বর্হিনোঙ্গরে জাহাজ থেকে পাইপ লাইনে সরাসরি জ¦ালানি তেল খালাসের উদ্যোগ

0
166

টাইমস ডেস্ক:
বর্হিনোঙ্গরে মাদার ভেসেল থেকে আমদানিকৃত জ¦ালানি তেল সরাসরি খালাসে ভাসমান টার্মিনাল ও ডাবল পাইপ লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদেশে যুগ যুগ ধরে আমদানির জ¦ালানি রতল বহির্নোঙ্গরে মাদার ভেসেল থেকে ব্যয়বহুল লাইটারিং প্রক্রিয়ার ইতি ঘটাতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারের উদ্যোগে বিদেশী অর্থঋণ সহায়তায় আগামী ২০২২ সাল নাগাদ এ প্রকল্প চালু হবে। সেজন্য সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ভাসমান তেল টার্মিনাল ও ২২০ কিলোমিটারব্যাপী ডাবল পাইপ লাইন। তাতে বছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) ৮শ’ কোটি টাকারও বেশি অর্থের সাশ্রয় হবে। ইতোমধ্যে ওই প্রকল্পের ৫৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে বিশ^জুড়ে করোনা আতঙ্ক নিয়ে কয়েকমাস প্রকল্প কাজে ধীরগতি থাকলেও বর্তমানে আবারো তা পুরোদমে শুরু হয়েছে। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ প্রকল্পটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা পিছিয়ে ২০২২ সালকে টার্গেটে আনা হয়েছে। জ¦ালানি বিভাগ এবং বিপিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে জ¦ালানি তেলের চাহিদা ৬০ লাখ টনেরও বেশি। তার পুরোটাই আমদানি নির্ভর। আর প্রতি বছরই আমদানির পরিমাণ বাড়ছে। তাতে একদিকে যেমন জ¦ালানি তেল আমদানিতে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। পাশাপাশি আমদানিকৃত জ¦ালানি তেল খালাস কার্যক্রমেও বিপুল অর্থ ব্যয় হয়ে আসছে। প্রতিটি মাদার ভেসেলের ভাড়া ছাড়াও লাইটার জাহাজের ভাড়া খাতে বিপিসিকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে বিপিসিকে ভর্তুকি দিতে হয়। আর কমলে বিপিসির মুনাফা হয়। এভাবে বছরের পর বছর বিপিসির কার্যক্রম চলে আসছে। সারাদেশে সরকার তেলের বিক্রয়মূল্যে ফিক্সড প্রাইজ রেখেছে। বিদেশ থেকে বিশেষ করে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল মাদার ভেসেলযোগে গভীর সমুদ্রে (কুতুবদিয়ার অদূরে) পৌঁছানোর পর তা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) লাইটার জাহাজযোগে তা খালাস করা হয়। কখনো এক লাখ আবার কখনো এক লাখ টনেরও বেশি তেল নিয়ে আসা মাদার ভেসেলগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর এলাকার অনেকটা শেষপ্রান্তে অর্থাৎ কুতুবদিয়ার অদূরে নোঙ্গর করতে হয়। কারণ প্রয়োজনীয় গভীরতা না থাকার কারণে ওসব মাদার ভেসেল চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় প্রবেশ করতে পারে না। ফলে কুতুবদিয়ার অদূরে নোঙ্গরকৃত মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজযোগে প্রতিনিয়ত তেল খালাস করে তা চট্টগ্রামের পতেঙ্গার অয়েল ডিপোতে পৌঁছানো হয়। ওসব ডিপো থেকে পরবর্তীতে নৌ ও সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তেল পৌঁছে যায়। প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল হওয়ায় ২০১১ সালের দিকে বিপিসির উদ্যোগে এবং জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের উ”চপর্যায়ে আমদানির জ¦ালানি তেল খালাসে বিপুল অর্থের ব্যয় সাশ্রয়ে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। একনেকে প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশে আমদানিকৃত অপরিশোধিত ও পরিশোধিত জ¦ালানি তেলের কার্যক্রম আরো সহজতর ও গতিশীল করার লক্ষ্যেই সমুদ্রের বুকে ভাসমান টার্মিনাল ফ্যাসিলিটিজ বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আবার ওই টার্মিনাল থেকে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে ডাবল পাইপ লাইন নির্মাণেরও প্রস্তাব করা হয়। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সরকার প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। ডাবল পাইপ লাইনের একটিতে আসবে ডিজেল ও অপরটিতে আসবে ক্রুড অয়েল। ডাবল পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরাসরি চট্টগ্রামের পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারি (ইআরএল) ও তিনটি তেল বিপণন কোম্পানি, যথাক্রমে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার প্রধান ডিপোসমূহে তেল পৌঁছে যাবে। এ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময়ের লাইটারিং কাজের ইতি ঘটবে। একই সাথে বিপিসির বছরে ৮শ’ কোটি টাকারও বেশি অর্থের সাশ্রয় ঘটবে। তাছাড়া বর্তমানে ১ লাখ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েলের একটি মাদার ভেসেল থেকে খালাস কার্যক্রমে সময় নেয় ৯ থেকে ১১ দিন। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দু’দিনে এক লাখ টন এবং ২৮ থেকে ৩০ ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন তেল খালাস সম্ভব হবে। তাতে বিপিসির অপারেশনাল দক্ষতাও বাড়বে।
সূত্র আরো জানায়, গভীর সমুদ্রে ভাসমান টার্মিনাল থেকে পাইপ লাইনযোগে মহেশখালীতে নির্মিতব্য ইনস্টলেশনে প্রথমে তেল আসবে। সেখান থেকে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে আনোয়ারা উপজেলার কোরিয়ান ইপিজেড হয়ে পরবর্তীতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে পাইপ লাইন সংযুক্ত হবে ইআরএল ও তিন তেল কোম্পানির পতেঙ্গার ডিপোতে। বর্তমানে প্রকল্পের ৫৪ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গভীর সমুদ্রের সি বেড (তলদেশ) থেকে দুই মিটার এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে ৯ মিটার নিচে ডাবল পাইপ লাইন বসানোর কাজ চলছে। এ কাজে বিদেশী অর্থঋণ ছাড়াও সরকার এবং বিপিসির কোষাগার থেকে প্রকল্প ব্যয় মেটানো হচ্ছে। চীনের কারিগরি একটি সংস্থা এ প্রকল্প কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
এদিকে জ¦ালানি বিভাগ এবং বিপিসি সংশ্লিষ্টদের মতে, সমুদ্রে ভাসমান টার্মিনাল এবং ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি সরকারের মেগা প্রকল্পের আওতায় না থাকলেও তা একটি চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প। কারণ উত্তাল সমুদ্রের মাঝে ভাসমান তেল টার্মিনাল নির্মাণ এবং সেখান থেকে সমুদ্র ও নদীর তলদেশ দিয়ে ডাবল পাইপ লাইন দিয়ে আমদানির জ¦ালানি তেল খালাস কার্যক্রম সহজ নয়। কিন্তু বিপুল অঙ্কের অর্থ সাশ্রয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিগত ২০১০ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তা বাস্তবায়ন শুরু করা যায়নি। পরবর্তীতে চীন সরকারের আগ্রহে প্রকল্প বাস্তবায়নের পথ খুলে। ২২০ কিলোমিটারের ডাবল পাইপ লাইন ও মহেশখালীতে ইনস্টলেশন পয়েন্ট প্রতিষ্ঠার কারণে দেশে আরো প্রায় পনেরো দিনের জ¦ালানি তেলের মজুদ রাখার ব্যবস্থায় বৃদ্ধি ঘটবে।