বড়পুকুরিয়া খনি দুর্নীতি: কারাগারে যাওয়ার পরদিনই ২২ জনের জামিন

0
168

খুলনা টাইমস:
২৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার কয়লা আত্মসাতের অভিযোগে কারাগারে পাঠানোর একদিন পরই জামিনে মুক্তি পেলেন দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি সাবেক ছয় ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২২ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তাদেরকে জামিনের আদেশ সাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর জেলা কারাগারের সুপার মোকাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যায় তাদের জামিনের জন্য আদেশ পেয়েছিলাম এবং আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) সকালেই তাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান জাহানী বলেন, সম্প্রতি জামিনের নিষেধাজ্ঞা এনে রাষ্ট্রপক্ষ উ”চ আদালতে একটি রিট করেছে। সেই রিটের বিষয়টি উ”চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সেই অব¯’াতে গত বুধবার ২২ জনের জামিন না মঞ্জুর করেন দিনাজপুর স্পেশাল জজ আদালত। পরে উ”চ আদালতের বিচারাধীন রিটের কাগজপত্র স্পেশাল জজ আদালতে উপ¯’াপন করা হলে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন একই আদালত। তবে নির্দিষ্ট সময়ের পরে সেই আদেশের কপি কারাগারে পৌঁছানোয় গত বুধবার তাদেরকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়নি কর্তৃপক্ষ। জামিনে মুক্তিপ্রাপ্তরা হলেন- বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যব¯’াপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল আজিজ খান, প্রকৌশলী খুরশীদুল হাসান, প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, আমিনুজ্জামান, প্রকৌশলী এসএম নুরুল আওরঙ্গজেব ও সাবেক এমডি প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ, সাবেক মহাব্যব¯’াপক (জিএম, প্রশাসন) শরিফুল আলম, আবুল কাসেম প্রধানীয়া, আবু তাহের মো. নুর-উজ-জামান চৌধুরী (মাইন অপারেশন বিভাগ), আরিফুর রহমান মেইন্টেন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের ব্যব¯’াপক, নিরাপত্তা বিভাগের ব্যব¯’াপক মাসুদুর রহমান হাওলাদার, নিরাপত্তা বিভাগের ব্যব¯’াপক সৈয়দ ইমাম হাসান, কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-মহাব্যব¯’াপক (ডিজিএম) মুহাম্মদ খলিলুর রহমান, মেইন্টেন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের উপ-মহাব্যব¯’াপক (ডিজিএম) মোর্শেদুজ্জামান, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-মহাব্যব¯’াপক (ডিজিএম) হাবিবুর রহমান, মাইন ডেভেলপমেন্ট বিভাগের উপ-মহাব্যব¯’াপক (ডিজিএম) জাহেদুর রহমান, ভেন্টিলেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-মহাব্যব¯’াপক ব্যব¯’াপক (ডিজিএম) সত্যেন্দ্র নাথ বর্মণ ও মনিরুজ্জামান, কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্টের ব্যব¯’াপক শোয়েবুর রহমান, স্টোর ডিপার্টমেন্টের উপ-মহাব্যব¯’াপক (ডিজিএম) একেএম খালেদুল ইসলাম, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্টের ব্যব¯’াপক অশোক কুমার হালদার ও মাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের উপ-মহাব্যব¯’াপক (ডিজিএম) জোবায়ের আলী। মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ দশমিক ৯২ টন কয়লা চুরি হয় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে। যার আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা ৮৪ পয়সা। এই ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় এবং কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা গায়েবের ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যব¯’াপক (প্রশাসন) আনিসুর রহমান বাদী হয়ে গত ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলাটি দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় দুদক কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। পরে মামলাটি দুদকের উপ-পরিচালক সামসুল আলম তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তদন্ত করেন। গত ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই মামলার বাইরে আরও চারজনকেসহ সাবেক সাত ব্যব¯’াপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলাটির চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়। চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত (মেয়াদে) ঘাটতিকৃত ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭.৯৯ মেট্রিক টন কয়লা আত্মসাতে জড়িত। আসামিরা দ-বিধির ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এই অভিযোগপত্রে এজাহার নামীয় ছাড়াও নয়জনকে যুক্ত করা হয় এবং তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় পাঁচজনকে আসামি থেকে বাদ দেয়ার কথা বলা হয়। আদালতে ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এদের মধ্যে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যব¯’াপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুবুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন।