বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে খুলনা জেলা ও নগর আ’লীগের সম্মেলন ১০ ডিসেম্বর

0
338

নিজস্ব প্রতিবেদক:
শাসক দল আওয়ামী লীগে খুলনা জেলা ও নগর কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। এর মধ্যে নানা বাধা বিপত্তি, জাতীয় নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ইত্যাদি কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন হয়নি। এছাড়া জাতীয় সম্মেলনের সাথে সঙ্গতি রেখে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা ও নগরের সম্মেলন। সম্মেলনকে সামনে রেখে সাজ সাজ রব পড়েছে। জেলা শাখার দুটি শীর্ষ পদে একাধিক প্রার্থী ও নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক পদেও অনুরূপ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ২০১৫ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
গেল জুন মাসে ইউনাইটেড ক্লাবে অনুষ্ঠিত নগর শাখার বর্ধিত সভায় ডিসেম্বরের মধ্যে সম্মেলন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তার আগে ওয়ার্ড ও থানা কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন করতে বলা হয়। জেলা শাখার গত বর্ধিত সভায় সম্মেলন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার এক পর্যায়ে পাইকগাছা উপজেলা ছাড়া বাকি ৮টি উপজেলা শাখায় মেয়াদ শেষ না হওয়ায় সম্মেলন না করার সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের শীর্ষ পদ থেকে দুরে রাখার জন্য জেলার বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়। শনিবার পাঁচ বছর পর পাইকগাছা উপজেলা শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
দলের স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্র জাতীয় সম্মেলনের আগে জেলা ও নগর সম্মেলন সম্পন্ন করার তাগিদ দেয়। এছাড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যু, যুগ্ম সম্পাদকের মৃত্যু, দুই ঈদ, শারদীয় দুর্গোৎসব, জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচনের কারনে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন সম্পন্ন করা যায়নি। জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা ৪ আসনের সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদি সুজা ২০১৮ সালে ২৭ জুলাই কিডনী সমস্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে মারা যান। তার মৃত্যুর পর যুগ্ম সম্পাদক গাজী আব্দুল হাদী দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিন মাস দায়িত্ব পালনের পর তিনিও ইন্তেকাল করেন। যুগ্ম সম্পাদক এ্যাড. সুজিত অধিকারী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িথ্ব পালন করছেন। সম্মেলন সফল করার লক্ষে জেলা শাখায় ৮টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে তোরণ নির্মানের প্রস্তুতি চলছে। আগামী সপ্তাহে তৃণমূল পর্যায়ে পোস্টারিং করা হবে। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন। এবারও সার্কিট হাউজ ময়দানে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৫ সালে দুটি পৃথক দিনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এবার একই দিনে দুটি শাখায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৫ সালে ২৭ নভেম্বর শেখ হারুনুর রশিদ সভাপতি ও মোস্তফা রশিদী সুজা সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেয়। এই কমিটি নিয়ে প্রকাশ্য বিরোধিতা করে মোস্তফা রশিদী সুজা আবাহনী ক্রীড়া চক্রে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রকাশ্যে ঘোষনা করেন কমিটিতে টেন্ডাবাজ, চাঁদাবাজ ও যুদ্ধপরাধীদের সন্তানরা স্থান পেয়েছে। এ কারণে তিনি জেলা শাখার কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা আহ্বান করতে গড়িমসি করতেন। জেলা শাখার সভাপতি পদে ৪ জন প্রার্থীর নাম আলোচনা চলছিল। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্যদের তৃণমূলের নেতৃত্বে না আসতে পরামর্শ দেন। এ কারণেই খুলনা ৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন না। বাকি জোরালো তিনজন প্রার্থী হচ্ছেন চলমান কমিটির সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ, জেলা শাখার সহ সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা এম এম মুজিবর রহমান ও নবম সংসদের সদস্য এ্যাড. সোহরাব আলী সানা। এম এম মুজিবর রহমান জেলা আইনজীবী সমিতির এক সময়কার সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হিসেবে স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের মানুষ। তিনি খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদীর আশির্বাদপুষ্ট প্রার্থী। তৃণমূলের বড় একটি অংশ সোহরাব আলী সানার পক্ষে। এই অংশটি নতুন নেতৃত্বের পক্ষপাতী।
এ প্রসঙ্গে জেলা সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ জানান, পরিচ্ছন্ন, ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজের মানুষ নেতৃত্বে আসবেন। দুই শতাধিক কাউন্সিলরের মতামতের ভিত্তিতে নেতৃত্ব হবে। অনুপ্রবেশকারি, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও যুদ্ধপরাধীর সন্তানরা কমিটিতে আসতে পারবে না। উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীরা কোন ক্রমেই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবে না।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীরা হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত কুমার অধিকারী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামান জামাল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অসিত বরণ বিশ্বাস ও বটিয়াঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান। প্রার্থীরা দলের সকল স্তরের কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ, ভারতের সাথে সরকার প্রধানের চুক্তির প্রেক্ষিতে সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক স্টাটাস দেওয়ায় জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক ও বিএমএ খুলনার সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলমকে বহিস্কার করা হয়। তিনিও গতবারের জোরালো প্রার্থী ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা রশিদী সুজার মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে ডাঃ শেখ বাহারুল আলম কৃষক নেতা আশরাফুজ্জামান বাবুল, হুমায়ুন কবির ববি, অধ্যক্ষ ফ ম সালাম, কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি মহসিন রেজা, তেরখাদা উপজেলা শাখার সভাপতি শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন।
নগর শাখায় চলমান কমিটির সভাপতি ও মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক একক প্রার্থী। তিনি ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০১৪ সালে বাগেরহাট-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৮ ও ২০১৮ সালে কেসিসির নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। নগরের রাজনীতিতে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বি। সাধারণ সম্পাদক পদে মোঃ মিজানুর রহমান মিজান, সদর থানা শাখার সভাপতি এ্যাড. মোঃ সাইফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক এমডি বাবুল রানা, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আশরাফুল ইসলাম প্রার্থী হচ্ছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে খুলনা-২ আসনে মিজানুর রহমান মিজানকে দলের প্রার্থী না করা এবং তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হওয়ায় দলের অভ্যন্তরে ইমেজ কিছুটা ক্ষুন্ন হয়েছে।