ভারত লকডাউন ৩ মে পর্যন্ত

0
320

আরও ১৯ দিন বাড়ল লকডাউনের মেয়াদ। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ৃানোর ইঙ্গিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করলেন, ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন চলবে। তবে করোনার প্রভাবমুক্ত এলাকায় কিছুটা ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। সম্ভাবনা রয়েছে কৃষি, নির্মাণ, ছোট শিল্পের মতো ক্ষেত্রেও ছাড়ার সম্ভাবনা। যদিও করোনার হটস্পটগুলিতে আরও কঠোর ভাবে লকডাউনের নিয়ম কার্যকরী হতে পারে। শর্তাধীন যাতায়াতের কথাও উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কথায়।

লকডাউনের কী সুফল মিলেছে, সেটা দিয়েই মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশবাসীকে লকডাউনের নিয়মকানুন মেনে চলার জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দেশে সারা বছরই উৎসব চলে। যেমন আজ (মঙ্গলবার) পয়লা বৈশাখ। কিন্তু তবু সংযমের মধ্যে দিয়ে উৎসব অনুষ্ঠান পালন করেছেন সাধারণ মানুষ। অনেকেই ঘর পরিবার ছেড়ে দূরে রয়েছেন। লকডাউনের সময় আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন। আপনারা দেশের স্বার্থে একজন সৈনিকের মতো কাজ করেছেন। আপনাদের ত্যাগের জেরে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই সামলানো গিয়েছে।’’

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিচার করলে অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ভারতের পরিস্থিতি এখনও অনেকটাই ভাল। সেই দিকটি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারত যে পথে হেঁটেছে, তা সারা বিশ্বের মানুষ চর্চা করছে। রাজ্য সরকারগুলিও অনেক দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছে। ২৪ ঘণ্টা নিরন্তর কাজ করে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া গিয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের ভয়াবহ চরিত্র দেখেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং শুরু হয়েছিল, বিদেশ থেকে এলে কোয়রান্টিনের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। তার পর আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ এবং সব শেষে লকডাউনের ঘোষণা করা হয়েছিল। তার সুফল আজ পাওয়া যাচ্ছে। দুনিয়ার বড় বড় দেশের সঙ্গে পরিসংখ্যানের তুলনা করলে ভারত অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে। কিছু দিন আগে পর্যন্ত যে সব দেশের সঙ্গে ভারত একাসনে ছিল, সেই সব দেশে এখন আক্রান্ত-মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি।’’

কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয়, যত দিন না করোনাভাইরাসের প্রকোপ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে, ততদিন লকডাউনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই কারণেই ঘোষণা করেছেন, ‘‘আগামী ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হচ্ছে। ৩ মে পর্যন্ত আপনারা সবাই ঘরে থাকুন। লকডাউনের নিয়ম কঠোর ভাবে মেনে চলুন।’’ তবে কিছু ক্ষেত্রে এবং করোনার প্রভাবমুক্ত এলাকায় লকডাউনের নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হতে পারে। আবার করোনার হটস্পটগুলিতে আরও কঠোর হতে পারে নিয়ম। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, কোথায়, কোন ক্ষেত্রে ছাড় বা আরও কড়া নিয়মকানুন চালু হবে, তা নিয়ে আগামিকাল বুধবার গাইডলাইন জারি করবে কেন্দ্র।

লকডাউনে শিল্পের গতি থমকে গিয়েছে। কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। দিনমজুর, শ্রমিক ঘরে বসে রয়েছেন। রোজগার শূন্য। অর্থনীতির গতি নিম্নমুখী, ক্রমেই তলানিতে পৌঁছে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পুরোপুরি লকডাউন করে রাখলে আরও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তাই কৃষি ও কিছু শিল্পক্ষেত্রে ছাড়ার ইঙ্গিত মিলেছে প্রধানমন্ত্রীর কথায়। প্রধানমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘এই সময় রবিশস্য কাটার মরশুম চলছে। মাঠের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে কৃষকদের যতটা সম্ভব ছাড় দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে।’’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, কৃষি এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পক্ষেত্রকে অনেকটাই ছাড়ার আওতায় নিয়ে আসা হতে পারে।

ঘরের মধ্যেও মাস্ক পরে টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনছেন এক ব্যক্তি। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে।

২৪ মার্চ লকডাউন ঘোষণার জেরে রাতারাতি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বহু দিনমজুর, শ্রমিক। পরিযায়ী শ্রমিকরা আটকে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা প্রতিদিন রোজগার করেন এবং সেই টাকায় সংসার চালান, তাঁদের জন্যই সবচেয়ে বেশি চিন্তা। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই নতুন গাইডলাইন তৈরি হয়েছে।’’ অর্থাৎ এই ক্ষেত্রেও কিছুটা ছাড় মিলতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে প্রধানমন্ত্রীর কথায়। এ ক্ষেত্রে নির্মাণ শিল্পের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘নির্মাণ শিল্পের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কর্মস্থলে রেখেই কাজ করা যেতে পারে। তবে সেখানেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।’’ ফলে শ্রমিক-দিনমজুরদের কথা মাথায় রেখে আগামিকালের ঘোষণায় থাকতে পারে বেশ কিছু ছাড়। প্রধানমন্ত্রীর কথায় উঠে এসেছে শর্তাধীন যাতায়াতের কথাও। তবে সেটা ২০ এপ্রিলের পর থেকে শুরু হতে পারে বলে ইঙ্গিত।

তার অর্থ অবশ্য এই নয় যে, সব এলাকাতেই এই ছাড় থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর কথায় ইঙ্গিত মিলেছে, এলাকাভিত্তিক বা করোনার ‘হটস্পট’ভিত্তিক আলাদা গাইডলাইনের কথা। তিনি বলেন, ‘‘করোনার হটস্পটগুলিতে বাইরে বেরনোর উপর কড়া নিয়ন্ত্রণ থাকবে। হটস্পটগুলিকে নির্ধারিত করে আগের থেকেও আরও কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সেই সঙ্গেই কড়া নজর রাখতে হবে, যাতে নতুন নতুন হটস্পট তৈরি না হয়। তাই যে সব জায়গা হটস্পটে পরিণত হতে পারে, সেগুলির উপর কড়া নজরদারি রাখতে হবে। কারণ নতুন হটস্পট তৈরি হলে আমাদের দায়িত্ব ও পরীক্ষা আরও বেড়ে যাবে।’’

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা,
অনলাইন সংস্করণ