বরিশালে আ. লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, নিহত ২

0
159

টাইমস ডেক্স: বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে দু’জন নিহত হয়েছেন। এতে অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন। এ সময় কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করে মালামাল লুট করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পুলিশ উভয় পক্ষের ৮ জনকে আটক করেছে। গত শনিবার দিবাগত গভীর রাতে উলানিয়া ইউনিয়নের কালীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন পূর্ব ও পশ্চিম সুলতানী গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী রুমা আক্তার সরদারের সমর্থক সাইফুল সরদার (২৮) ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজী আবদুল হালিম মিলন চৌধুরীর সমর্থক (চাচাতো ভাই) সাঈদ চৌধুরী(২২)। নিহত সাইফুল সরদার উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়নের আশা গ্রামের আবদুল জব্বারের ছেলে ও সাঈদ চৌধুরী একই ইউনিয়নের পশ্চিম সুলতানী গ্রামের কাইয়ুম চৌধুরীর ছেলে। আহতরা হলেন, রুমা আক্তার সরদারের সমর্থক হাবু সরদার (৩০), জহিরুল ইসলাম (৩২) রত্তন সরদার (৫০), আবদুল হালিম মিলন চৌধুরীর সমর্থক অহিদ হাওলাদার (৩৮) ও হাসান আলী হাওলাদার (৭০)। নিহত সাইফুল সরদারের স্ত্রী খাদিজা বেগম জানান, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী আবদুল হালিম মিলন চৌধুরী ও বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী রুমা আক্তার সরদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। তার স্বামী সাইফুল সরদার রুমা আক্তার সরদারের সমর্থক ছিলেন। গত শনিবার দিবাগত গভীর রাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী আবদুল হালিম মিলন চৌধুরী, তার সমর্থক মিজান মোল্লা ও নোমান মোল্লার নেতৃত্বে শতাধিক ব্যক্তি রামদা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে পূর্ব সুলতানী গ্রামে রুমা আক্তার সরদারের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এ সময় তার স্বামী সাইফুল সরদারকে কালীগঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন এলকায় ধরে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া মিলন চৌধুরীর সমর্থকরা কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করে এবং মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। রুমা আক্তার সরদারের সমর্থক আহত হাবু সরদার জানান, মিলন চৌধুরীর নেতৃত্বে শতাধিক ব্যক্তি গত শনিবার রাতে অতর্কিত এ হামলা চালায়। মিলন চৌধুরী হামলার জন্য আগেই বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনেছিলেন। তারা সাইফুল সরদারকে কুপিয়ে হত্যা করে। তাছাড়া তাদের হামলায় পূর্ব সুলতানী গ্রামের হাবু সরদার, জহিরুল ইসলাম ও রতন সরদারসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। হামলা চলাকালীন তারা কয়েকটি ঘর ভাঙচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় গ্রামবাসী মিলন চৌধুরীর সমর্থক অহিদ হাওলাদার ও হাসান আলী হাওলাদারকে ধরে ফেলেন। আহত হাবু সরদার আরও বলেন, হামলার ঘটনা আড়াল করতে মিলন চৌধুরী এখন নানা মিথ্যা কথা রটিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা বলছেন প্রতিপক্ষের হামলায় তার এক ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজী আবদুল হালিম মিলন চৌধুরী জানান, গত শনিবার রাত ১২টার দিকে প্রথমে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী রুমা আক্তার সরদারের সমর্থকরা তার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এতে তার চাচাতো ভাই সাঈদ চৌধুরীসহ কয়েকজন সমর্থক আহত হন। সকালে আহত চাচাতো ভাই সাঈদ চৌধুরীকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাঈদ চৌধুরীর মৃত্যু হয়। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. শাহজাহান হোসেন জানান, সংঘর্ষে এ পর্যন্ত দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে একজনের মৃত্যু হয়। তার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ইবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেকজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উলানিয়া ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম সুলতানী গ্রামে অভিযান চালিয়ে উভয় পক্ষের ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। তাছাড়া ওই দুই গ্রামে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। উল্লেখ, গত ১০ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তবে সীমানা নিয়ে জটিলতার কারণে গত ৬ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন ওই দুটি ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করে। নির্বাচন স্থগিত করলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত আবদুল হালিম মিলন চৌধুরী ও বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী রুমা আক্তার সরদারের সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েক বার হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।