বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, ২নম্বর সংকেত

0
510

মংলা প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরে নি¤œচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে মংলা সমুদ্র বন্দরসহ সুন্দরবন উপকুলে দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়া বিরাজ করছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঝে মাঝে গুড়ি গুড়ি বৃস্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। এতে ব্যহত হচ্ছে মংলা বন্দরে থাকা দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজের পন্য-খালাস বোঝাই কাজ। মংলা বন্দরের হারবার বিভাগ ও আবহাওয়া অফিস জানায়, বঙ্গোপ সাগরের পুর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও উত্তর-পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর অবস্থানরত ওই নিম্নচাপটি সামন্য উত্তর-উত্তর পশ্চিমে অগ্রসর হয়েছে। এতে দেশের মংলাসহ তিনটি সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এলাকায় দুই নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নিম্নচাপটি মঙ্গলবার বিকাল ৩টার পরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৯৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে ৮৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, মংলা বন্দর থেকে ৮৭০ কিলোমিটার উত্তর-উত্তর পশ্চিম ও পায়রা বন্দর থেকে ৮৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিন পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসে একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর প্রচন্ড উত্তাল রয়েছে। দেশের প্রধান মংলা বন্দরসহ তিনটি সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এলাকায় ২নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আর উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত মাছ ধরার ফিশিং ট্রলার ও নৌকা সমুহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকুলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। মংলা বন্দরের হারবার মাষ্টার কমান্ডার এম দুরুল হুদা জানায়, চ্যানেলের হারবাড়িয়া,বহিঃনোঙ্গর ও জোটিতে সার-ক্লিংকার ও মেশিনারিজ মালামাল সহ ২০টি বানিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার কারনে এ সকল জাহাজে নিয়মিত খালাস কাজ চলছে ধির গতিতে। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) মোঃ গোলাম মোস্তফা জানান, বর্তমানে পশুর চ্যানেল, হাড়বাড়িয়া এবং বহির্নোঙ্গরে জাহাজ গুলোর মধ্যে ৬টি সার, ১টি এলপিজি গ্যাস, ১টি ক্লিংকার, ৩টি কয়লা, ১টি জিপসাম, ২টি ড্রেজার, ১টি স্লোগসহ দেশি-বিদেশি ২০টি বানিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে এ বন্দরে । এর মধ্য থেকে গতকাল ১টি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করছে এবং আরো ২টি বানিজ্যিক জাহাজ বন্দরে ভিরছে বলে হারবার কন্টোল থেকে জানানো হয়েছে। এদিকে প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে সাগর ও উপকুলীয় নদ-নদী গুলো উত্তাল রয়েছে। ফলে বহির্নোঙ্গরে (মাদার ভ্যাসেল থেকে) পণ্য খালাসের জন্য ব্যবহৃত লাইটারেজ জাহাজ চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। তারা বিদেশী এ বানিজ্যিক জাহাজের গায়ে ভিরতে অনেকটা বিরম্ভনার পরতে হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস আরো বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ভারতের ওড়িশার দিকে ও বাংলাদেশে খুলনার দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এটি যদি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়, তাহলে এর নাম হবে ‘তিতলি’। এটা আগামী ১০ থেকে ১১ অক্টোবর বাংলাদেশের উপকুলের দিকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও আবহাওয়া অফিস জানায়। সাগরে প্রবল ঢেউয়ের কারনে বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণে নিয়োজিত জেলেরা সাগরে জাল ফেলতে না পেরে ফিরছে নিরাপদ আশ্রয়ে। শত শত ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনসহ উপকূলীয় বিভিন্ন নদী ও খালে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। বনবিভাগ ও দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের সাধারন সম্পাদক কামাল উদ্দিন এতথ্য জানায়। মংলা মৎসজীবি সমিতির সভাপতি অলিউর রহমান ও মৎস্য ব্যাবসায়ী মোঃ লোকমান হোসেন জানান, বঙ্গোপসাগর উত্তাল হওয়ার কারনে জেলেরা মাছ ধরতে পারছেনা। আশ্রায় নিয়েছে বনের বিভিন্ন খালে। তারা আরও জানান, এ মৌসুমে একদিকে সাগরে দস্যুদের উৎপাত আর অন্যদিকে দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়ার ফলে সাগর উত্তল রয়েছে। অন্যদিকে কয়েক দফা বৈরী আবহাওয়ায় সাগরে জাল ফেলতে না পেরে মহাজন ও জেলেরা হতাশায় পড়েছেন। পূর্ব সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ শাহিন কবির জানান, দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়া আর ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনায় দুবলার চর, নারকেলবাড়িয়া, অফিস কেল্লা, আলোর কোল ও সুন্দরবনের পশুর নদীসহ বনের ছোট ছোট খালে আশ্রায় নিয়েছে এসব ক্ষতিগ্রস্থ জেলেরা। গত ২৪ ঘন্টা যাবত সাগরে জাল ফেরতে না পেরে অলস সময় কাটছে তারা। এছাড়াও যারা সাগর উপকুলে মাছ ধরছিল তারা গতকাল সকাল থেকে খালীহাতে ফিড়ে আসতে শুরু করেছে।