পৃথিবীর নিকৃষ্টতম শহর রাজধানী ঢাকা যথোপযুক্ত নির্দেশনা উচ্চ আদালতের

0
321

রাজধানী ঢাকা অনেক বছর ধরেই পৃথিবীর নিকৃষ্টতম শহরগুলোর একটি। শেষ পর্যন্ত দূষণ রোধের যথোপযুক্ত নির্দেশনা এলো উচ্চ আদালত থেকে। আয়েশি কর্তাব্যক্তিদের দায়দায়িত্বহীনতায় ঢাকার বায়ুদূষণ দেড় কোটির বেশি মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর বাতাস দূষিত হওয়ার কারণ কী এবং তা রোধে পরিবেশ অধিদফতর কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ঢাকার বায়ুর মান উন্নয়নে ও জনবল নিয়োগের বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর কী পদক্ষেপ নিয়েছে তার ব্যাখ্যা জানাতে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদফতরের মহাপিরচালককে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে যেসব পরিবহন নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে, সেসব যানবাহন জব্দ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা তখনই এলো, যখন বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা শুধু অন্যতমই নয়, রীতিমতো শীর্ষে অবস্থান করছে। এয়ার ভিজ্যুয়ালের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ২৬ ও ২৭ নভেম্বর, ১৭ ডিসেম্বর এবং ৭ জানুয়ারি বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে ছিল ঢাকা। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই হচ্ছে পরিবেশদূষণ। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী স্বাস্থ্য সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’ ২০১৭ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, পরিবেশদূষণের কারণে ঘটা মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ শীর্ষে।
গত সোমবার বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্টের দেওয়া ৯ দফা নির্দেশনায় সড়ক পরিবহন আইনের বিধান অনুযায়ী পরিবহনের ‘ইকোনমিক লাইফ’ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। যেসব পরিবহনের ইকোনমিক লাইফের মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেসব পরিবহন চলাচলে নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া চলমান টায়ার পোড়ানো ও ব্যাটারি রিসাইকিলিং বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত জানিয়েছে, ঢাকায় যেসব ট্রাক বালি, ময়লা ও বর্জ্য পরিবহন করবে, সেগুলো যাতে ঢাকা থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্মাণ এলাকায় বালি, সিমেন্ট, মাটি, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করাসহ সিটি করপোরেশনের যেসব এলাকায় পানি ছিটানো হয়নি সেসব ধুলোবালিপ্রবণ এলাকায় নিয়মিত পানি ছিটাতে বলা হয়েছে। এছাড়া অইন ও দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী উন্নয়ন ও নির্মাণকাজ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
দোকান বা মার্কেটে দিনের ময়লা-আবর্জনা বিন বা ছালায় জমা রেখে তা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত জায়গায় ফেলার বিষয়টি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জানা যায়, দেশের ইটভাটাগুলোর তিনটির একটি অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব ইটভাটা মারাত্মক বায়ুদূষণের বড় উৎস। ঢাকার পাশের চার জেলায় যেসব অবৈধ ইটভাটা এখনো বন্ধ করা হয়নি, সেগুলো বন্ধ করার আদেশ বাস্তবায়ন করে পরিবেশ অধিদফতরকে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদনও দিতে হবে। বায়ুদূষণ রোধে হাই কোর্টের নির্দেশনা সময়োপযোগী ও অভিনন্দনযোগ্য। আমরা আশা করব এ নির্দেশনা পালনে সংশ্লিষ্ট সবাই যাতে বাধ্য হয়, তা নিশ্চিত করতে শুধু ঢাবার দুই সিটি কর্পোরেশন বা পরিবেশ অধিদফতর নয়, পুরো প্রশাসনের চোখ ও কান খোলা রাখতে হবে।