিকা প্রশ্নে এসব তথ্য জানান তিনি। এদিকে কেএমপি কমিশনারের এই চ্যালেঞ্জকে সাধুবাদ জানিয়ে নাগরিক নেতারা বলছেন, পরিপূর্ণ তালিকা তৈরী হলে পুলিশের সন্ত্রাস, মাদকসহ যেকোন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

রবিবার (৬ আগস্ট) বিকালে কেএমপি’র সদর দপ্তরে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিককেদর সাথে মতবিনিময় সভা করেন নগর পুলিশের কমিশনার মোজাম্মেল হক। ওই সভায় নবাগত কমিশনার সন্ত্রাস দমন ও নিমূল, মাদক বিক্রেতা, সরবরাহকারী ও পৃষ্টপোষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। বলেন, মাদকের ব্যাপারে তার ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ সর্বদা বলবৎ থাকবে। মাদক সংশ্লিষ্ট কাজে পুলিশ সদস্য, কিংবা সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাই হোক না কেন, তার ছাড় নেই।
তাছাড়া যানজট নিরসন ও আধুনিক ট্রাফিক সিষ্টেম চালুর ব্যাপারে তিনি ইতোমধ্যে উদ্যোগী হয়েছেন বলে জানান। অনুরূপ উদ্যোগী হয়েছেন পুলিশের আবাসন, পরিবহন ও জনবল সংকট নিরসনের কাজেও। আর নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণে নেয়া হয়েছে ব্যাতিক্রম ‘হ্যলো কেএমপি’ অ্যাপস তৈরির কাজ। এক অ্যাপেই নাগরিক তাদেও সকল সুযোগ সুবিধা পাবেন, অভিযাগ করতে পারবেন এবং অভিযোগটি নিষ্পত্তি অবধি পর্যন্ত যাবতীয় তথ্য তিনি নিজেই দেখতে পারবেন। গোটা শহরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা জানান কমিশনার।

এদিকে আইনে শাস্তির ব্যবস্থার দূর্বলতার কারণে জুয়া খেলায়ারদের তেমন কিছু হয়না। দুয়েকটি অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের আটক ও আদালতে মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেও লাভ হয়না। বরং জেল থেকে বেরিয়ে তারা আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে জুয়ার আসর বসান। তারপরও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় শেষে কেএমপি’র উপ-পুশি কমিশনার (দক্ষিণ) মো: তাজুল ইসলামকে শহরে জুয়া বন্ধে নিয়মিত অভিযানের সাথে কতিপয় কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। পুলিশ কমিশনারের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এ এন্ড ও) সরদার রাকিবুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা, মুঠোফোনে কেএমপি’র ডিসি (সাউথ) কে এই নির্দেশনার তথ্য জানিয়ে কড়া হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

অপরাধীদের ব্যাপারে চরম হুঁশিয়ারি জানান দিয়ে মো: মোজাম্মেল হক বলেন, বিগত দিনে সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিলেন, এখন ভালো হয়েছেন, অথচ প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদক ও সন্ত্রাসী কাজে যুক্ত আছেন, কালো টাকার বদৌলতে হঠাৎ ধনী বনে গেছেন? আপনাদের ব্যাপারে পুলিশের নজরদারি শুরু হয়ে গেছে, জোরেশোরে চলছে অপরাধীদের নতুন তালিকা তৈরীর কাজ। এটা সম্পূর্ণ হলেই কঠোর অভিযানে নামবে পুলিশ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নভেম্বর-ডিসেম্বরে। তার আগেই এই তালিকা সম্পূর্ণ হবে বলে নিশ্চয়তা দেন তিনি। মোটকথা খুলনাকে মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত করে শান্তির নগরী হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন নবাগত এই পুলিশ কমিশনার।

জানা গেছে, নতুন এ তালিকায় পেশাদার খুনি, ছিনতাইকারী, ডাকাত, চাঁদাবাজ, বোমা তৈরীর কারিগর, জুয়ারি, হরতাল-অবরোধে নাশকতা সৃষ্টিকারী ও পুলিশের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অধিক গুরুত্ব দেয়া হবে। এছাড়া মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি, মটরসাইকেলে ব্যগ ছিনতাইকারী, ছিঁচকে চোর, গ্রিল কাটা চোর-ডাকাতসহ অপরাধ অনুযায়ী সন্ত্রাসীদের আলাদা ডাটাবেজ তৈরীর সম্ভাবনা রয়েছে।

অপর একটি সূত্র জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে সন্ত্রাসীদেও সম্পূরক তালিকা তৈরী করেছিল খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। বিভিন্ন মামলায় এখানে আসামীর সর্বমোট সংখ্যা ছিল ৪০০জন। কিন্ত বর্তমানে হালনাগাদ করতে নতুন তিন থানাসহ কেএমপির ৮ থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, কেএমপি অধীনস্ত সোনাডাঙ্গা, সদর, খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানায় বিগত কয়েক বছরে পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতার দায়ে একাধীক মামলা হয়েছে। এসব মামলার বেশীরভাগই আসামী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির।

এদিকে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মাদক ব্যবসায়ী, ভ‚মি দস্যু, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের পরিপূর্ণ তালিকা তৈরী হলে পুলিশের জন্য সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। পুলিশের বিশেষ শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার রাশিদা বেগম, পিপিএম সেবা, এ ব্যাপারে খুলনা টাইমসকে নিশ্চয়তা দেন। তবে অপরাধীদের সনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করার উদ্যোগ বাস্তায়নে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষার্থে বিস্তারিত তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। থানা ভিত্তিক নতুন সন্ত্রাসী তালিকাও করা হচ্ছে বলে উভয় পুলিশ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ মো: মমতাজুল হক খুলনা টাইমসকে নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘‘পুলিশ কমিশনার স্যারের নির্দেশনা অণুযায়ী ইতোমধ্যে থানা পুলিশ ভাড়াটিয়া তথ্য হালনাগাদেও কাজ শুরু করেছে। এজন্য পৃথক কয়েকটি টীম গঠন করা হয়েছে। অনুরূপ তথ্য নিশ্চিত করেছেন লবণচরা থানা ওসি মো: এনামুল হক

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব আশরাফ উজ জামান খুলনা টাইমসকে বলেন, আইনশৃংখলার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন তিনটি থানা স¤প্রসারিত করা হলেও নগরবাসী পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা পাচ্ছে না। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ জনবল বাড়ালে নগরবাসী পরিপূর্ণ নিরাপত্তা পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া নগর পুলিশের মাদক ও সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ এবং ভাড়াটিয়াদের তালিকা হালনাগাদ করার কাজ শুরু করার জন্য নবাগত পুলিশ কমিশনার মো: মোজাম্মেল হককে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি, নগর আওয়ামী লীগের উর্দ্ধতন সহ-সভাপতি কাজি আমিনুল হক খুলনা টাইমসকে জানান, ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে ও নগরবাসীর নিরাপত্তায় বিগত দিনেও খুলনা মহানগর পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নবাগত পুলিশ কমিশনারের সন্ত্রাস ও মাদক ব্যবসায়ীদের নতুন তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার এবং সময় উপযোগী। এজন্য সকল পরিচালকদের পক্ষ থেকে খুলনা চেম্বারের সভাপতি পুলিশ কমিশনারকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।