প্রতারকের খপ্পরে পড়ে এক অসহায় নারী সর্বশান্ত, প্রতিকার পেতে ঘুরছে দ্বারে দ্বারে!

0
149

তালা প্রতিনিধি:
প্রতারকের খপ্পরে পড়ে রাশিদাতুল কোবরা (৪৫) সর্বস্ব খুইয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী মালপত্র নগদ টাকা এক প্রতারকের খপ্পরে পড়ে খুইয়েছেন তিনি। এসব ফিরে পেতে আদালত সহ বিভিন্ন লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর গ্রামের বাসার গাজীর স্ত্রী। বর্তমানে চুকনগরের মালতিয়ায় বসবাস করছেন স্বামী হারা এ অসহায় নারী। আদালতে দাখিলকৃত নথি ও সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, প্রলঙ্কারী ঘূর্ণীঝড় আইলায় বাড়ি ঘর বিলিন হলে স্বামী পরিত্যাক্তা রাশিদাতুল কোবরা ৩ কন্যা সন্তান নিয়ে খুলনা জেলার চুকনগরে চলে আসেন। এসময় খোকন সরদারের একটি ছোট ঘর ভাড়া করে বসবাস শুরু করেন। ৩ সন্তান কে লেখা পড়া শিখিয়ে মানুষ করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেন তিনি। এক পর্যায়ে দর্জির কাজ শিখে চুকনগর বাজারে কাজ করতে থাকেন। এরপর ব্যবসা প্রসারের জন্য এই বাজারের মৃত আলাউদ্দীন মোড়লের পুত্র মোঃ ফরহাদ হোসেন’র কাছ থেকে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা অগ্রীম ও ২৫০০ টাকা মাসিক ভাড়া দেয়ার শর্তে ৩’শ টাকার জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে চুক্তি পত্রের মাধ্যমে ১ টি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে বিসমিল্লাহ্ সুইং মেশিন নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে বড় ও মেঝ মেয়েকে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে লেখা পড়া শিখিয়ে বিবাহ দিয়েছেন। তারা এখন স্বামী সংসার নিয়ে সুখেই আছে।
ছোট মেয়ে মাধ্যমিকে লেখাপড়া করার সময় চোখ পড়ে কেশবপুরের মাগুরখালী গ্রামের মোকবুল গাজীর। তিনি প্রবাসী ছোট ছেলের সাথে এই মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেন। এসময় রাশিদা রাজি না থকলেও মেয়ের সাথে প্রবাসী ছেলের সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন এই প্রতারক মোকবুল গাজী। এক পর্যায়ে মেয়ে ঐ ছেলের সাথে বিয়ের প্রস্তাব দিলে মেয়ের মাতামতের গুরুত্ব দিয়ে রাজী হন রাশিদা। ডুমুরিয়ার গোলনায় বড় ছেলের শ^শুর বাড়ি ওই মেয়েকে রেখে মোবাইলের মাধ্যমে প্রবাসী ছোট ছেলে মোঃ মিজানুর রহমান (২৬)’র সাথে বিয়ে দেন তিনি। এরপর দেশে ফিরে মিজানুর শ^শুর বাড়ি থাকে ও শ^াশুড়ীর ব্যবসা দেখতে শুরু করে। এক পর্যায়ে তার কাছেই ব্যবসা ছেড়ে দেন শ^াশুড়ী রাশিদাতুল কোবরা। মিজানুর শ^াশুড়ীর অর্থ সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার জন্য তাকে গোপন করে দোকান ঘর মালিক’র সাথে যোগসাজসে নিজের নামে ডিট করে নেয়, রাশিদার কাছ থেকে ষ্টাম্প ফেরত নেয়া তো দূরের কথা অগ্রীম টাকাও ফেরত দেয়নি ঘরমালিক প্রতারক ফরহাদ হোসেন। এদিকে রাশিদার সহি করা চেক জামায়ের কাছে থাকার সুযোগে টাকা অংক লিখে রাশিদাকে ফাঁসানোর জন্য সাতক্ষীরা বিচারিক আদালতে ২২ লক্ষ টাকা আত্মসাতের মামলা করে প্রথারক মিজানুর। এর আগে রাশিদার বাড়িতে বসে হিসাব করে মিজানুর নিজের হাতে লিখে রাখেন, শ^াশড়ী তার কাছে ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা পাবে তারিখ দিয়ে স্বাক্ষর ও করেন এই প্রতারক। এখন শোনা যাচ্ছে, মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করছে না বা শ^াশুড়ীর টাকা ও দোকান ঘর ফেরত দিবে না বলে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে টাকা আতœসাতের মামলা করেছেন এই মিজানুর।
চুকনগর বাজরে গিয়ে দেখা যায়, মিজানুরের বড় ভাই রাশিদার সেই দোকানে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। রাশিদার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাশিদা জমি কেনার জন্য ও আমার স্ত্রীকে চাকরী দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময়ে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। কত টাকা নিয়েছেন জিজ্ঞাসা করলে সঠিক জবাব দিতে পারেননি তিনি। চেকে টাকার অংক মিথ্যা ভাবে লিখে আদালতে মিথ্যা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে যান। চুকনগরের খোকন সরদারের স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের মার্কেটে রাশিদা ব্যবসা করতেন। জামাই দেশে ফিরলে তার ব্যবসা ও টাকাপয়সা জামায়ের দ্বায়িত্বে দিয়ে দেন। এখন জামাই সকল কাটা মেরে দিয়েছেন। এমনকি দোকান ঘরের ডিটও জামাই নিজের নামে করে নিয়েছেন। শ^াশুড়ীর স্বাক্ষর করা চেক জামায়ের কাছে থাকার সুযোগে তাতে টাকার অংক লিখে প্রতারণার মাধ্যমে তার নামে নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। রাশিদাতুল কোবরা বলেন, মিথ্যা কথা বলে আমার ও আমার মেয়ের সাথে প্রতারণ করেছেন মিজানুর রহমান। মোবাইলের মাধ্যমে ভিডিও কলে ছোট মেয়ের সাথে তার বিয়ে হয়। বিদেশ থেকে ফিরে সে আমার বাড়িতেই থাকত। আমার ব্যবসা বাণিজ্য ব্যাংকের হিসাব সবই সে দেখত। তাকে বিশ^াস করে আমি ব্লাঙ্ক চেক স্বাক্ষর করে তার কাছে রাখতাম। বিশ^াসের সুযোগে এবং আমার মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবে না বলে চেকে টাকার অংক লিখে খুলনা আদালতে আমার নামে মামলা করেছে। এমনকি দোকান ঘরের ডিট ও ঘর মালিকের যোগসাজসে নিজের নামে করে নিয়েছে এই প্রতারক। আমি দোকান ঘর ফিরে পেতে ও আমার মেয়ের বাঁচাতে দোকান মালিক ও জামাই মিজানুরের বিরুদ্ধে খুলনা আদালতে মামলা দায়ের করেছি যা এখনো তদন্তপর্যায়ে আছে। এখন শোনা যাচ্ছে আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করে ও আমার পাওনা টাকা ফেরত দিবে না বলে তারা দুই ভাই আবারও বিদেশ চলে যাচ্ছে। মেয়ের সংসার জীবন ফিরে পেতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পাওনা টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

খুলনা টাইমস/এমআইআর