প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কয়েক কোটি টাকার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম

0
130

টাইমস ডেস্ক: প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানে পল্লী বিদ্যুতের ২৬ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। তখন পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় ২ হাজার ৭০০ বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যায়, ৭৬০টি ট্রান্সফরমার এবং বিদ্যুতের ১৯ হাজার কিলোমিটার লাইন পুড়ে যায়। তার বাইরে ৩৩ হাজার ৬০০ জায়গায় সরবরাহ লাইনের তার ছিঁড়ে যায়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও যশোর অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে ভোগান্তি নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওসব এলাকায় সামান্য ঝড় কিংবা বৃষ্টিতে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় প্রায়ই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখছে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতি বছর আঘাত হানবে এমন আশঙ্কা সত্তে¡ও সেখানে গতানুগতিক পদ্ধতিতে বৈদ্যুতিক লাইন টানা হয়েছে। যে কারণে দুর্যোগের আশঙ্কায় প্রায়ই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে মূলত বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) বিদ্যুৎ সেবা দিচ্ছে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি হিসেবে বিদ্যুতের উন্নয়নে নতুন লাইন নির্মাণ, বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানো এবং গ্রাহক সংযোগ বাড়ালেও কোম্পানিগুলো স্থায়ী ও টেকসই কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। তবে বর্তমানে ওজোপাডিকো ও আরইবি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প নিয়েছে। ‘ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম ইমপ্রæভমেন্ট প্রজেক্ট আপ টু ২০৩০’ নামে ওজোপাডিকোর দুটি প্রকল্পের সমীক্ষা যাচাইয়ে পরামর্শক নিয়োগের কাজ চলছে। আর বিতরণ লাইন উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় আরইবি বৈদ্যুতিক খুঁটির উচ্চতা বৃদ্ধি, দ্বৈত বিদ্যুৎ উৎস, বিতরণ লাইনের তার আবৃত করা ও স্বল্প দূরত্বে খুঁটি বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তাছাড়া সারা দেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার আধুনিকায়নে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলেও করোনার কারণে তা ধীরগতিতে চলছে।
সূত্র জানায়, দেশের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলায় বিদ্যুতের ২২ লাখ ৮২ হাজার গ্রাহক রয়েছে। আর ৩৫ হাজার কিলোমিটার বিদ্যুতের বিতরণ লাইন রয়েছে। তবে বেশির ভাগ বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনের খুঁটির উচ্চতা ১৩০-১৪০ ফুট। ফলে বন্যা কিংবা জলোচ্ছ¡াসপ্রবণ এলাকায় পানি বাড়লে খুঁটি পানির নিচে তলিয়ে যায়। একই সঙ্গে ওসব এলাকার সঞ্চালন লাইন ও বিতরণ লাইনের দুর্ঘটনা এড়াতে বৈদ্যুতিক তারে কোনো কাভার ব্যবহার করা হয়নি। তাছাড়া একটি খুঁটি থেকে আরেকটি খুঁটির দূরত্ব অনেক বেশি। ফলে বাতাসের তোড়ে বৈদ্যুতিক লাইন অনেক ক্ষেত্রে ছিঁড়ে যায়। তাছাড়া বৈদ্যুতিক লাইনের ওপর গাছের ডাল পড়া, দুর্বল খুঁটির মাধ্যমে সংযোগ টানা ও পুরনো ট্রান্সফরমারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় প্রায়ই গ্রাহকদের বিদ্যুৎহীনতার ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর বিতরণ লাইনের নিয়মিত তদারকি না থাকার কারণেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। তাতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশও দেশের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের দুর্বলতার কথা স্বীকার করেছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে আরইবির সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. আমজাদ হোসেন জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো আবহাওয়া পরিবর্তন। প্রায়ই দক্ষিণাঞ্চলে জলোচ্ছ¡াস, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। বৈদ্যুতিক খুঁটির উচ্চতা কম হওয়ায় এবং বিতরণ লাইনের তারে কাভার না থাকায় অনেক বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। যে কারণে জানমালের ক্ষতি বিবেচনায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখতে হয়।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিদ্যুতের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন জানান, পাওয়ার সেল ‘ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ নামে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ অবকাঠামো উন্নয়নের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চলে যেসব বিতরণ কোম্পানি রয়েছে, সেগুলোর বিদ্যুৎ বিতরণে টেকসই ব্যবস্থা তৈরি করাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। মূলত বিশ্বের দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলো তাদের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় যে ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, এদেশেও তাদের অভিজ্ঞতাটাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।