পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি সমস্যা গান্ধীবাদ দিয়ে সমাধান সম্ভব: আবুল মকসুদ

0
172

টাইমস ডেস্ক:
বর্তমান পৃথিবীর যত সমস্যা রয়েছে, তার অর্ধেকের বেশি সমস্যা গান্ধীবাদ দিয়ে সমাধান সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ। গতকাল শনিবার আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত দি হাঙ্গার প্রজেক্টের একটি গোলটেবিল বৈঠকে তিনি একথা বলান। আবুল মকসুদ বলেন, রাজনীতিতে অহিংস নীতি থাকলে সমাজেও অহিসং নীতি চলে আসবে। সমাজ বা রাজনীতি, সব জায়গাতেই এটি প্রয়োগযোগ্য। বাংলাদেশে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১, সবসময় আমরা চেয়েছি একটি অহিংস আন্দোলনের মধ্যদিয়ে যেতে। কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষ তা মানেননি। তারা সহিংস আন্দোলেনর দিকে গিয়েছেন এবং পরাজিত হয়েছেন। ফলে তারা একদিকে যেমন বিশ্বের কাছে মর্যাদা হারিয়েছেন, তেমনি হেরেছেন আমাদের কাছেও। তিন বলেন, মিয়ানমার থেকে যেসব রোহিঙ্গারা সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসেছে,তাদের আমরা অহিংস ভাবে স্থান দিয়ে সমগ্র পৃথিবীতে সমাদৃত হয়েছি। বিশ্বের প্রায় সকল দেশ আমাদের পাশে আছে, মিয়ানামারের পাশে কেউ নেই। এ ছাড়া বর্ণবাদ নিয়ে বিশ্বে যে বিবাদ হচ্ছে, সেটিও অহিংস আন্দোলনেরই একটি অংশ এবং এর সুফল আসছে। বর্তমান পৃথিবিতে যত সমস্যা রয়েছে, তার সবগুলো হয়তো সম্ভব নয়, তবে অর্ধেকের বেশি সমস্যা গান্ধীবাদ দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। কেননা অহিংসার জয় সবসময়। অনলাইন জুম বৈঠকে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গণনীতি বিশ্লেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিচারপতি মো: আবদুল মতিন, ব্যারিস্টার জোর্তিরময় বড়ুয়া, রাষ্ট্রদূত হূমায়ুন কবিরসহ নাগরিক সমাজ ও তৃণমূলে ক্রিয়াশীল সর্বদলীয় পিস ফ্যাসিলিটিটর গ্রুপের প্রতিনিধিরা। আয়োজন সঞ্চালনা করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার। বৈঠকে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, একসাথে ভাত খাওয়া, একসাথে ছবি তোলার পরিবর্তে অহিংসতাকে জাতীয়ভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন। সাধারণভাবে যদি মৌলিক সুরক্ষার বিষয়টি না থাকে, তবে অহিংস নীতি কষ্টকর। এই করোনার সময় বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সহিংসতা বেড়েছে। ব্যক্তি এবং পরিবার পর্যায়ে, বিশেষ করে নারীদের প্রতি সহিংসতা বেড়ে গেছে অনেক। এটা এখন সবথেকে দ্রুত থামানো উচিত। এরপর কুষ্ঠিগত করার সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যারা দুর্বল, তাদের প্রতি সহিংসতা বেড়েছে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ওপর। তিনি বলেন, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে কিন্তু যুদ্ধও থেমে নেই। বিশ্বব্যাপী সহিংসতা বেড়েছে। দেশের মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ফলেও এখন সহিংসতা। আর সবথেকে বড় ব্যাপার হলো দারিদ্রতা। এটি সহিংসতার সবথেকে নিকৃষ্টতম রূপ। যেখানে দারিদ্রতা আছে, বৈষম্য আছে, সেখানে সহিংসতা থাকবেই। তবে সবকিছুর উর্ধ্বে আমাদের মৌলিক পরিচয়টা হওয়া উচিত মানুষ। সেই পরিচয়টা রক্ষা করা আমাদের রাষ্ট্রের এবং সমাজের দায়িত্ব। রাষ্ট্রদূত হূমায়ুন কবির বলেন, সমন্নিতভাবে যদি সমাজের মানুষকে একসাথে আনা যায়, তবে সহিংসতার বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব। সমাজ ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, ততই সমাজে বৈচিত্রকে গ্রহণ করার ও প্রতিরোধের বিষয় উঠে আসছে। ফলে অনেকেই শান্তির বাইরে গিয়ে শক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান দেখাতে চায়। তাই সামাজিক বৈচিত্রের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে একটা শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন করা সম্ভব। এরপর আবার আমরা মৌলিক পরিচয়ের দিকে যেতে চায়। সারা পৃথিবীতেই এটা হচ্ছে। আমাদের তাই পরিচিতি স্থিতিশীল রাখতে হবে। এছাড়া ভিন্নমতের মানুষগুলোর সিদ্ধান্তগুলোকেও গ্রহণ করে শিখতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আমাদের হতে হবে সচেষ্ট। কেননা এটার যেমন ইতিবাচক প্রভাব আছে, তেমনি এর মাধ্যমে অনেকে হিংসাও ছড়ায়। তাই এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আমাদের এগোতে হবে। তবে শান্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে সরকারের পাশাপাশি সামাজিক ভূমিকাকেও একত্রে কাজ করতে হবে বলেও এ সময় জানান তিনি। অন্যান্য বক্তারা বলেন, অহিংস আন্দোলনে সফলতার হার ৫৩ ভাগ, অপরপক্ষে সহিংস আন্দোলে এই হার ২৩ ভাগ। এ ছাড়া অহিংস আন্দোলনে ব্যর্থতার হার ২০ ভাগ, যেখানে সহিংস আন্দোলনে ব্যর্থতার হার ৬০ ভাগ। ১৯৪৭ সাল থেকে বাংলার ভুখ- বিভিন্ন সময়ে অহিংস আন্দোলনে সফল হয়েছে। বিশেষ করে ৭০’র নির্বাচনের পর থেকে ৭১’র যুদ্ধের আগ পর্যন্ত অহিংস আন্দোলনের সময়টুকু এর অন্যতম উদাহরণ। আয়োজন থেকে সহিংস আন্দোলনের পরিবর্তে পুরো পৃথিবীতে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে অহিংস আন্দোলনকে সামনে আনার আহ্বান জানানো হয়।