বদি নয় আমাদের কাছে ইস্যু মাদক: র‌্যাব ডিজি

0
483

ডেস্ক রিপোর্ট, খুলনাটাইমস:

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে তাদের কাছে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি কোনো ইস্যু নয়, ইস্যু হলো মাদক। এই অভিযান সফল করার পথে যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে। মাদকের ভয়াবহতা থেকে জাতিকে রক্ষা করতে সবার সমন্বিত প্রয়াস দরকার বলে মনে করেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে একাত্তর টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন শাকিল আহমেদ।

গত ৪ মে থেকে সারা দেশে মাদকের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে সাঁড়াশি অভিযান। এতে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৪ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। নিহতরা সবাই মাদকের কারবারি বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এদের মধ্যে গত দুই দিনে ২১ জন এবং গত পাঁচ দিনে নিহত হয়েছে অন্তত ৩১ জন। মাদকের বিস্তারের জন্য কক্সবাজারের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির দিকে আঙুল তুলেছে বিএনপি। আগে ‘বদিদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে টেকনাফ আসন থেকে জয়ী বদির বিরুদ্ধে নানা সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ নিয়ে। ২০১৪ সালের শেষ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা টেকনাফের শীর্ষ ৭৯ মানব পাচারকারীর তালিকায় বদির নাম ১ নম্বরে ছিল বলেও ২০১৫ সালের মাঝামাঝি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন আসে। এ ছাড়া একই বছরের ডিসেম্বরে পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে আরেকটি তদন্তে বদির আট আত্মীয়কে মানব পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বদি অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করে এসেছেন। বলেছেন, গণমাধ্যম যাচাই-বাছাই না করেই প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।

বদির এসব ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমি তো আর বদির স্পোকম্যান না। আমি তার পক্ষের বা বিপক্ষের লয়ারও না। আমি তার পক্ষে-বিপক্ষে কিছুই বলব না। আমার কাছে বদি কোনো ইস্যু নয়, ইস্যু হলো মাদক। যাকে দায়ী মনে করব, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাব, আমরা তাকেই ধরব।’

মূল বিষয় থেকে দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতে (ডাইভার্ড) এ ধরনের ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে বলে মনে করেন র‌্যাব প্রধান। তার মতে, এমন আরও ৫০টা ইস্যু আসতে পারে, যা মূল বিষয় থেকে চলমান অভিযানকে ডাইভার্ড করবে।

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাচ্ছেন, সরকার চাচ্ছে, জনগণ চাচ্ছে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা। মাদক একদম নির্মূল করা যাবে না। কারণ এই সমস্যা প্রতিটি দেশেই আছে। তবে ভয়াবহ যে আগ্রাসন চলছে, পরিবার-সমাজ নষ্ট করে দিচ্ছে, তাকে সহনীয় মাত্রায় আনতে হবে। এটা করতে গিয়ে যাকেই দেখব বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাকেই আমরা আইনের আওতায় আনব।’

গত ৩ মে র‌্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গি নির্মূলের মতো এবার মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন র‌্যাবকে। এরপরসোরা দেশে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে নামে এই এলিট বাহিনী।

র‌্যাবের মহাপরিচালক উপস্থাপকের এক প্রশ্নের জবাবে দীর্ঘমেয়াদি মাদকের প্রতিরোধ কৌশল সম্পর্কেও বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ৪৭০ কিলোমিটার বর্ডার আছে মিয়ানমারের সঙ্গে। এখানে রাস্তা হয়ে যাচ্ছে। তখন এই পথে মাদক চোরাচালান বন্ধ হয়ে যাবে। পরে থাকবে নাফ নদী ও সমুদ্র। পাঁচ লাখ জেলে আছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে আমরা কথা বলছি। মাঝে আমরা মাছ ধরা কিছুদিন বন্ধও করেছিলাম। সমস্যা হচ্ছে গভীর সমুদ্র। সেখানে মাদক বিনিময় হয়ে মেঘনার মোহনা দিয়ে বরিশালে গেলে আমাদের কী করার আছে!’

এ জন্য মাদকের আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার বলে মনে করেন র‌্যাবের প্রধান।

মাদকের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের সম্পৃক্ততা থাকলে এই অভিযানের ভবিষ্যৎ কী হবে- সঞ্চালকের এমন প্রশ্নে র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘সর্ষেতে ভূত থাকলে কী করার আছে? আমার সাফ কথা, শরীরের কোথাও ক্যানসার দেখা দিলে সেই অঙ্গ কেটে ফেলতে হবে।’